× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

১১ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়ে দ্বিগুণ

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২২ জুন ২০২১, মঙ্গলবার

বিগত ১১ বছরে ১০ দফায় বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১১৮ শতাংশ ও খুচরা দাম ৮৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব ও ভোক্তাকণ্ঠ আয়োজিত ‘জ্বালানি রূপান্তরে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এই তথ্য জানানো হয়।
এ ছাড়াও প্রতি বছর বিদ্যুৎ খাতে ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়-যা দামের সঙ্গে যুক্ত হলে বিদ্যুতের প্রকৃত মূল্য আরও বেশি হয় বলে আলোচকরা মত দেন।  দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে এবং ভোক্তাকণ্ঠ সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান ও ক্যাব সংগঠক সৈয়দ মিজানুর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক মনজুরুল আহসান।
লিখিত প্রবন্ধে মনজুরুল আহসান বলেন, পিডিবি ভেঙে দুটি কোম্পানি হওয়ায় জনবল বাবদ ব্যয় বেড়েছে। তারা যে তথ্য-উপাত্ত দেয় তাতে এই ব্যয়ের বিষয়গুলো দেখা। কিন্তু অনিয়মের অনেক খবর আড়ালে থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রি করে বেসরকারি মালিকানায় দেয়া হচ্ছে। এই কোম্পানিগুলোর অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর করে রাখা হচ্ছে।
পরবর্তীতে কিন্তু এই শেয়ারের অর্থ কোথায় যাচ্ছে তা কেউ জানে না। বিগত বছরগুলোতে ভোক্তাসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দেখানো হয়েছে যে, বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। বরং তা কমানো যেতে পারে। অথচ বিদ্যুতের দাম গত ১১ বছরে ১০ দফায় বৃদ্ধি করা হয়েছে।  পিডিবি বা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আমলাতন্ত্রের সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরে সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বলেন, অনিয়ম-অসঙ্গতিতে কোম্পানির বোর্ড সদস্যদের দায় থাকে না। লাভ-লসের দায় তারা নেন না। কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি দেখান যে, একই ব্যক্তি যখন সচিবালয়ে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, তিনি যখন আবার কোম্পানিতে এসে মূল্য নির্ধারণ করেন তখন নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য বা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স বাধাগ্রস্ত হয়।  
আলোচনায় অংশ নিয়ে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সঠিক দাম ও মানে পাওয়া আমাদের অধিকার। একইসঙ্গে পরিবেশ রক্ষার দিকটিও সংবিধান নিশ্চিত করেছে। তিনি জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে বলেন, আমাদের দেশের চেয়ে তাদের দেশে বিদ্যুতের মূল্য কম। তিনি বলেন, জ্বালানি খাত উন্নয়নে রূপান্তরের বিষয়ের প্রশ্ন আসছে, রূপান্তর নিয়ে দেশে ১৭ বছর আগে কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানিকে বশে আনতে সরকার দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। কোম্পানিগুলোকে ন্যূনতম মূল্যহার নির্ধারণ করা হলেও তা কোম্পানিগুলো তোয়াক্কা করছে না।  
রেগুলেটরি কমিশনের দায়িত্ব ছিল ভোক্তা অধিকার রক্ষা করা এবং বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসা। এখন দেখা যাচ্ছে, বিনিয়োগের প্রফিট মার্জিন এত বেশি রাখা হয়েছে যে, এখানে বিনিয়োগের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। দুর্নীতির জন্য প্রকৃত দামের চেয়ে দুই থেকে আড়াই গুণ দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি ও অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ বলেন, কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা চায় জ্বালানি খাতে পরিকল্পিত হস্তক্ষেপ কমুক ও বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকুক। মূল প্রবন্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, গত ১১ বছরে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বেড়েছে ১১৮ শতাংশ। এই পাইকারি দাম বৃদ্ধি প্রভাব ফেলেছে ভোক্তাপর্যায়ে। এখানে কুইক রেন্টালসহ বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকৃত খরচ কেউ জানে না। সরকার বিদ্যুৎ খাতে একটি ইনডেমনিটি আইন করেছে-যেটি গ্রহণযোগ্য নয়।  
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, যে সম্পদের মালিক জনগণ সে সম্পদকে লুটেরা ও ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। কোম্পানিগুলোর বোর্ড সদস্যদের অনিয়মকে আমরা নিষ্ক্রিয় থেকে বৃদ্ধি করছি। নতুন সংযোগসহ বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সেবা পেতেও ভোক্তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।  মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ক্যাবের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে এ প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি ক্যাবকে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করতে আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে গোলাম রহমান বলেন, আমাদের জ্বালানি খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। যতক্ষণ না সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় ততক্ষণ আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে। শুধু ক্যাবকে কথা বললে হবে না, সকলকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ওয়েবিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী ছাড়াও ক্যাবের জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।  
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর