জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার জন্য বেশ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে টেন্ডার ড্রপে বাধা দেয়া হয়েছে। গত সোমবার টেন্ডার জমা দেয়ার শেষ দিন সকাল থেকেই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চাঁপাই নবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের মূল ফটক তালাবদ্ধ রাখা হয়। ফলে রংপুরের মেসার্স খাইরুল কবির রানা, চট্টগ্রামের মেসার্স এইচএসএস কনস্ট্রাকশন, ঢাকার আরএফএল কনস্ট্রাকশন ও স্টার লাইট কনস্ট্রাকশনসহ বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার জমা দিতে পারেনি। টেন্ডার ড্রপ করতে না পারায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। এ ছাড়াও ই-টেন্ডারিং পদ্ধতি অনুসরণ না করে পুরনো পদ্ধতিতে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হয়েছে। জিওবি ফান্ডের অর্থায়নে পরিচালিত ছোটখাটো কাজও ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারে করা হচ্ছে। অথচ পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে নানা রকম নয়ছয় করার সুযোগ থাকায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পুরনো পদ্ধতি অনুসরণ করেছে।
চট্টগ্রামের মেসার্স এইচএসএস কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন- টেন্ডার ড্রপিংয়ে অনিয়ম ও সন্ত্রাসী দ্বারা বাধা প্রদান করা হয়েছে। মেসার্স এইচএসএস কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদ জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ৪ঠা এপ্রিল পাইপলাইন, পানি সংযোগের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। আমি অনলাইনের মাধ্যমে শিডিউল ক্রয় করি। গত সোমবার আমি টেন্ডার জমা দিতে গেলে কিছু সন্ত্রাসী আমার শিডিউল কেড়ে নেয় এবং আমাকে গালিগালাজ ও হুমকি দেয়। তারা নিজেরাই কাজ নেয়ার জন্য কয়েকজন মিলে টেন্ডার ড্রপ করে এবং তাদের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে ভুয়া দর প্রস্তাব করা হয়েছে। কাজ পাওয়ার পর ওই কার্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তারা দর বাড়িয়ে দেবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিল গেটের ভেতরে। তিনি আরও বলেন, আমাকে গেট থেকে তাড়িয়ে দেয়ার সময় তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এতে মনে হচ্ছে অফিসের লোকজনও এর সঙ্গে জড়িত। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য টেন্ডারটি গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এই দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে টেন্ডারটি পুনরায় আহ্বানের দাবি জানান তিনি। ঠিকাদার খাইরুল কবির রানা ও আরএফএল কনস্ট্রাকশনের প্রতিনিধি সন্তোষ টেন্ডার ড্রপ করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, চাঁপাই নবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার সরকার জানান, কার্যালয়ের বাইরে তো নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে টেন্ডার ড্রপিংয়ে আসা আরএফএল কনস্ট্রাকশনের প্রতিনিধি বাইরে বাধার মুখে পড়েন। তাকে পরে ডাকা হয়েছিল কিন্তু আসেননি। আমাদের প্রতি তার কোনো অভিযোগ নেই। মাল্টিড্রপিং সিস্টেম না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইডিবি ও জিওবি ফান্ডের অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তাদের নির্দেশনায় মাল্টিড্রপিং সিস্টেম না থাকায় পুরনো পদ্ধতিতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ঠা এপ্রিল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে শিবগঞ্জ পৌরসভায় ২৪ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার পাইপলাইন, ২ হাজার ৪৬১টি বাড়িতে পানি সংযোগের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে ৪ দফা সময় বাড়ানো হয়। শেষ দফায় টেন্ডার ড্রপিংয়ের দিন ছিল সোমবার। একইদিন দুপুর ১২টায় টেন্ডার বক্স খোলা হয়।