× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘ওরা ট্যাক্স দিবে, ভোট দিবে, ভ্যাট দিবে, কিন্তু আওয়াজ করতে পারবে না’

অনলাইন

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে
(২ বছর আগে) জুন ১৫, ২০২১, মঙ্গলবার, ২:৪৪ অপরাহ্ন

‘ওরা ট্যাক্স দিবে, ভোট দিবে, ভ্যাট দিবে, কিন্তু আওয়াজ করতে পারবে না। আমরা কোনো কিছু গভীরভাবে অনুভব করতে ভুলে গেছি। বোধহীন হয়ে গেছি। সরকার তার নিজের সুবিধার জন্য সব কিছু করে রেখেছে। রাখেনি শুধু আমাদের সুবিধার্থে কোন কিছু। গাজীপুর থেকে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বের হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সড়কে যানজটের ভোগান্তিতে পড়ে এমন মন্তব্যের চিত্রই তুলে ধরেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক ( সুজন) গাজীপুর এর সদস্য সচিব, জেলা শিল্পকলা একাডেমির আজীবন সদস্য বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী ইফতেখার শিশির। ওই মহাসড়কে ভোগান্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশিরের স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘আজ ১৫ই জুন ২০২১। ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
গাড়ি গ্যারেজ থেকে বের হলো ৫.৪১ মিনিটে। মহাসড়ক আমার বাসা থেকে মাত্র ৬০ ফিট দূরে। রাতে ঘুমানোর আগে Google ম্যাপে দেখেছিলাম ঢাকা যাওয়ার পুরো রাস্তাটি বিমান বন্দর পর্যন্ত ব্লক।

যখন এই পোস্ট লিখছি তখন সময় সকাল ৮.০৩ মিনিট। দুই ঘন্টা হয়েছে গাড়িতে স্থবির হয়ে বসে আছি। বৃষ্টি হচ্ছে। আমি এখন বড়বাড়ি। মানে মাত্র ১ কিলোমিটার হবে এসেছি। মাত্র দুই ঘন্টায়। সকালে নাস্তা করা হয়নি। নিথর গাড়িগুলো নিঃশব্দে অপেক্ষা করছে। আমিও বসে আছি কখন দুই এক ফিট সামনে এগুতো পারবো . . .শত শত গাড়ি আমার চারপাশে। থেমে আছে সব। গাড়িগুলোতে যারা বসে আছেন তারা সবাই কোন না কোন কাজে বের হয়েছেন। তাদের মধ্যে আমিও একজন। আমার খুব কাছের একজন মারা গিয়েছেন গতকাল রাতে। সকাল ১০টায় তার জানাজা। মনে হয় না আমি বিকেলের আগে পৌছাঁতে পারবো। মানুষটাকে শেষবারের মতো দেখবো সে সুযোগ আর হবেনা  . . .আমাদের মধ্যে আজব এক যান্ত্রিকতা ভর করেছে। এই যান্ত্রিকতার কল্যাণেই আমরা কোন কিছু গভীরভাবে অনুভব করতে ভুলে গেছি। বোধহীন হয়ে গেছি। উন্নয়নের নামে মহাসড়কে হরিলুট চলছে। যা খুশি তাই চলছে। যে উন্নয়ন জনতার জন্য সে উন্নয়ন জনতার জীবন দুর্বিসহ করে দিচ্ছে প্রতিদিন। একটা বিকল্প পথ খোলা রাখা হয়নি চলাচলের জন্য। একটা বিকল্প পথ তৈরী হয়নি। যা খুশি তাই হবে এখানে। জনতা নামের ---  অসুবিধা হলে কার কি এসে যায় ! এই --- দের কাজ হলো ওরা লাথি খাবে। উষ্ঠা খাবে। কিন্তু নড়বে চড়বে না। ওরা ট্যাক্স দিবে ভোট দিবে ভ্যাট দিবে কিন্তু আওয়াজ করতে পারবে না।

