× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

২০ বছর পর যেভাবে পরিবার খুঁজে পেলেন হারিয়ে যাওয়া শাহনাজ

বাংলারজমিন

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
২৫ জুন ২০২১, শুক্রবার

৫ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া শাহনাজ স্বামী-সন্তান নিয়ে ফিরেছেন আপন ঠিকানায়। তবে তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ২০টি বছর। বঞ্চিত হয়েছে মা-বাবা আর আত্মীয়স্বজনের ভালোবাসা থেকে। প্রকৃত মা-বাবার নামটিও ব্যবহার করার সৌভাগ্য হয়নি জাতীয় পরিচয়পত্রে। শূন্যতা আর হতাশায় কেটেছে বছরের পর বছর। এ যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে।
বলছি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার জিগাতলা গ্রামের আবু সাইদের মেয়ে শাহনাজের কথা। জন্মের আড়াই বছরের মাথায় বিচ্ছেদ ঘটে মা-বাবার।
বাকি আড়াই বছর কাটে তার দাদি-চাচির কাছে। বঞ্চিত হয় মায়ের আদর আর বাবার ভালোবাসা থেকে। ৫ বছর বয়সে চাচা নুরুজ্জামানের মাধ্যমে স্থান হয় টাঙ্গাইল শহরের ছবি নামে এক নারীর বাসায়। পরবর্তীতে ওই পরিবারটি শাহনাজকে নিয়ে ঢাকা চলে যান। দুই বছর তাদের সাথে থাকার পর বাসার মালিকের মেয়ের দুর্ব্যবহারের কারণে ৭ বছর বয়সে সেখান থেকে চলে যান তিনি। পরবর্তীতে ঠাঁই হয় মাসুক আহমেদ নামে এক ব্যক্তির বাসায়। সেখানেই অতিবাহিত করেন তার বাকি জীবন। দুই বছর আগে ওই পরিবারই তাকে বিয়ে দেন নওগাঁর আত্রাইয়ের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার এক ছেলের সঙ্গে।
কিছুদিন আগে রেডিও উপস্থাপক আরজে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা’ নামের একটি অনুষ্ঠানে শাহনাজকে নিয়ে একটি ভিডিও প্রচার করা হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও গত বছর তার চাচাতো ভাই মো. রায়হান তার ফেসবুক আইডি থেকে শাহনাজের সন্ধান চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। রায়হানের স্ট্যাটাসটি চোখে পড়ে এসকে আবদুল্লাহর। শাহনাজের ভিডিওটি রায়হানের ফেসবুক মেসেঞ্জারে শেয়ার করেন। রায়হান ওই ভিডিওটি তার বাড়ির সবাইকে দেখান এবং ভিডিওটি তাদের হারিয়ে যাওয়া শাহনাজের সঙ্গে মিলে যায়। পরে পরিবারের বর্ণনায় শাহনাজের মাথার চুল, কানে সমস্যা এবং শাহনাজের অন্যান্য বর্ণনা শুনে পরিবারের সবাই নিশ্চিত হন এই মেয়েটিই হারিয়ে যাওয়া তাদের শাহনাজ। পরে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ফিরে পান তাদের হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে। গত ২০ জুন শাহনাজ তার স্বামী-সন্তানকে নিয়ে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার জিগাতলা গ্রামে নিজ পৈতৃক নিবাসে ফেরে। হারিয়ে যাওয়া শাহনাজকে পেয়ে খুশি তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজন। তাকে এক নজর দেখতে আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও আশপাশের এলাকার প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে পাঁচ বছর বয়সে হারিয়ে যান শাহনাজ। অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও তাকে পায়নি তার পরিবার। শাহনাজ নিজের নাম ছাড়া বাবা-মা ও গ্রামের নাম কিছুই মনে করতে পারেনি। শাহনাজকে অন্যের বাসায় কাজে দেয়ার পর তার চাচা মাঝে মধ্যে যাতায়াত করতেন। সেই সুবাদে তার চাচার নাম বলতে না পারলেও কিছুটা বর্ণনা দিতে পারতেন শাহনাজ।
শাহনাজের চাচাতো ভাই মো. রায়হান জানান, ৫ বছর বয়সে হারিয়ে যায় শাহনাজ। আমার বাবা সহ পুরো পরিবার অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাইনি। ওর জন্য অনেক কান্নাকাটি করতো সবাই। এখনো শাহনাজের ব্যবহৃত জামাকাপড়, জিনিসপত্র আমার মা যন্ত করে রেখে দিয়েছেন। আমার মায়ের এমন অবস্থা দেখে গত বছর আমার ফেসবুক আইডিতে শাহনাজের বর্ণনা দিয়ে তার সন্ধান চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেই। আমার স্ট্যাটাস দেখে এলাকার বড় ভাই এস,কে আবদুল্লাহ (জুয়েল) বিদেশ থেকেই একটি ভিডিও আমার ইনবক্সে দেন। ভিডিওটি দেখে আমরা নিশ্চিত হই যে, ওই মেয়েটিই আমাদের বোন শাহনাজ। আমরা আমাদের বোনকে পেয়ে খুব খুশি।
তিনি আরো বলেন, আরজে কিবরিয়া ভাইসহ তার পুরো টিমকে ও এস,কে আব্দুল্লাহ ভাইকে অনেক ধন্যবাদ। কারণ, তাদের প্রচেষ্টায় ও অনুপ্রেরণায় আমরা আমাদের হারিয়ে যাওয়া বোনকে ফিরে পেয়েছি।
শাহনাজ বলেন, মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদের পর একটি পরিবারের কাছে আমাকে দেয়া হয়। সেখান থেকে আমি হারিয়ে যাই। এরপর ঢাকার খিলগাঁও বাসাবোর কদমতলা এলাকার মাসুক আহমেদ আমাকে পেয়ে তার বাসায় নিয়ে যান। সেখানেই বড় হই এবং বিয়ে করি। বিয়ের পর স্বামীর সংসারে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিতে আমার খুব খারাপ লাগত। তবে আমার শ্বশুর বাড়ির মানুষগুলো খুব ভালো। সব কিছু জেনেই আমার স্বামী আমাকে বিয়ে করেছেন।
তিনি আরো বলেন, চাচার চেহারার বিবরণ ও কিছু আবছা আবছা স্মৃতি ছাড়া ছোট বেলার কোনো কিছুই মনে ছিল না। তবে চাচাকে প্রথম দেখাতেই তিনি চিনতে পেরেছেন। যদিও বাবা ও আত্মীয়-স্বজনদের চিনতে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আমার পরিবারকে ফিরে পেয়ে সেই কষ্ট দূর হয়েছে। এতে আমার স্বামীও খুব খুশি হয়েছেন।
শাহনাজের চাচা তোজাম্মেল হক বলেন, ৫ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খুঁজে পাবো তা স্বপ্নেও ভাবিনি। মেয়েকে যারা মানুষ করছেন এবং বিয়ে দিয়েছেন তাদের জন্য দোয়া করি মহান আল্লাহ তাদেরকে যেন মঙ্গল করেন। আমরা আমাদের মেয়েকে পেয়ে খুব খুশি। শাহনাজও আমাদেরকে পেয়ে অনেক খুশি। তবে গর্ভধারিণী মা কাছে থাকলে আনন্দটা আরো বেশি হতো। ঘরে সৎ মাকে ফিরে পেলেও ফিরে পাননি গর্ভধারিণীকে। শাহনাজ ভালো থাকবে তার আপন ঠিকানায়। অটুট থাকবে পারিবারিক বন্ধন। এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর