× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশীদার হতে প্রস্তুত পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিকে স্বাগত জানাবে না

বিশ্বজমিন

ইমরান খান
(২ বছর আগে) জুন ২৩, ২০২১, বুধবার, ১১:২৮ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশীদার হতে প্রস্তুত পাকিস্তান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে আমরা আরো সংঘাতের ঝুঁকি এড়াতে চাই।
দীর্ঘদিন দুর্ভোগে থাকা ওই দেশটির মতোই একই রকম স্বার্থ আছে আমার দেশেরও। সেটা হলো নিজেদের দেশে রাজনৈতিক নিষ্পত্তি, স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সন্ত্রাসীদের অভ্যায়রণ্য হতে না দেয়া। আফগানিস্তানে যেকোনো সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধী আমরা। কারণ, এটা হলে সেখানে দশকের পর দশক গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে। তালেবানরা পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না। তাই একটি সফল সরকারের জন্য তাদেরকে অঙ্গীভূত করতে হবে।


অতীতে আফগানিস্তানে যুদ্ধরত দলগুলোর মধ্যে কাউকে বেছে নিতে গিয়ে ভুল করেছে পাকিস্তান। কিন্তু আমরা অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছি। আমাদের কোনো পছন্দ নেই এখন। আফগানিস্তানে জনগণের আস্থা নিয়ে যে সরকার আসবে আমরা তার সঙ্গেই কাজ করবো। ইতিহাস প্রমাণ করে যে, বাইরের কেউ কখনোই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না আফগানিস্তানকে।

আফগানিস্তান যুদ্ধের কারণে আমার দেশও প্রভূত দুর্ভোগে পড়েছে। কমপক্ষে ৭০ হাজার পাকিস্তানিকে হত্যা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদেরকে ২০০০ কোটি ডলার সহায়তা দিলেও পাকিস্তানের অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ১৫০০০ কোটি ডলার। পর্যটন এবং বিনিয়োগ খাত শুকিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর পাকিস্তানকে সহযোগী হিসেবে টার্গেট করা হয়েছে। এ জন্য তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান ও অন্য গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে নেতৃত্ব দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে আমি সতর্কতা দিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের সেই ড্রোন হামলা যুদ্ধ জয় করতে পারেনি। এতে উল্টো মার্কিনিদের বিরুদ্ধে ঘৃণার সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে আমাদের এই দুটি দেশের বিরুদ্ধে ফুলেফেঁপে উঠেছে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো।

অনেক বছর ধরে আমি যুক্তি দেখিয়ে এসেছি যে, আফগানিস্তানে সামরিক হামলায় সমস্যার সমাধান হবে না। কিন্তু একেবারে শুরু থেকেই আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী স্বায়ত্তশাসিত উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর সীমান্তে আমাদের সেনাদের পাঠানোর জন্য পাকিস্তানকে চাপ দিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ক্ষেত্রে ভুয়া একটি প্রত্যাশা দাঁড় করানো হয়। বলা হয়, এতে বিদ্রোহ বন্ধ হবে। কিন্তু তা হয়নি। এর ফলে যা হয়েছে তা হলো, ওইসব উপজাতি অঞ্চলগুলোর অর্ধেক মানুষ আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শুধু উত্তর ওয়াজিরিস্তানেই এমন মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ। ক্ষতি হয়েছে শত শত কোটি ডলারের সম্পদ। পুরো গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে।

বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে এইসব ক্ষতির ফলে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী হামলা হয়েছে। ফলে আফগানিস্তান এবং ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যে পরিমাণ সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন তার চেয়ে বেশি সেনা নিহত হয়েছেন এই যুদ্ধে। পাশাপাশি আমাদের বিরুদ্ধে আরো বিস্তার ঘটেছে সন্ত্রাসের। শুধু খাইবার পখতুনখাওয়া প্রদেশেই হত্যা করা হয়েছে পাকিস্তানের ৫০০ পুলিশ সদস্যকে।

আমার দেশে অবস্থান করছেন কমপক্ষে ৩০ লাখ আফগানিস্তানের শরণার্থী। যদি সেখানে আরো গৃহযুদ্ধ হয়, তাহলে রাজনৈতিক নিষ্পত্তির পরিবর্তে আরো অনেক শরণার্থী বৃদ্ধি পাবে, বাড়বে অস্থিতিশীলতা এবং আমাদের সীমান্ত এলাকাগুলো আরো দরিদ্র হয়ে পড়বে। তালেবানদের বেশির ভাগই পশতুন জাতিগোষ্ঠীর। অর্ধেকের বেশি পশতুন বসবাস করেন সীমান্তের এপাড়ে আমাদের দেশে। বর্তমানে আমরা এই ঐতিহাসিক উন্মুক্ত সীমান্তে বেড়া নির্মাণ করছি। এ কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।  

