২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তে সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে আবার। ভারতে সরকারি হিসাবে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে যায়। পাকিস্তানে এ সংখ্যা ৬ হাজার এবং বাংলাদেশে ৭৫০০। এতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বড় একটি চাপ সৃষ্টি হয়। ভারতের এই সংক্রমণ দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে সীমান্ত এলাকায়। এর বিস্তার ঘটে নেপালে। সেখানে হাসপাতালগুলোতে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
২০২১ সালের এই ভয়াবহ সংক্রমণ আঞ্চলিক সমন্বয়, প্রমাণনির্ভর কৌশলকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
যদি আমরা করোনা ভাইরাসের গতির সঙ্গে চলতে চাই, তাহলে নতুন সব সমাধান এবং স্বল্পব্যয়ে উদ্ভাবনী বিষয়ে অনেক অংশীদারকে নিয়ে একটি আঞ্চলিক জোট গঠন করা আবশ্যক। যা, কাজ করবে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যে ঐতিহাসিক বিরোধ আছে, তার প্রেক্ষিতে কি এটা করা সম্ভব? এখন আমরা যে ইতিবাচক বিষয়ে লিখছি, একটি নতুন কনসোর্টিয়াতের কথা বলছি, তার মূল সদস্য হতে পারে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং বাংলাদেশ। এরা মিলে কোভিড-প্রতিরোধী কৌশল তৈরি করতে পারে। রাজনৈতিক ভেদাভেদ সত্ত্বেও কিভাবে পারস্পরিক সুবিধার জন্য প্রতিবেশীরা একত্রিত হয়ে কাজ করে তার একটি উদাহরণ এই উদীয়মান কনসোর্টিয়াম।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশই মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে লড়াই করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বাস, অগ্রাধিকার, রীতি এবং আচরণের পরিবর্তন একই রকম। এ বিষয়টি আমরা স্বীকার করি বা না করি। এই যে জনগণের মধ্যে অভিন্নতা এটাকে ব্যবহার করে এক স্থানে আচরণের সফল পরিবর্তন এই উপমহাদেশে অন্যদেশে প্রয়োজ করা যায়। এই অভিজ্ঞতা আমরা অর্জন করেছি গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষুদ্রঋণ মডেল থেকে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় একেবারে শিকড় পর্যায় থেকে শুরু হয়ে দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে। ভারতের ডিজিটালাইস সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক আধার কার্ড, জনধন একাউন্ট এ অন্যলের অন্য দেশগুলোর জন্য একটি মডেল হতে পারে। ইভ্যাক্স এবং সিটিজেন ফিডব্যাক মডেলের মতো পাকিস্তানে ই-গভর্ননেন্স কর্মসুচিকে কপি করা হয়েছে এবং এটা একটি শক্তিশালী মডেল হয়ে উঠেছে, যা এ অঞ্চলে বা বৈশ্বিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়।
কোভিড-১৯ সংকট এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় এ ধরণের স¤পর্কোন্নয়ন রাজনীতি ও অবিশ্বাসের কারণে আটকে যায়। আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করে এমন সব সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে। মহামারীর সময় আমরা যে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছি তাকে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াবাসীর মঙ্গলের জন্য আরো বহুদিন টিকিয়ে রাখতে হবে।