ইরাকের রাজধানী বাগদাদে একটি আর্মি বেস ক্যাম্পে মার্কিন সেনাদের জন্য খাবার বানাতেন কলকাতার টেগোর পার্কের বাসিন্দা বিরাজ রুফু গোমস। ৪৩ বছরের এই শেফ বাগদাদেই কোভিড আক্রান্ত হন। যে মার্কিন কোম্পানি তার নিয়োগকর্তা ছিল ভেক্টর্স তাকে প্রথমে ভর্তি করায় বাগদাদের একটি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এবং শেফের অবস্থা খারাপ হওয়ায় ভেক্টর্স তাকে দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অনুমতি না মেলায় সেই চেষ্টা তাদের ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে বিরাজকে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। দু’জন চিকিৎসক ২ জুন তার সঙ্গে বাগদাদ থেকে কলকাতায় উড়ে আসেন। আট ঘণ্টার উড়ান বিরাজের কাছে এখনও দুঃস্বপ্নের স্মৃতি হয়ে আছে।
অক্সিজেন সমস্যায় জর্জরিত বিরাজ একসময় ভেবেছিলেন, তিনি আর কলকাতায় পৌঁছাতে পারবেন না। মধ্য আকাশেই তার মৃত্যু হবে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দমদমের টারমাকে পৌঁছাতেই তার মনে নতুন আশার উদ্দীপনা দেখা দিল। রানওয়েতেই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন রুবি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। দমদম থেকে সোজা রুবির আইসিইউতে। সমস্যা কঠিন ছিল। ডায়াবেটিসের সমস্যা ছিল বিরাজের। ১৭ দিন লড়াইয়ের পর রুবির ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসকরা জানালেন, বিপদমুক্ত বিরাজ। বাড়ি যেতে পারেন। শনিবার বাড়ি ফিরলেন বিরাজ রিফু গোমস। কুর্নিশ জানালেন তার কোম্পানিকে। বললেন, আমার মতো এক সামান্য কর্মীর জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ সব ব্যয় ওরা করেছেন। ভাবা যায়!
সত্যি হয়তো ভাবা যায় না। বিরাজ এর জীবনটাও এই রকম অলৌকিক ঘটনার মতো। দু’দশক আগে কলকাতার রাস্তায় ছোট্ট একটা আউটলেট বানিয়ে পিৎজা বিক্রি করতেন বিরাজ। রন্ধনশিল্পে তার এই পটুত্ব তাকে মার্কিন কোম্পানির চাকরিটি এনে দেয়। বাগদাদের আর্মি বেস-এর আগে আফগানিস্তানের আর্মি বেস-এ রান্না করেছেন বিরাজ। মার্কিন সেনাদের মধ্যে বিরাজের হাতের কারি রাইসের খুব কদর। বিরাজ এখন থেকেই প্রহর গুনছেন, কবে আবার কোম্পানিতে ডাক পাবেন। হাজার হোক ওরাই তো প্রাণটা বাঁচিয়েছে।