যদি যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি বানাতে দিতে রাজি হয় পাকিস্তান, যেখান থেকে আফগানিস্তানে বোমা হামলা করা হবে এবং যদি আরেকটি আফগান গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে সন্ত্রাসীরা আবারো প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পাকিস্তানকে টার্গেট করবে। সহজভাবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে এই সুবিধা দিতে সক্ষম নই। এরই মধ্যে আমাদেরকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। যদি ২০ বছর আফগানিস্তানের ভিতরে অবস্থান করে যুক্তরাষ্ট্র তার সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক মেশিনপত্র ব্যবহার করে এই যুদ্ধে জিততে না পারে, তাহলে আমার দেশের ভিতর ঘাঁটি গেঁড়ে কিভাবে তারা সেই যুদ্ধ জয় করবে?

আফগানিস্তানে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ একই। আমরা বোঝাপড়ার মাধ্যমে একটি শান্তি চাই, গৃহযুদ্ধ নয়। আমরা আমাদের উভয় দেশেই স্থিতিশীলতা চাই এবং চাই সন্ত্রাসের ইতি ঘটুক। গত দুই দশকে আফগানিস্তানে যে উন্নয়ন অর্জিত হয়েছে তা রক্ষার চুক্তিকে আমরা সমর্থন করি। আমাদের অর্থনীতিকে উন্নত করতে চাই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও সংযুক্তি বা কানেক্টিভিটি। যদি আরেকটি গৃহযুদ্ধ হয় তাহলে আমাদের সব অর্জন বিনাশ হবে ।

এ জন্যই আমরা তালেবানদেরকে আলোচনার টেবিলে আনার জন্য বাস্তবসম্মত ব্যাপক কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছি। এক্ষেত্রে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এবং পরে আফগানিস্তান সরকারের সঙ্গে এই আলোচনা হয়েছে। আমরা জানি, তালেবানরা যদি সামরিক বিজয় ঘোষণার চেষ্টা করে, তাহলে অনন্ত এক রক্তপাতের সূচনা ঘটাবে। আমরা আশা করি আলোচনার টেবিলে আফগান সরকারও অধিক মাত্রায় শিথিলতা দেখাবে, পাকিস্তানকে দোষ দেয়া বন্ধ করবে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে আমরা যা পারি তার সবটাই করছি।

এ জন্যই আমরা সাম্প্রতিক ‘এক্সটেনডেড ত্রয়কা’র যৌথ বিবৃতির অংশ হয়েছি। এর সঙ্গে রয়েছে রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। এতে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, কাবুলে যদি একটি সরকার চাপিয়ে দেয়ার কোনো রকম প্রচেষ্টা নেয়া হয় তাহলে তার বিরোধিতা করবো আমরা সবাই। একই সঙ্গে আফগানিস্তানের জন্য প্রয়োজনীয় বিদেশি সহায়তা বন্ধ করার চেষ্টা করবো।

আফগানিস্তানের রাজনৈতিক নিষ্পত্তি কি হবে সে বিষয়ে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী ও অংশীদার চারটি দেশ প্রথমবারের মতো এমন যৌথ বিবৃতি দিয়েছে একসুরে। এর ফলে এ অঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়নের ওপর নতুন এক প্রভাব ফেলতে সহায়ক হবে। এর অধীনে উদীয়মান সন্ত্রাসী হুমকির বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার এবং আফগান সরকারের সঙ্গে তা মোকাবিলায় কাজ করতে সহায়ক হবে। আফগানিস্তান বা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিজেদের মাটি ব্যবহার করতে না দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে প্রতিবেশীরা। একই প্রতিশ্রুতি আফগানিস্তানকেও দিতে হবে। এসব মিলে আফগানদেরকে তাদের দেশ পুনর্গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে সহায়তা করবে।

আমি বিশ্বাস করি যে, আফগানিস্তানে টেকসই শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অর্থনৈতিক সংযুক্তি ও আঞ্চলিক বাণিজ্যকে অনুমোদন দেয়া। আরো সামরিক অভিযান নিরর্থক হবে। যদি আমরা এই দায়িত্ববোধকে শেয়ার করি তাহলে এক সময়ের ‘গ্রেট গেম’ ও আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী বলে আফগানিস্তানের যে সমার্থক রয়েছে, তা আঞ্চলিক সহযোগিতার মডেল হিসেবে আবিভূত হতে পারে।

(লেখক পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তার এই লেখাটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত হয়েছে। সেখান থেকে অনুবাদ প্রকাশিত হলো)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর