× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

তবুও ঢাকায় আসছে মানুষ

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২৩ জুন ২০২১, বুধবার

করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও মানুষের আসা-যাওয়া বন্ধ হচ্ছে না। নানা উপায়ে মানুষ ঢাকায় আসছেন আবার ঢাকা ছাড়ছেন। এতে ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে জনচলাচল থাকলে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি এড়ানো যাবে না। সরকার ঢাকার পাশের চার জেলায় লকডাউন ঘোষণা দেয়ার পর সোমবার পরিবহন মালিক সমিতি সারা দেশের সঙ্গে বাস বন্ধ রাখার
 ঘোষণা দেয়। তাৎক্ষণিকভাবেই দূরপাল্লার বাসের টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে জরুরি কাজে ঢাকায় আসা বিভিন্ন জেলার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। সকালেও গাবতলী বাস টার্মিনালে ভিড় করেন যাত্রীরা।
তবে বাস বন্ধ থাকায় বিপদে পড়েন তারা। বাস বন্ধ থাকলেও মাইক্রোবাস এবং মোটরসাইকেলে করেও ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে। ওদিকে লকডাউন দেয়া জেলাগুলোতে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বাইরের জেলার বাসিন্দারা এসব জেলার উপর দিয়েই রাজধানীতে আসছেন এবং যাচ্ছেন।

