× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রাজধানীতে সিসা লাউঞ্জে অন্য উন্মাদনা

প্রথম পাতা

রুদ্র মিজান
১৯ জুন ২০২১, শনিবার

রাজধানীর অভিজাত এলাকায় দিনের পর দিন নির্বিঘ্নে চলছে অবৈধ সিসা লাউঞ্জ। অভিযানেও অনেক সময় মেলেনা সুফল। অভিযানের আগে আগে উধাও হয়ে যায় নিকোটিন, অ্যালকোহল। এমনকি কোনো কোনো সিসা লাউঞ্জ বন্ধ পান অভিযানকারীরা। রাজধানীর বনানী, গুলশান, ধানমণ্ডি ও মিরপুর এলাকায় সিসা বার বা লাউঞ্জ রয়েছে প্রায় অর্ধশত। এর মধ্যে শুধু বনানীতেই রয়েছে ২২টি। এসব লাউঞ্জে সিসার বাইরেও রয়েছে ভিন্ন উন্মাদনা।
সম্প্রতি সিসা লাউঞ্জের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
অভিযানের কারণে দৃশ্যত বন্ধ হলেও আড়ালে রয়েছে ভিন্ন গল্প। বহুতল ভবনের নিচে গেটের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন নিরাপত্তাকর্মী। অচেনা কাউকে দেখলেই জানতে চান, কোথায় যাবেন? জবাব যদি হয় সিসা লাউঞ্জে, তাহলে তিনি জানিয়ে দেন লাউঞ্জ বন্ধ। কিন্তু বাস্তবতা উল্টো। লাউঞ্জ চলছে ঠিকই। বনানীর ডি-ব্লকের ১০ নম্বর রোডের ৬৬নম্বর বাড়িতে একটি সিসা লাউঞ্জ। রাস্তা থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এটি খোলা। সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই প্রথম রুমটি দেখেই চমকে উঠতে হবে। বর্ণিল আধো আলো-অন্ধকারে সিসার হুক্কায় সুখটান দিচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা। পাশাপাশি বসে টানছে তারা। ধোঁয়া উড়ছে পুরো রুমজুড়ে। সর্বত্র ছড়িয়ে আছে মিষ্টি ঘ্রাণ। বারান্দার পাশে একটি রুম। প্রায় বন্ধ অবস্থা। লাউঞ্জ কর্তৃপক্ষের পরিচিত কোনো জুটি চাইলেই রুমটি ব্যবহার করতে দেয়া হয়। সিসা টানার পাশাপাশি আবাসিক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই রুমটি। এজন্য অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয় লাউঞ্জ কর্তৃপক্ষকে।
বন্ধু-বান্ধবীদের সান্নিধ্যকে আরও নিকটে নিতে প্রায় লাউঞ্জেই রয়েছে ‘কেবিন সিস্টেম’। কেউ কেউ এটিকে গুছি বলে থাকেন। হাজার-হাজার টাকা ব্যয় করে এসব লাউঞ্জে সময় কাটান ধনাঢ্য পরিবারের প্রাপ্ত-অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েরা। সূত্রমতে, সাটার নামিয়ে, অচেনাদের বন্ধ দেখিয়ে চেনা-জানা গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে লাউঞ্জগুলো।
কৌশলে চলছে বনানীর ই ব্লকের ১২ নম্বর রোডের একটি সিসা বার। ১০ তলায় লিফট থেকে নামতেই লাল সোফা, আধো আলো-আঁধারে মানুষের ভিড়। সেখানে দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে, কোনো ঝামেলা হবে কিনা জানতে চাইলে মৃদু হেসে জানান, ঝামেলা করবে কে, সব ম্যানেজ করেই চালাচ্ছি। অভিযান হলে আগেই খবর আসবে। কোনো ঝামেলা নেই স্যার। বিকাল থেকে রাত ২টা পর্যন্ত লাউঞ্জটি খোলা থাকে পরিচিত গ্রাহকদের জন্য।
বনানীর ১১ নম্বর সড়কের একটি ভবনের ষষ্ঠ তলায়, ১১ নম্বর রোডের জি ও এইচ ব্লকে রয়েছে সিসা লাউঞ্জ। ওই রোডের একটি লাউঞ্জে শুধু সিসা নয়, সরাসরি মদ ও বিয়ার বিক্রি করা হয়। এই লাউঞ্জের মালিক দীর্ঘদিন থেকেই সিসা বাণিজ্য করছেন। তার মাধ্যমেই নতুনরা এই পথে হাঁটার সুযোগ পায়। এসব বিষয়ে ওই মালিক বলেন, আমি আদালত থেকে এ বিষয়ে স্টে অর্ডার নিয়ে চালিয়েছি। অর্ডারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমি লাউঞ্জ বন্ধ রেখেছি। কিছুক্ষণ পর কল দিয়ে জানান, লাউঞ্জটি তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন।
নিকেতন ও গুলশানে রয়েছে ৬টি লাউঞ্জ। লাউঞ্জ রয়েছে ধানমণ্ডি ও মিরপুরে। গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, সিসা লাউঞ্জ থেকে পুলিশ টাকা নিচ্ছে, এ রকম তথ্য প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে, এটা সত্য প্রকাশ্যে অভিযান করতে গেলে সিসা লাউঞ্জের মালিকরা টের পেয়ে যায়। তাই আমি যখনই অভিযানে নামি তা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গোপনে। অভিযান করার পরও লাউঞ্জের সংখ্যা না কমার কারণ হিসেবে ডিসি জানান, মালিকরা স্থান পরিবর্তন করে।
সূত্রমতে, বনানীর বেশ কয়েকটি লাউঞ্জে রাতভর ডিজেসহ নানা পার্টি হতো। একটি লাউঞ্জে ৪-৫টি রুম আছে অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর জন্য। সম্প্রতি সিসা লাউঞ্জে কড়াকড়ির ফলে বিকল্প পথে হাঁটছেন মালিকপক্ষ। এটি মাদক নয় বা নিকোটিনের পরিমাণ দুই পয়েন্টের নিচে রয়েছে, এমনটি প্রমাণ করতে চেষ্টা করছেন তারা। ২০১৮ সালের ২৭শে ডিসেম্বর থেকে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮’ কার্যকর হয়েছে। ওই নতুন আইনে সিসাকে মাদকদ্রব্যের ‘খ’ শ্রেণির তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইনে মাদক সম্পর্কিত অপরাধ প্রমাণিত হলে ন্যূনতম এক বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও নগদ অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এসব বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার মানবজমিনকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা অত্যন্ত কঠোর। অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ তথ্য পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর