× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অন্তহীন ভালোবাসার শোভাযাত্রা...

সেরা চিঠি

শহীদুল্লাহ ফরায়জী
৭ জুলাই ২০২১, বুধবার

প্রিয় মৌনতা,
নিরন্তর শুভেচ্ছা আপনাকে।
দীর্ঘ এক যুগেরও অধিক প্রতীক্ষার পর বাধ্য হয়ে আপনাকে লিখছি ‘মানবজমিন’-এর প্রযত্নে। যদিও ব্যক্তিগত বিষয় প্রকাশ অনুমোদনযোগ্য নয়, তবু আমার গভীর অনুভূতির অবরুদ্ধতা থেকে মুক্তি এবং সত্যের আবরণ উন্মোচনের অনিবার্য তাগিদেই লেখা। অনিচ্ছাকৃত এ অপরাধ নিশ্চয়ই ক্ষমার অযোগ্য নয়।
জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যবর্তী স্রোতের নিস্তব্ধতায় হঠাৎ করে আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলি। আমার প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকা সত্ত্বেও আপনার অস্তিত্বের কোনো সন্ধান গত এক যুগেও আমি পাইনি। এটাও ধ্রুব সত্য আপনার ঠিকানায় খুঁজতে যাইনি কোনোদিন। কিন্তু আমি আপনাকে চিঠি দিয়েছি যা  আপনার হস্তগত হয়নি। যখন সর্বশেষ আপনার লেখা পেলাম তখন আমি বুঝেছি আপনার আর আমার কথোপকথনের ভিতরে একজন অবস্থান নিয়েছেন যিনি আমার পত্র আপনার হাতে পৌঁছানোর দায়িত্ব থেকে বিরতি নিয়েছেন। আপনি যাকে প্রযত্নের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি আমাদের বিচ্ছিন্নতার সাক্ষী হয়ে রইলেন যা বিশ্বাসের ভিতরে বিস্ময়কর ও ভয়াবহ।
আপনার আজও জানা হলো না আমার হৃদয়ের অন্তহীন ভালোবাসা ও নক্ষত্রের কারুকার্য খচিত কতো চিঠি আপনাকে নৈবদ্য দিয়েছি।
আমার হৃদয়ের বার্তা বহন করা সে সব উৎসর্গ ধ্বংসস্তূপের মাঝে চিরতরে বিলীন হয়ে গেছে।
আপনি প্রথম চিঠিতে লিখেছিলেন ‘আমি আপনার একজন ভক্ত এই সহজ কথাটি না বললেই নয়। তবে একথা সত্য আপনি আমার নীরব অনুপ্রেরণা। প্রতিদিন পথ চলি আপনাকে সামনে রেখে। জানি আপনার অনেক ভক্তের ভিড়ে আমি বড় নগণ্য। তবুও ভালোবাসার অধিকার তো সবারই আছে তাই এ স্পর্ধা। যদি স্পর্ধাটা মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে যায় তবে ক্ষমা করবেন। শুধু গীতিকবি হিসেবে নয় ব্যক্তি মানুষ হিসেবেও আপনি আমার আদর্শ ব্যক্তিত্ব। আপনার গানগুলো যতই শুনি ততই ভালো লাগা বেড়ে যায়। তবে গানের ক্ষেত্রে আপনার কাছে প্রাপ্তির চেয়ে প্রত্যাশা অনেক বেশি। তাই আপনার শুভ সৃষ্টিতে যখন সবাই আপনাকে সংবর্ধিত করে উচ্ছ্বসিত হয় তখন আনন্দে আমার হৃদয়ের পাড় ভাঙে ঠিকই কিন্তু সে উচ্ছ্বাস অন্যের মতো বাইরে উপচে পড়ে না। কারণ আমার ইচ্ছা সব ভালো গান আর সব শুভ সৃষ্টিতে থাক আপনার একচেটিয়া অধিকার। তাই বলে আপনি ভাববেন না আমি আপনার আনন্দময় মুহূর্তগুলোর সঙ্গী নই, বেদনার অংশীদার নই। আপনি ভাবতেও পারবেন না আপনার প্রাপ্তিতে আমি কতোটা গর্বিত। প্রার্থনা করি বেঁচে থাকুন যেভাবে খুশি অনন্ত ভালোবাসা পেয়ে অথবা প্রতিদানহীন ভালোবেসে। আপনার গান কেবল আপনারই গান এই গান ধ্বনিত হোক আকাশে বাতাসে।
আপনাকে অনুরোধ করবো না চিঠির জবাব দিতে, কেননা সে পাওয়া হবে আমার জন্য অমূল্য। কারণ আপনার ভালোবাসার নির্যাসে বেড়ে ওঠা আমার আমিত্বটা যখন আমায় প্রশ্ন করবে কী এমন দিয়েছি যে এতটা পাওয়ার আশা করি তখন কী তার জবাব দেবো। তার চেয়ে চিঠির জবাব দেয়া না দেয়া আপনার ইচ্ছের উপর ছেড়ে দিলাম। তবে আপনি আমার চিঠিটা পড়েছেন কিনা এটা জানলে ভালো লাগতো।”