গাবতলীতে রয়েল এক্সপ্রেসের কাউন্টার মাস্টার লিটন মানবজমিনকে জানান, সোমবার রাত ৮টার দিকে হঠাৎ করে বাস বন্ধের ঘোষণা দেয়া হলে বিড়ম্বনা তৈরি হয়। আগে টিকিট বুকিং দেয়া যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। তাছাড়া জরুরি কাজে ঢাকায় আসা বিভিন্ন জেলার মানুষ বিপদে পড়েন। রাত থেকেই প্রচুর যাত্রীর ভিড় ছিল। সকালেও অনেকে টার্মিনালে আসছে। এদের অনেকে জরুরি কাজে ঢাকায় আসছিল। এখন তারা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাস বন্ধের ঘোষণা জানতেন না। জানলেও হঠাৎ বাস বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ অবস্থায় অনেকে মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে করেও বাড়ি ফিরছেন। ওদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিকল্প ব্যবস্থায় ঢাকায় আসছেন। বাস বন্ধ থাকায় মাইক্রোবাসে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই আসছেন তারা।  
দেশে আবারো করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের বেশকিছু জেলায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার এক প্রজ্ঞাপনে ২২শে জুন মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৩০শে জুন মধ্যরাত পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার। এর আগে এদিন সচিবালয়ে এক বৈঠকে মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও মুন্সীগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মুন্সীগঞ্জে ঢিলেঢালা লকডাউন
স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে মঙ্গলবার থেকে মুন্সীগঞ্জে শুরু হয়েছে সরকারঘোষিত লকডাউন। তবে চলছে ঢিলেঢালাভাবে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই শহরের সড়কগুলোতে ইজিবাইক, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, মাহেন্দ্রা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান সহ চলাচল করতে দেখা গেছে বিভিন্ন যানবাহন। তবে বন্ধ বয়েছে দূরপাল্লার বাস চলাচল। তবে শহরের বিভিন্ন স্থানে খোলা রয়েছে বিভিন্ন খাবার হোটেল, চা ও মুদি দোকান সহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু বন্ধ রয়েছে শপিংমল, মার্কেট, বিপণি বিতান সহ অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা এই জেলায় অধিকাংশ মানুষকে মানতে দেখা যায়নি স্বাস্থ্যবিধি। স্বাভাবিক সময়ের মতো সড়কগুলোতে আজও ছিল মানুষের সরব উপস্থিতি। তবে, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় অনেকে বের হয়েছেন দৈনন্দিন কাজে। এর মধ্যে অধিকাংশ মানুষের মুখে দেখা যায়নি মাস্ক কিংবা মানতে সামাজিক দূরত্ব।
নারায়ণগঞ্জে ঢিলেঢালা লকডাউন
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, সরকার ঘোষিত ৭ দিনের কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন নারায়ণগঞ্জে সকাল থেকে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। তবে সকাল থেকে ছোট যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বেলা ১১টার পর প্রশাসনের তৎপরতায় তা কমে যায়। কিন্তু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলছিল আগের মতোই। তবে সংখ্যা কম। এ ছাড়া শহরের মার্কেট ও দোকানপাট অধিকাংশ বন্ধ থাকলেও শহরতলীতে অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতোই দোকানপাট খোলা ছিল। বাজারগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়ও ছিল লক্ষ্যনীয়। মানুষের চলাচলেও স্বাভাবিকতা দেখা গেছে। তবে শহরের কয়েকটি পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটি টিমকে শহর ও শহরতলির বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার সকালের দিকে স্বাভাবিক নিয়মে ব্যক্তিগত গাড়ি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইকের আধিপত্য ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তা কমতে থাকে। বেলা ১১টার দিকে নগরীতে যান চলাচল প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নেয় পুলিশ। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কোনো যান প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এতে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। তবে কিছু রিকশা শহরে চলাচল করতে দেখা গেছে। সেক্ষেত্রে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ও নারী ব্যতীত যাত্রী নামিয়ে দিয়ে রিকশা সড়কের উপর উল্টিয়ে রাখা হয়। এম্বুলেন্সগুলোও চেক করা হয় ভেতরে রোগী আছে কিনা। অন্যদিকে রেলপথ ও নদীপথে ট্রেন-লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে সীমিত আকারে শীতলক্ষ্যায় খেয়া পারাপার চলে।
মানিকগঞ্জে প্রথম দিনের লকডাউনে নিয়ম ভঙ্গ
স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে জানান, মানিকগঞ্জে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে লকডাউন শুরু হলেও নিয়ম ভঙ্গ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা থেকে ছেড়ে আসা রাজধানী ঢাকামুখী  যানবাহন ও যাত্রী ফেরিতে পারাপার করা হয়েছে। সোমবার রাতে রওনা হলে মঙ্গলবার ভোরে যানবাহনগুলো দৌলতদিয়া ঘাটে আটকে পড়ে। যাত্রী ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে গাড়িগুলো ফেরিতে পারাপার করা হয় বলে জানান, বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। বেলা ১০টার পর পাটুরিয়া ঘাট পাড়ি দিয়ে যানবাহনগুলো ঢাকায় যেতে দেখা গেছে।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম জিল্লুর রহমান জানান, সোমবার রাতে নৈশকোচগুলো দৌলতদিয়া প্রান্তে আটকে পড়ে। যাত্রীদের ভোগান্তি বিবেচনায় রাতের কোচগুলো শুধু পারাপার করা হয়। সকালে যানবাহনগুলো পারাপার করার পর আর কোনো যাত্রীবাহী বাস পারাপার করা হয়নি। জরুরি পরিসেবা ও পণ্য বোঝাই ট্রাক পারাপারের জন্য তাদের ১৫টি ফেরিই চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে লঞ্চ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই মানিকগঞ্জ অংশে যেন কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য মানিকগঞ্জের প্রবেশদ্বার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বারবাড়িয়া ও সিংগাইরের ধল্লা এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ।
গাজীপুরে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না মানুষ
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে জানান, সরকার ঘোষিত আবারো লক ডাউনের প্রথমদিনে গাজীপুরে সকালে কিছু বাস চলাচল করলেও পরে বন্ধ করে দেয়া হয় বাস চলাচল। সড়ক-মহাসড়কে বাস ছাড়া সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ নানা ধরনের হালকা যানবাহন চলাচল করে দিনভর। অনেক জায়গায় দোকানপাটও খোলা রাখতে দেখা গেছে। লোকজনের চলাচল অনেকটাই লকডাউন এর আগের পরিস্থিতির মতোই রয়েছে। সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে এতে দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসগামী লোকজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সাধারণ মানুষ তেমন গুরুত্ব দিয়ে মানছেন না সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি। শিল্প-কলকারখানা সহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে এই লকডাউন ঘোষণা কতোটা সুফল বয়ে আনবে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ও ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় দিয়ে  কিছু কিছু দূরপাল্লার গাড়ি  ও আঞ্চলিক রোডে বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে ৮টার পর পুলিশি  তৎপরতায় বন্ধ হয়ে যায় এসব বাস চলাচল। গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন কর্মস্থলে যাওয়া লোকজন। অনেকে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মহাসড়কের পাশে জটলা করে সিএনজি অটোরিকশা সহ হালকা যানবাহনে চড়ে ছুটছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। এমনকি কোথাও কোথাও পিকআপভ্যান সহ পণ্যবাহী পরিবহনে চলাচল করতে দেখা গেছে লোকজনকে। তারা বলছেন, কলকারখানা,অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অনেক কিছুই খোলা রেখে এভাবে লকডাউন দেয়ায় করোনার ঝুঁকি ও ভোগান্তি বেড়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর