করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে ইমিউনিটি বা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। কিন্তু নতুন সংক্রমণের বিরুদ্ধে ওই ইমিউনিটি দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা নাও দিতে পারে। বিশেষ করে, ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হতে পারে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা। বৃটেনে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর চালানো এক গবেষণায় এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
খবরে বলা হয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের দেহে সংক্রমণের কয়েক মাস পর বিভিন্ন মাত্রার প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখতে পেয়েছেন। দেখা গেছে, সংক্রমণের ছয় মাস পর কারো কারো দেহে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা বিদ্যমান রয়েছে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্রও দেখা গেছে।
গবেষকরা বলছেন, এ গবেষণায় প্রত্যেকের টিকা নেওয়ার গুরুত্ব ফের ফুটে উঠেছে। অতীতে সংক্রমণ হোক বা না হোক, প্রত্যেকেরই টিকা নেওয়া উচিত।
অক্সফোর্ডের পরীক্ষামূলক ওষুধ ও হেপাটোলজি বিষয়ক অধ্যাপক ও এই গবেষণার গবেষক এলিয়ানর বার্নস বলেন, সংক্রমণের পর দেহে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা ছয় মাস অবদি শনাক্ত করার মাত্রায় উপস্থিত থাকে।
কিন্তু ব্যক্তিভেদে এর মাত্রা ভিন্ন হয়। টিকা থেকে প্রাপ্ত প্রতিরোধ ক্ষমতার তুলনায় এটি অনেক ভিন্ন। টিকা গ্রহণের পর দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাপক মাত্রায় জোরদার হয়। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট প্রতিরোধ ক্ষমতার মাত্রা অনেক বিচিত্র হয়ে থাকে।
সাম্প্রতিক গবেষণাটির জন্য, বৃটেনের করোনাভাইরাস ইমিউনোলজি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে মিলে অক্সফোর্ডের গবেষকরা গত বছরের এপ্রিল থেকে জুনে করোনা আক্রান্ত হওয়া ৭৮ জন স্বাস্থ্যকর্মীর রক্ত বিশ্লেষণ করেছেন। সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার পর টানা ছয় মাস ধরে ওই করোনা রোগীদের প্রতিরোধ ক্ষমতার মাত্রা যাচাই করা হয়। এর অংশ হিসেবে বি সেল, টি সেল সহ নানা অ্যান্টিবডির মাত্রা বিশ্লেষণ করা হয়।
পিয়ার-রিভিউ না হওয়া গবেষণাটির এক প্রাক-প্রকাশনা সংস্করণ অনুসারে, আক্রান্ত হওয়ার এক মাস পর দেহে বিদ্যমান অ্যান্টিবডি ও টি-সেলের মাত্রা বিচারে ছয় মাস পর প্রতিরোধ ক্ষমতার মাত্রা কি রকম হতে পারে তা অনুমান করা যায়। আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম মাসে যাদের দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল দেখে গেছে, ছয় মাস পর তাদের দেহে আলফা ও বেটা ভ্যারিয়েন্ট নিষ্ক্রিয় করার মতো কোনো অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, করোনার আলফা ভ্যারিয়েন্ট সর্বপ্রথম বৃটেনে এবং বেটা ভ্যারিয়েন্ট সর্বপ্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়। এখন অবধি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদে কতটুকু কার্যকর তা বিশ্লেষণ করা হয়নি।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত হওয়ার ছয় মাস পর বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকর্মীর দেহেই শনাক্ত হওয়ার মতো প্রতিরোধ ক্ষমতা বিদ্যমান ছিল। তবে এক-চতুর্থাংশ স্বাস্থ্যকর্মীর ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায়নি। অন্যদিকে, উপসর্গহীন সংক্রমণের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মীর দেহে ছয় মাস পর পরিমাপযোগ্য প্রতিরোধ ক্ষমতা পাওয়া যায়নি।
বার্নসের মতে, অতীতের সংক্রমণ আক্রান্ত ব্যক্তিদের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা নাও দিতে পারে। ওই প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নির্ভর না করে সবার টিকা নেওয়া উচিত।