৮.১৭ মিনিট। গাড়ি নড়ছে না। একই স্থানে থেমে আছি। প্রচন্ড খিদে পাচ্ছে। এসির মধ্যে ঘামছি। ক্রোধে। ক্ষোভে। ইচ্ছে করছে গালি দিতে। বিশ্রি ভাষায় কিছু লিখতে। আইসিটি আইনে মামলা হয়ে যাবে। সরকার তার নিজের সুবিধার জন্য সব কিছু করে রেখেছে। রাখেনি শুধু আমাদের সুবিধার্থে কোন কিছু।
কিছু অনুভূতি প্রকাশ করেছি আজ। বিস্তারিত লিখবো পর্ব আকারে। লিখে কোন লাভ হবে না জানি। গরু-ছাগলদের জন্য রচনা লিখে লাভ নেই। তবুও লিখবো।'
তার এই স্ট্যাটাসটিতে ভুক্তভোগী, রাজনীতিক, সমাজকর্মী, আইনজীবীসহ আরো অনেকের মন্তব্য উঠে এসেছে এই মহাসড়কের দুঃসহ যন্ত্রণার চিত্র।

গাজীপুর সিটির যুব মহিলা লীগের আহবায়ক রুহুল নেছা রুনা লিখেছেন, ‘'আজ আমিও ৫:৪৪ ঢাকার পথে বের হয়েছিলাম, এখন ৯টা বাজে বড়বাড়ি থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে বাসায় ফিরলাম। হয়তো এইভাবেই আরো কিছু বছর আমাদের পার করতে হবে।' আওয়ামী লীগ নেতা আকরাম হোসেন সরকার লিখেছেন, ‘মা কে নিয়ে খিলক্ষেত ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো, মনে হয় যাওয়া সম্ভব না।'

গাজীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম লিখেছেন, 'আমিও ঢাকা যেতে চেয়েছিলাম। টঙ্গী পর্যন্ত হেঁটেই পারি দিব বলে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে দমিত হলাম।
ডাক্তার আহসান কবির লিখেছেন, ‘আজব এক দেশ যেখানে সময় ও জীবন মূল্যহীন, কাকে বলবো? লিখতে লিখতে যদি কুম্ভকর্ণ এর ঘুম ভাঙ্গে।’
শরিফ সরকার নামে একজন লিখেছেন, ‘ছোটবেলা পড়তাম চিনের দুঃখ হোহাংহো নদী। আমাদের গাজীপুরবাসীর দুঃখ বিআরটি প্রজেক্ট।’

স্থানীয় খালেদা রশিদ এডুকেয়ার স্কুলের সুপারেন্টেন কাজী মোখলেসুর রহমান লিখেছেন, ‘প্রতিটা সভ্য দেশে রাস্তার কাজ শুরু করার আগে জনগণের যাতে কোন প্রকার ভোগান্তি না হয়, সেই দিকটা লক্ষ্য রেখে নির্বিঘ্ন চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা করে তারপর উন্নয়নের কাজে হাত দেয়া হয়। আর আমাদের দেশে উন্নয়ন প্রদর্শনের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে -- সদৃশ জনগণকে দুর্দশাগ্রস্ত করে তোলা হয়। সত্যি সেলুকাস! কী বিচিত্র এ দেশ!’

আমির হোসেন নামের একজন লিখেছেন, ‘..কে শোনে কার কথা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষতো পিঠে বেঁধেছি কুলো, কানে দিয়েছি তুলো নীতিতে অটল। নইলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রধান সড়ক এভাবে বিকল্প ব্যবস্থা না করে উন্নয়নের কথা বলে বিলম্বিত করতে পারতো না। অথচ প্রতিদিন কী অসহনীয় যানজট আর জলজটের মধ্যে পড়ে আমাদের প্রাণবায়ু বের হবার যোগার হয়েছে।'

মিয়া জামান নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘যেখানে জবাবদিহিতা থাকে না সেখানে এই অবস্থাই হবে। মনে হয় দেশ হাওয়ার উপর ভাসছে, কোন মা-বাবা নাই কার কাছে বলব কে দেখবে এ সব। কষ্ট বুঝার মত কেউ কি আছে ভাই?’

রহিমা তাবাসসুম নামে একজন লিখেছেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাদের গাজীপুরের জনগণকে মানুষের কাতারে হিসাব করে না ! যতদিন না পর্যন্ত গাজীপুরবাসীরা বীর বাঙালি হিসেবে তাদের পরিচয় দিবে, আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে, ততদিন পর্যন্ত এই অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর