(বলা হয়ে থাকে প্রেমের ফাঁদপাতা ভুবনে। এই ফাঁদে প্রতিনিয়ত পড়ছে আমজনতা থেকে শুরু করে বিশিষ্টজন। এই ধারাবাহিকে বিশিষ্টজনদের প্ৰেমকাহিনী প্রকাশিত হয় প্রতি রোববার। আজ এক কট্টর কমিউনিস্ট-এর প্রেমকাহিনী। লিখেছেন জয়ন্ত চক্রবর্তী)
তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা। বিশ্বের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম স্থপতি। তার বজ্রকঠিন কমিউনিজম-এ মাঝখানেও প্রেমের ইশারা এসেছিলো। ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন তার দুই প্রেমকেই সযতনে হৃদয়ে লালন করেছেন।
একজন তার বিবাহিত স্ত্রী নাজেডাজা ক্রুপস্কায়া। অন্যজন ফ্রেঞ্চ রাশিয়ান কালামনিস্ট ইনেসা আরমানদ। লেনিন তার বিয়ের ১১ বছর পরে পাঁচ সন্তানের জননী ইনেসার প্রেমে পড়েন। বিস্ময়ের ব্যাপার- দুই নারীই জানতেন লেনিন তাদের ভালোবাসেন। কিন্তু দুই নারীর মধ্যে সংঘাত কখনও দেখা যায়নি। ক্রুপস্কায়া যেমন মেনে নিয়েছিলেন ইনেসাকে, ইনেসাও মেনে নিয়েছিলেন স্ত্রীর প্রতি লেনিনের প্ৰেম। এক ফুল দো মালির এই লড়াইয়ে ঈর্ষার নীল বর্ণ কি ছিল না? অবশ্যই ছিল। কিন্তু কমিউনিস্ট আদর্শে মোড়া দুই নারীই জানতেন লেনিন অনেক বড় কাজ করার জন্য এসেছেন, নিছক প্রেমের তুষানলে জ্বলার জন্য নয়। তাই লেনিনের জীবনে দু’জন শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থানের ভূমিকা নিয়েছিলেন। কতোটা ভালোবাসতেন লেনিন ইনেসাকে? ৯ বছর লেনিনের জীবনে কাটানোর পর ইনেসা চির ঘুমের দেশে চলে যান। মস্কো থেকে ৮৫০ মাইল দূরে নানচিকে কলেরা আক্রান্ত হয়ে ইনেসার মৃত্যু হয়। বেশ কিছুদিন পরে মস্কোয় সমাহিত করা হয় ইনেসাকে। শব বহনের সময় চোখ বন্ধ করেছিলেন লেনিন। শুধু কমিউনিস্ট-এর চোখ থেকে ঝরে পড়ছিল বারিধারা। কমিউনিস্ট কিংবা অ-কমিউনিস্ট সবার চোখের জলই বোধহয় লবণাক্ত।
সেদিন লেনিনকে দেখে মনে হচ্ছিল, প্রিয়তমার শেষ যাত্রায় তিনি যেন হাঁটার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন। এই ইনেসা যখন লেনিনের বাড়িতে আতিথ্য নিতেন সব থেকে বেশি খুশি হতেন ক্রুপস্কায়া। লেনিনের স্ত্রী লিখেছেন, ইনেসা এলে আমাদের বাড়ি যেন ঝলমল করে উঠতো। যেমন পান্ডিত্য, তেমনই সাংস্কৃতিক এই নারী এলে ভালোদিভ-এর চোখমুখ আলো হয়ে উঠতে দেখতাম। সেই আলোয় তো আমিও উদ্ভাসিত হতাম। ক্রুপস্কায়া লেনিনকে আদর করে ডাকতেন ভালোদিভ বলে।
ইনেসার এর আগে দু’বার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু তার স্বপ্নের নায়ক ছিলেন লেনিন। বলা হয়ে থাকে, লেনিন যখন প্যারিসে ছিলেন তখন তার প্রথম দেখা হয় ইনেসার সঙ্গে। প্রথম দেখাতেই ইনেসার মঙ্গোলিয়ান চোখের সমুদ্রে ঝাঁপ দেন লেনিন। অক্টোবর বিপ্লবের সময় লেনিনের এক হাত ধরেছিলেন ক্রুপস্কায়া, অন্য হাত ইনেসা। দুই প্রেমের ভারসাম্য নিয়ে লেনিনকে কোনোদিন বিব্রত হতে হয়নি। ক্রুপস্কায়া যদি লেনিনের কাছে হন অভিজাত ড্রয়িংরুম তাহলে ইনেসা ছিলেন দক্ষিণের জানালা। আর কে না জানে, দক্ষিণের জানালা দিয়ে আসা বাতাস ড্রয়িংরুমের গুমোটভাব কাটায়!