× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মামুনের ফাঁদে প্রবাসী নারীরা

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২৪ জুন ২০২১, বৃহস্পতিবার

প্রবাসী নারী শিমু হাসান সরকার। দীর্ঘদিন ধরে বাস করেন সুইজারল্যান্ডে। ২৬শে মে হঠাৎ করে তার ফেসবুকের বন্ধু তালিকায় থাকা পরিচিত এক ভাবী মেসেজ পাঠান। ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করে ওই ভাবী শিমুকে 
বলেন- তার একটা উপকার করতে পারবেন কিনা। হ্যাঁ সূচক মন্তব্য শুনে ওই ভাবী শিমুর মেসেঞ্জারে একটি লিংক পাঠিয়ে বলেন- তার ফেসবুকের আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে লিংকে প্রবেশ করলে ছবি ও নাম দেখতে পাবেন। তারপর যেন সেখানে একটি ভোট দেন। ভাবীর কথামতো ওই লিংকে প্রবেশ করে নাম-ছবি না পেয়ে খটকা লাগে। ফিরতি মেসেজে ভাবীর কাছে জানতে চান এরকম কোনো কিছু তিনি পাননি।
পরে ভাবী বলেন- হয়তো শিমু পাসওয়ার্ড দিতে ভুল করেছেন। রাত গভীর হওয়াতে শিমু কথা না বাড়িয়ে ওই রাতে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন আত্মীয়স্বজনের ফোনে ঘুম ভাঙার পর জানতে পারেন তার আইডি হ্যাক হয়েছে। আর হ্যাকার ততক্ষণে তার বন্ধু তালিকায় থাকা অনেকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। অবশ্য শিমুর বুঝতে আর দেরি হয়নি। ভাবীর ছদ্মবেশেই কোনো হ্যাকার এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে।
শিমুর পরিবার বাংলাদেশি স্বজনদের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগে। এ ঘটনায় ঢাকার রামপুরা থানায় একটি মামলা করেন শিমুর পরিবার। পরে সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের একটি টিম মামুন মিয়া (২০) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর ওই যুবকের মুখ থেকে শত শত প্রবাসী নারীর আইডি হ্যাক করে তাদের স্বজনদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য বেরিয়ে আসে। ডিবি’র সাইবার ইউনিটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেড় বছর ধরে প্রবাসী নারীদের টার্গেট করে প্রতারণা করে আসছিল মামুন। বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী নারীদের সঙ্গে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে সে পরিচিত হতো। এরপর ফেসবুকের মতো দেখতে নকল আরেকটি সাইট তৈরি করে সেই লিংক ইনবক্সে শেয়ার করে বলতো, সে আমেরিকায় একটি ফটো কনটেস্টে অংশগ্রহণ করেছে। তাকে একটি ভোট দিতে হবে। তাকে ভোট দেয়ার জন্য ওই লিংকে ক্লিক করে প্রবেশ করতে চাইলে নতুন করে আইডি ও পাসওয়ার্ড দিতে হতো। আইডি পাসওয়ার্ড দেয়া মাত্র ওই নারীর আইডি চলে যেত মামুনের নিয়ন্ত্রণে।
শুধু মামুনই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে ফিশিং লিংক পাঠিয়ে ফেসবুক আইডি হ্যাক করে প্রতারণার মচ্ছব চলছে। আইডি নিরাপদ রাখার কৌশল না জানার কারণে মূলত এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। ফেসবুক আইডি হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার কারণে অনেকেই যে শুধু আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে- এমন না। অনেক আইডির মালিক হ্যাকারদের চাহিদা পূরণ করতে না পারার কারণে তাদের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও চলে যাচ্ছে বিভিন্ন পর্নো সাইটে। ভুক্তভোগীর কাছ থেকে টাকা না পেয়ে হ্যাকাররা ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন পর্নো সাইটের এডমিনদের কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। এসব দিয়ে ওই এডমিনরা পর্নোগ্রাফি ভিডিও তৈরি করে অনলাইনে ছাড়ছে। এ ছাড়া হ্যাকাররা আইডির মালিককে আইডি ফেরত দেয়ার কথা বলেও টাকা নিচ্ছে।
ডিবির সাইবার টিম সম্প্রতি এক হ্যাকারকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে। নাহিদ হাসান নামের ওই হ্যাকার ৫ বছরে অন্তত দেশি-বিদেশি ২০ হাজার নারীর আইডি হ্যাক করেছে। শুধু আইডি হ্যাক করে সে থামেনি। ফিশিং লিংক পাঠিয়ে আইডি হ্যাক করার পর এসব আইডি খুলে ঘাপটি মেরে বসে থাকতো নাহিদ। ইনবক্স খুঁজে আইডির মালিকের ব্যক্তিগত ছবি- ভিডিও তার হেফাজতে নিতো। পরে ভুয়া অন্য আইডি ব্যবহার করে এসব ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে টাকা চাইতো।
ডিবি’র সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জোনায়েদ আলম সরকার মানবজমিনকে বলেন, ফিশিং লিংক দিয়ে হ্যাকাররা প্রায়ই ফেসবুক আইডি হ্যাক করছে। মূলত ইউজাররা অসচেতন থাকায় এমনটা হচ্ছে। অপরিচিত কেউ ইনবক্সে কোনো লিংক পাঠালেই ক্লিক করা যাবে না। আর ক্লিক করলেও লিংকে ফেসবুক আইডি বা পাসওয়ার্ড দেয়া যাবে না। আইডিতে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের সঙ্গে একটি ই- মেইল আইডি যুক্ত করতে হবে। মেসেঞ্জারে একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, ভিডিও বা কথোপকথন রাখা হতে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া মোবাইলে আসা নোটিফিকেশন ইয়েস-নো ক্লিক করার আগে ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে। আর ফেসবুকের তিন থেকে পাঁচজন ট্রাস্টটেড কনট্রাক্ট যোগ করতে হবে। এসব করলেই আইডি নিরাপদ থাকবে। না হলে হ্যাকাররা লিংক পাঠিয়ে কৌশলে আইডির নিয়ন্ত্রণ তাদের কাছে নিয়ে যাবে। মেসেঞ্জারে থাকা ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং করতে পারে। পরিচিতজনের ছদ্মবেশে বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে যাবে।

 
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর