গণমাধ্যমে তথ্য দেওয়ার ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছে মিডিয়া এডুকেটরস নেটওয়ার্ক। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার শিক্ষকতায় নিয়োজিতদের এই নেটওয়ার্ক থেকে এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। দেশের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগসমূহের মোট ৭৮ জন শিক্ষক এতে সই করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে- আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গণমাধ্যমে তথ্য দেওয়ার ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সাথে ন্যুনতম যৌক্তিক কারণ ছাড়া একই বিভাগের শিক্ষক কাজী আনিছের পদোন্নতি বাতিল করেছে। এ ধরনের অযৌক্তিক ঘটনায় আমরা, দেশেরযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকদের প্ল্যাটফর্ম, মিডিয়া এডুকেটরস নেটওয়ার্ক ক্ষুব্ধ, বিস্মিত ও মর্মাহত।
গণমাধ্যমের সংবাদ সূত্রে আমরা জানতে পারি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবষের্র ভর্তি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ না করেও ১২তম স্থান অধিকার করে। উক্ত ঘটনায় গঠিত প্রথম তদন্ত কমিটি পরীক্ষা কমিটির দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পায় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলে। কিন্তু বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন উক্ত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে নির্বিকার ভূমিকা পালন করে।
পরবর্তীতে এ ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র বা তথ্যদাতাকে চিহ্নিত করার জন্য ‘উচ্চতর তদন্ত কমিটি’ নামে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ কমিটি শুধু গণমাধ্যমে তথ্য সরবরাহকারীকে অভিযুক্ত করে রিপোর্ট প্রদান করে।
দায়িত্বে অবেহলাকারীদের আড়াল করে, তথ্য সরবরাহকারীকে অভিযুক্ত করার এমন অপপ্রয়াস সচেতন মহলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, গণমাধ্যমে তথ্য সরবরাহ করা কোন অপরাধ নয়। বরং গণমাধ্যমে কে তথ্য দিয়েছে তা জানতে চাওয়া অনৈতিক। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তথ্যের সোর্স শনাক্ত করতে যে ‘উচ্চতর তদন্ত কমিটি’ গঠন করেছে, তা নৈতিকতা বিবর্জিত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের পরিপন্থী।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রতি উদ্দেশ্যমূলক বৈরী আচরণ শুরু করেছে। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি, অভিজ্ঞতার সনদে সামান্য ত্রুটির অজুহাতে একই বিভাগের শিক্ষক কাজী আনিসের পদোন্নতি বাতিল করেছে। এর পূর্বে ২০১৯ সালের একটি ঘটনায়, এই বিভাগের দুই শিক্ষার্থী, যারা সংবাদমাধ্যমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে সংবাদ সংগ্রহের প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কক্ষে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। ক্ষোভ প্রকাশের এক পর্যায়ে রেজিস্ট্রার তার কক্ষ থেকে ঐ শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়েছিলেন। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘সাংবাদিকতা বিভাগ খুলে পাপ করেছি’। এ ধরনের অবমাননাকর বক্তব্য আমাদের বিব্রত করেছে। আমরা এ বক্তব্যের নিন্দা জানাই। একইসাথে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে অযৌক্তিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত হয়েছে, অনতিবিলম্বে তা প্রত্যাহারে দাবি জানাই।