রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফিন্যান্স কমিটির সভা ও সিন্ডিকেট সভা পন্ড করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবন ও ভিসির বাসভবনে তালা লাগিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তরা। আজ শনিবার সকাল নয়টায় তারা এই ভবনগুলোতে তালা লাগায়। এনিয়ে গত ৬ মাসে চতুর্থবারের মতো তালা লাগানো হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এই ভবনগুলোতে।
এসব কর্মকাণ্ডে করোনার ছুটিতেও বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত থাকলেও মহামারীর এই সময়ে দুর্যোগকালীন শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে অনলাইন ক্লাস এবং পরীক্ষা সম্পর্কিত নানামুখী উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে সেখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে বলার মতো কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় নি৷ অথচ এই সময়ে নানা নেতিবাচক খবরের রসদ জুগিয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।
করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণী কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকলেও চাকরি নিয়ে সাবেক ভিসির সঙ্গে বর্তমান ও সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ক্যাম্পাস ছিলো পুরো উত্তপ্ত। সদ্য সাবেক হওয়া ভিসি অধ্যাপক আবদুস সোবহান তার মেয়াদের শেষ দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩৭ জনের একটি অবৈধ নিয়োগ দিয়ে যান। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সেই ১৩৭ জনের যোগদান স্থগিত রেখেছেন বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা।
চাকরি পাওয়া সেই ১৩৭ প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক পরিবারের সন্তান, প্রত্যক্ষভাবে ছাত্রলীগ কিংবা যুবলীগের নেতাকর্মী অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তান৷
এই নিয়োগকে কেন্দ্র করেই এখন পর্যন্ত গত ছয় মাসে মাসে অন্তত চার বার বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সকল ভবনে তালা লাগানো হয়ছে। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ ভবনে তালা লাগানোর এই সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট করছে তেমনি ভাবে শিক্ষা গবেষণা কার্যক্রমকেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছেন বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যৈষ্ঠ অধ্যাপকরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকিব বলেন, এই ধরণের কর্মকাণ্ড অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলে। কিছুদিন পর পর তারা তাদের খেয়ালখুশি মতো যে তালা আটকে দিতে পারছে সেটা কোন শক্তিতে পারছে? আমার মনে হয় এখানে এক ধরণের প্রশ্রয় আছে সেটি যেদিক থেকেই আসুক না কেন। নাহলে একদল মানুষ ইচ্ছে করলেই এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তালা লাগিয়ে দিতে পারবে? এইগুলো দ্রুত সমাধান নাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া কঠিন হবে। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে কোনো ইতিবাচক খবরে আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে পাচ্ছি না যেটি দুঃখজনক।
দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টা দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া তাদের যোগদান করতে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।