সিরাজগঞ্জের চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশের বৃহত্তম নওগাঁ হাটের তিন বছরের ব্যবধানে ইজারা মূল্য বেড়েছে দুইগুণ। অর্থাৎ এক কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে তিন কোটি ৫২ লাখ টাকা। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে হু-হু করে বাড়িয়েছে হাটের মূল্য। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। খাজনা আদায়ের সরকারি বিধি- বিধান আগের মতো থাকলেও হাটের ইজারাদার আকবার আলী ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত খাজনা আদায় করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। শুধু তাই নয়, হাটের প্রান্ত জায়গার বাইরের যেসব দোকানি ও হাট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা দীর্ঘদিন ধরে নিজস্ব জায়গায় কাঠ, স্টিলসহ নানা পণ্যের ব্যবসা করে আসছেন তাদের থেকেও জোরপূর্বক খাজনা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই ইজারাদারের বিরুদ্ধে। এসব অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে এ কর্তা ব্যক্তি জানিয়েছেন, রোববারের মধ্যে ইজারাদারকে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে জসমত উদ্দীন, ছাইফুল ইসলাম, সেরাজুল ইসলাম, এনছাব আলী, মোবারক হোসেন ও আছাদুল হকসহ অর্ধ শতাধিকেরও অধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, তারা হাটের জায়গার বাইরে মালিকানাধীন নওগাঁ মৌজার ৯৫৮-৯৬৫ সাবেক দাগের ভূমিতে বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন।
তাদের সবার বাড়ির সামনে নিজেদের জায়গাতেই বিভিন্ন পণ্যের দোকান রয়েছে। অথচ সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে সেসব দোকানের মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের খাজনা আদায় করা হচ্ছে।
সরজমিন গত বৃহস্পতিবার হাটে গিয়ে দেখা গেছে, ইজারাদারের লোকজন হাটের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে টেবিল বসিয়ে খাজনা আদায় করছেন। অভিযোগকারী দোকানিদের ব্যক্তিমালিকানা জায়গাতেও টেবিল বসিয়ে কয়েকজন খাজনা আদায় করছেন। এনিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কিছুটা বাকবিতণ্ডা দেখা যায়। তারা খাজনা আদায়ের রশিদে টাকার অঙ্ক ফাঁকা রেখে শুধুমাত্র ক্রেতা-বিক্রেতার নাম, ঠিকানা ও মোট মূল্য লিখে দিচ্ছেন। কোথাও খাজনা আদায়ের তালিকা সাঁটানো হয়নি।
উপজেলা হাটবাজার ইজারা বাস্তবায়ন কমিটি সূত্র মোতাবেক সরকার নির্ধারিত খাজনা গরু ও মহিষের ক্ষেত্রে ২৫০ টাকা, ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। হাটের পেরিফেরির বাইরে থেকে কোনো খাজনা আদায় করা যাবে না।
নওগাঁ হাটের ইজারাদার আকবার আলী বলেছেন, অনেক বেশি পরিমাণে টাকা দিয়ে হাট ইজারা নিয়েছেন। তাকে প্রতি হাটে প্রায় ৭ লাখ করে খাজনা আদায় করতেই হবে। নয়তো নিশ্চিত লোকসান গুনতে হবে। যে কারণে খাজনা আদায়ের ক্ষেত্রে কিছুটা অনিয়ম করতে হচ্ছে। তাতে কিছুই করার নেই! এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা হাটবাজার ইজারা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মো. মেজবাউল করিম এ প্রতিবেদককে বলেন, সরকারি বিধি-বিধানের বাইরে খাজনা নেয়ার সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে ইজারাদারকে এসবের লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।