× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

একজনের বিরুদ্ধে ৪৯ মামলা, সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার
১৫ জুন ২০২১, মঙ্গলবার

এখন থেকে আদালত এবং থানায় মামলা করলে এফআইআর, পিটিশনে বাদী বা অভিযোগকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর উল্লেখ করতে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৪৯টি মামলার বিষয়ে অনুসন্ধান করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী দুইমাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। গতকাল ভুক্তভোগী একরামুল আহসান কাঞ্চনের দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এছাড়া, রিট আবেদনকারীর বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভিন্ন মামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, মিথ্যা মামলার দায়েরের মাধ্যমে রিট আবেদনকারীকে যারা হয়রানি করছে- তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।  স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, র‌্যাবের মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) উপ-মহাপরিদর্শকসহ ৪০ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এমদাদুল হক কাঞ্চন। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মানবজমিরকে বলেন, এখন থেকে আদালত ও থানায় মামলা করলে এফআইআর, পিটিশনে বাদী বা অভিযোগকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর উল্লেখ করতে হবে বলে আদালত আদেশ দিয়েছেন। অপরদিকে কাঞ্চনের আইনজীবী এমাদুল হক বশির মানবজমিনকে বলেন, আদালতকে জানিয়েছি ভুক্তভোগী একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে একটি মামলাবাজ সিন্ডিকেট চক্র এখন পর্যন্ত ৪৯টি মামলা করেছে।
একেক সময় একেক জেলায় মামলা দায়ের করা হয়। দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় ‘৪৬ মামলায় জেরবার কাঞ্চন’ শীর্ষক প্রতিবেদনসহ আরো কয়েকটি পত্রিকার প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনা হয়। এরপর শুনানি শেষে আদালত কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৪৯ মামলা দুইমাসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ  দেন।
ঢাকার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ওই ৪৯টি মামলা হয়। গত বছর অক্টোবরে নারায়ণগঞ্জের যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি কারখানার মালিক পরিচয় দিয়ে কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ৪৯তম মামলাটি করা হয়। কিন্তু সেই মামলার বাদীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আইনজীবী এমাদুল হক বসির বলেন, এ বিবেচনায় একরামুল আহসান কাঞ্চন ৩৬ মামলায় খালাস পেয়েছেন। বাকি ১৩ মামলায় তিনি জামিনে আছেন। এরপর গত ৮ই জুন হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ প্রায় অর্ধশত মামলায় ৮ বছর জেল খাটা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৪৯ মামলার বাদী খুঁজতে ও এসব মামলার বিষয়ে তদন্ত করতে নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করেন। নথিতে ২০১৯ সালের ২৩শে নভেম্বর দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় ‘৪৬ মামলায় জেরবার কাঞ্চন’ শীষক প্রতিবেদনসহ আরো কয়েকটি পত্রিকার প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়।
 যখন মামলা জালে আটকা পড়ে কাঞ্চন
মানবজমিনে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে কাঞ্চনের স্ত্রী তামান্না আকরাম বলেন, ২০০২ সালে কাঞ্চনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এর পর তাদের সুখের সংসারে আসে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। দেশের খুব কম থানা আছে, যেখানে তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। যেখানে মামলার শুনানি, সেখানকার কারাগারেই হয়েছে তার আবাসস্থল। কাঞ্চনের স্বজনদের দাবি, পুলিশ নয়, কে কতোগুলো মামলার আসামি হবে, কে কতো বছর জেল খাটবে, সেই তালিকা করে মামলাবাজ সিন্ডিকেট। স্বজনরা আরো জানান, এ রকম সাজানো মামলার আসামি আছে বেশ কয়েকজন। ঢাকার সাইফুল্লার বিরুদ্ধে ৬০টি এবং জিল্লুর রহমান, হাফিজুর রহমান ও আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ৪৮টি মামলা করেছে এই চক্র। কাঞ্চনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সাজানো মামলা হয়েছে ৪৬টি। অথচ পুলিশের ক্রিমিনাল রেকর্ডে কাঞ্চনের নাম নেই।
২০১০ সালে, গরুর চামড়া ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মো. একরামুল হক কাঞ্চন এবং মো. বাবুকে আসামি করে পিটিশন মামলা করা হয়। মামলা নম্বর ২৯৯/২০১০। তবে আদালত ঘটনার সত্যতা না পেয়ে মামলাটি খারিজ করেছেন বলে জানান স্ত্রী তামান্না আকরাম। নথি থেকে জানা যায়, এই মামলায় ঘটনার স্থান দেখানো হয়, শান্তিবাগ নূর মসজিদের সামনের মূল রাস্তা। তখন কোরবানির ঈদ। দুপুর ১২.৩০  মিনিট। শাকেরুল কবির শান্তিবাগ মূল মসজিদের সামনে চামড়া ক্রয়ে ব্যস্ত। এমন সময় তার হাতে থাকা একটি গরুর চামড়া যার মূল্য আনুমানিক ২৫০০ (২ হাজার পাঁচশ’ টাকা), আসামি কাঞ্চন ও বাবু ওই চামড়া ছিনিয়ে নেয়ার জন্য বাদীর পথরোধ করেন। বাদী তাদের সরে যাওয়ার জন্য বললে আসামি একরামুল হক কাঞ্চন বলেন, চামড়া না দিলে তোকে জবাই করবো। এরপর ২নং আসামি বাবু বাদীর দিকে ছুরি তাক করে বলেন, চামড়া ছেড়ে দে, নইলে তোরে কোপ দিলাম। তখন শাকেরুল ডাক চিৎকার করলে বাবুর হাতে থাকা ১৪/১৫ ইঞ্চি লম্বা ছুরি দিয়ে তাকে আঘাত করার চেষ্টা করে। এ সময় তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তখন দুই আসামিসহ আরো অজ্ঞাতনামা ৪ সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক তার উপর আক্রমণ করে বাদীর হাতে থাকা চামড়া ছিনিয়ে নেয় এবং বাদীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।
এরপর, ২০১২ সালের ১৩ই মে, আবুল বাসার নামে এই চক্রের এক সদস্য পল্লবী থানায় তিনজনকে আসামি করে এসিড নিক্ষেপের মামলা করেন। অবশেষে এই মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তিনজনকে খালাস দেন। আইনজীবী এডভোকেট শফিক বলেন, ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় আদালত আসামিদের এই মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন।
কাঞ্চনের আরেক আইনজীবী এডভোকেট আবু হাসনাত ভূঁইয়া বলেন, আমি কাঞ্চনের বেশ কয়েকটি মামলার জামিন করিয়েছি। অনেক মামলার শুনানিও করেছি। এমনও হয়েছে, এক মামলা জামিন করার পর তার বিরুদ্ধে আরেক মামলা হয়। ফলে তাকে কারাগার থেকে বের করা সম্ভব হচ্ছিল না। একপর্যায়ে বুঝতে পারি তিনি সাজানো মামলার ফাঁদে পড়েছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর