× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

তোমাকেই চাই

সেরা চিঠি

রুদ্র মিজান
৫ জুলাই ২০২১, সোমবার

প্রিয়,
নিরীহ খরগোশের মতো বাড়ির আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে আছি আমি। তোমরা কয়েক বন্ধু খেলা করছো। আমোদে হাসছো। আমার দিকে ব্যঙ্গ করে তাকাচ্ছো। কেন জানি না, আমাকে তোমাদের খেলার সঙ্গী করবে না। এই কষ্টে ছোট্ট বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো যেন। দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে তোমাদের খেলা দেখছি অসহায় চোখে।
একপর্যায়ে কেন যেন এই নিরীহ কিশোরের ওপর হিংস্রতার প্রকাশ ঘটালে। এই যে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছি সেটা সহ্য হয়নি বোধ হয়।
দাদির কাছে নালিশ করলে আমি তোমাদের ঢিল ছুড়েছি! কিন্তু আমি কোনো প্রতিবাদ করিনি। বাবার হাতের মার তো কম খাইনি। কিন্তু সেদিন আমার বাবা সঙ্গে সঙ্গে আমার দু’হাত টেনে ধরে দেখলেন হাতে একটুও ময়লা নেই। বললেন, না ও ঢিল ছুড়েনি। সেদিন আমার সৈনিক পিতা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে অপবাদ থেকে রক্ষা করেছিলেন।
 শৈশব থেকে এই অভ্যাস আমার। প্রতিবাদ করি না বলেই অনেক অপবাদ আমার ওপর চাপানো যায় সহজেই। নিরীহ প্রাণির মতো শুধু চোখের জল নীরবে ঝরে পড়ে। এই গল্প কাকে লিখছি? কাকে লিখবো, লেখার মতো কেউ আছে কী, কেউ পড়বে কি আমার চিঠি? চিঠিতে শুরুতেই সালাম ও শুভেচ্ছা জানানোর নিয়ম। কেমন আছো? জানতে চাওয়ার নিয়ম। আমি সেই নিয়ম অতীতেও মানিনি। আজ আমি ঠিক কেমন আছি, তাও ঠিক জানি না। অতীতে কাকে লিখেছি, সে কথা থাক। আজ জীবনের ৩৫ বসন্ত শেষে ভাবছি নিজেকেই লিখি। নিজেকে তো লেখা হয়নি কখনো। ওই যে মঞ্চ নাটক করার জন্য যখন রিহার্সেল করতে হতো তখন কতবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুনের ‘মুন্সি’ হয়েছি। মান্নান হীরার ‘এরশাদ’ হয়েছি। নিজেই নিজের সঙ্গে কথা বলেছি। এই চিঠি কেউ না পড়ুক, নিজেই লিখি, নিজেই পড়ি। সত্যি আমার চিঠি পড়ার মতো কেউ আছে কিনা বুঝতে পারছি না। শুধুই শৈশবের মতো ঢিল ছুড়ার অপবাদের পাল্লা ভারী হচ্ছে।
এই যে শুরুতে নিজেকে প্রিয় সম্বোধন করেছি এটা ডাহা মিথ্যা কথা। কখনো নিজেকে ভালোবাসতে পারিনি। প্রায়ই আমার মধ্যে দু’টি সত্তা কাজ করে। আজ না হয় আমি আমাকে বলি। আমার সামরিক মুক্তিযোদ্ধা বাবা খুব চাইতেন তার মতোই উর্দি পরি যেন। সাবেক পুলিশ প্রধান চাচা চাইতেন পেশাদার হিসেবে হালকা জলপাই রঙের পোশাক যেন পরি। আমি আমার মতোই। কারও কথায় কর্ণপাত করিনি। লেখাপড়ার সঙ্গে মঞ্চ নাটক, মিছিল, মিটিং, আড্ডা বেছে নিয়েছিলাম। আমাকে বিলেতে পাঠানোর জন্য গতানুগতিক নিয়মে মা, মামারা হাঁটলেও আমি চাইনি। ইচ্ছে ছিল এখানেই নোঙর ফেলবো। তীব্র সাধনা, ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছুই হয় না। যাত্রী অপেক্ষায় থাকে না। পা দেয় অন্য কোনো সাম্পানে। ভিনদেশে ভেসে যায় হাওয়ায় হাওয়ায়, ঢেউ তুলতে তুলতো। ততক্ষণে পরিচিতজনদের কাছে ভালো ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছেলেটি অনেক পেছনের সারিতে।
সারাজীবন ত্যাগ করেই গেলাম। অপবাদ নিয়েই থাকলাম। আজও কেন তাই হবে? আমি কী তবে আমাকেই বুঝাতে পারি না। প্রকাশ করতে পারি না নিজেকে। আমি কী তাকে বলবো, এই যে দেখো, হৃদয়জুড়ে নিখাদ যে ছবি সেটি তোমার। নিষ্পাপ চাওয়াটির শিরোনাম ‘তোমাকেই চাই’। হাতিরঝিলের গুছি থেকে পদ্মা তীরের বাউলা বাতাস কিংবা রেস্টুরেন্টের এক কাপ গরম কফি আমার কাছে স্বর্গসুখ, যদি তুমি পাশে থাকো।
না তাকে কিচ্ছু বলি না। শুধু নিজেকে বলি, কোথায় যেন অপূর্ণতা, সীমাবদ্ধতা। আমাকে তা জয় করতে হবে। শিখতেই হবে নিজেকে প্রকাশ করার মন্ত্র। বুঝাতেই হবে, নিখাদ এই প্রেম আমার। কতো ঝড়, ঝঞ্ঝা পাড়ি দিয়ে এসেছি। খুব জেনেছি ‘মাটি তো আগুনের মতো হবেই, যদি ফসল ফলাতে না জানো।’
ইতি
তোমার আমি
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর