যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তারা জেনেভায় মুখোমুখি বসলেন। অনেক কথা হলো। তিন ঘন্টার আলোচনা। তারা আলোচনার প্রশংসা করলেন। কিন্তু মতবিরোধ কাটল না। রয়ে গেল অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ। পুতিনকে উপহার তুলে দিলেন বাইডেন।
কিন্তু বাইডেনকে পুতিন কোন উপহার দিয়েছেন বলে শোনা যায়নি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, ২০১৮ সালের পর এটাই রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে প্রথম বৈঠক। দুই নেতা এ বৈঠকের প্রশংসা করলেও অগ্রগতি হয়েছে কম। জো বাইডেন বলেছেন, ভিন্ন মতের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে বৈঠকে। তিনি বলেছেন, রাশিয়া নতুন করে একটি শীতল যুদ্ধ চায় না। অন্যদিকে পুতিন বলেছেন, জো বাইডেন একজন অভিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ক। এ ছাড়া দুই নেতাই অনেকটা একই সুরে কথা বলেছেন। বিশ্বের দুই পরাশক্তির এই ঘোর বিরোধী দুই নেতার বৈঠকের দিকে দৃষ্টি ছিল বিশ্ববাসীর। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কম সময় নিয়েছেন তারা বৈঠকে। তাও এর বিস্তার তিন ঘন্টার মতো। বাইডেন বলেছেন, আলোচনা করে অধিক সময় নষ্টা করার প্রয়োজন নেই। এখন রাশিয়র সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার প্রকৃত উদ্দেশ্য রয়েছে তার। বৈঠকে বিমানচালকদের একটি সানগ্লাস পুতিনকে উপহার দিয়েছেন বাইডেন। আর দিয়েছেন একটি মোষের ক্রিস্টাল ভাস্কর্য্য। বাইডেনকে পুতিন কোনো উপহার দিয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি। ২০১৮ সালে ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে একটি ফুটবল উপহার দিয়েছিলেন রাশিয়ান নেতা পুতিন।
এবারের আলোচনায় উভয় পক্ষ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা শুরু করতে একমত হয়েছেন। এছাড়া ২০২৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে অভিযোগ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য উভয় দেশ তাদের দূতদেরকে মার্চে পরামর্শের জন্য প্রত্যাহার করে। ওই রাষ্ট্রদূতদেরকে আবার ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। তবে এর বাইরে অন্য ইস্যুগুলোতে খুব কমই ঐকমতে আসতে পেরেছেন এই দুই নেতা। এর মধ্যে রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা, ইউক্রেন ইস্যু এবং রাশিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি ইস্যু। বর্তমানে নাভালনিকে আড়াই বছরের জেল দেয়া হয়েছে। তিনি জেলে অবস্থান করছেন। বাইডেন বলেছেন, নাভালনি যদি জেলে মারা যান তাহলে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে রাশিয়াকে।
দুই নেতার মধ্যে এই আলোচনা এমন এক সময়ে হলো যখন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক কয়েক বছরের মধ্যে একেবারে তলানিতে এসে পৌঁছেছে। বন্দিবিনিময়ের সম্ভাব্য একটি চুক্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন পুতিন। বলেছেন, এ বিষয়ে সমঝোতা হতে পারে। এই চুক্তি হলে পুতিনের কড়া সমালোচক, যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন তাদেরকে তিনি দেশে ফেরত আনতে পারবেন। সাইবার হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ এড়িয়ে গেছেন পুতিন। পক্ষান্তরে তিনি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়াতে যেসব সাইবার হামলা চালানো হয়, তার বেশির ভাগই ঘটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
পুতিনকে বাইডেন বলেছেন, পানি, বিদ্যুতের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে হ্যাকিং বা অন্য হামলা সীমিত পর্যায়ে রাখা উচিত। বাইডেন বলেন, আমি তার দিকে তাকালাম। বললা, যদি আপনার তেলক্ষেত্রের পাইপলাইনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়, আপনার অনুভূতি কেমন হবে? জবাবে তিনি বললেন, অনেক বড় ক্ষতি হবে। বাইডেন বলেন, যদি রাশিয়া মৌলিক আদর্শ লঙ্ঘন করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশোধ নেবে। এ সময় মানবাধিকার এবং বিক্ষোভের অধিকার নিয়ে দুই নেতা তাদের মতবিরোধ জোরালোভাবে তুলে ধরেন। নাভালনি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগকে উড়িয়ে দেন পুতিন। উল্লেখ্য, নাভালনি সম্প্রতি ২৪ দিনের অনশন শুরু করেছেন। পুতিন বলেছেন, আইন অবজ্ঞা করেছেন নাভালনি। জার্মানিতে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার পর তিনি যখন রাশিয়া ফিরলেন, তখন তিনি জানতেন তার জেল হতে পারে।
ব্লাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকে ‘উদ্ভট’ বলে আখ্যায়িত করেছেন পুতিন। তার এ বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়েছেন বাইডেন। তিনি বলেছেন, সব সময় মানবাধিকার সামনে থাকবে।