আপনার এই চিঠি পেয়ে আমার ললাটে নতুন করে ভালোবাসার আস্তরণ মেখেছিলাম। সৌন্দর্যের ডানায় উড়ে আসা উপচে পড়া মাধুর্য আমার হৃদয়ে মজুত করেছিলাম এবং তারার উজ্জ্বল আকাশ থেকে নীল আলোর শিখা এসে আমার অন্তরাত্মাকে পরিপ্লাবিত করে দিয়েছিল।
আপনার চিঠিতে শ্রদ্ধা ভালোবাসার যে উচ্চতা ও গভীরতার প্রতিচ্ছবি উদ্ভাসিত হয় তাতে আমি প্রাণভরে তাকিয়ে থেকেছি চিঠির দিকে, আর আকাশের তারার দিকে চেয়ে চেয়ে উত্তর দেয়ার সীমাবদ্ধতা অতিক্রমে আমার ব্যর্থতার যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়েছি। এমন পাণ্ডিত্যপূর্ণ দীপ্তিতে উদ্ভাসিত কোনো পত্র আমি এ জীবনে কখনো পাইনি। তাই অক্ষমতার আত্মগ্লানিতে উত্তর দিতে দেরি করে ফেলেছিলাম।
মনে পড়ে এক যুগেরও আগে ২০০৮ সালের এই জুলাই মাসের ৬ তারিখে আপনার এক চিঠির উত্তরে লিখেছিলাম কখনো কখনো নীরবতাই একমাত্র উত্তর। নিয়তির অমোঘ নিয়মে আমি নিজেকে যত নিরর্থক তাৎপর্যহীন মনে করি তার চেয়ে অধিক হচ্ছে আমার চিরকালীন সীমাবদ্ধতা। তবুও স্বপ্ন দেখি। আমার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করুক তা আমি চাই না। কারণ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করলে আকাঙ্ক্ষার উপর অধিকার জন্মাবে। এর চেয়ে সীমাহীন ভালো স্বপ্ন- স্বপ্ন হয়ে থাক।
আমি আরও লিখেছিলাম জীবনে অনেক প্রশ্ন আছে যার উত্তর নিজেকেই দিতে হয়। নিজের কাছে নিজের অনাবিষ্কৃত থাকার যন্ত্রণা আমার কোনোদিন শেষ হবে না।
আমার এই চিঠি পেয়ে আপনি কালক্ষেপণ না করে লিখেছিলেন ‘নিজের কাছে নিজের অনাবিষ্কৃত থাকা-আপনার এই একটি বাণী আমার জীবন ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। হয়তো আপনাকে আমি আপনার মতো করে চিনতে পারিনি। আমি ভাগ্যবান ভাবি তাদের যারা প্রতিনিয়ত আপনার সান্নিধ্য পাচ্ছে, আর কষ্ট হয় তাদের জন্য যারা আপনার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত। আরও লিখেছিলেন আপনার গান  যত শুনি তত মুগ্ধ হই তেমনি আপনার চিঠি যতবার পড়ি ততবার মুগ্ধ হই।’
আপনি আমার প্রথম চিঠির জবাবে লিখেছিলেন “আমিতো বিমূঢ়- আপনি আমার চিঠির জবাব দিয়েছেন। আমি ভাবতেও পারিনি আর প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি বেশি হলে যে কি আনন্দ সে কেবল সেই জানে যে পেয়েছে হাতের মুঠোয় পরশপাথর। কৃতজ্ঞ আপনার প্রতি আমার মতো রিক্ত মানুষের ছিন্ন ঝুলিতে পরশপাথর দান করায়।”
আপনি আরেকটি চিঠিতে লিখেছিলেন ‘‘কি করবো বলুন-মন তো? মনের উপর কারও জোর চলে না। আর সে মনের চাওয়া এতই বিশাল যে, সে বিশালতার পায়ে শেকল দেয়া যায় না। প্রতিনিয়ত সময়ের স্রোতে ভেসে চলা ক্লান্ত আমি কেবল আপনার ঘাটে দু’দণ্ড বসে স্বস্তি পাই। জানি না আমার এ দু’দণ্ড স্বস্তি আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলছে কিনা? যদি তাই হয় তবে ক্ষমা করবেন। বিশ্বাস করুন আমি আপনার নীরবতার দেয়ালে আঁচড় কাটবো না। নূপুর খুলে নগ্নপায়ে হাঁটবো আপনার সীমানা অবধি যাতে মগ্নতায় ডুবে থাকা আপনার নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ না হয়। কেবল আপনার পায়ের কাছে বসবো দু’দণ্ড, সেথায় আছে  অনন্ত প্রাণশক্তি আর তা নিয়েই চলবো আগামীর মরুপথ।’
আপনার এই লেখা পড়ে  মনে হয়েছিল ‘আপনার পত্র যেন আত্মিক পূর্ণিমায় উজ্জ্বল রাজপ্রাসাদ’ যেখানে প্রবেশ করার স্পর্ধা নেই আমার। এ যেন আকাশের চেয়ে উচ্চতর সমুদ্রের চেয়ে গভীরতর। এই ধরনের বিস্ময়কর ভালোবাসার জগৎ আমি কোনোদিন পরিদর্শন করিনি। এই উচ্চমাত্রার ভালোবাসা লালন করতে পারলে আমার হৃদয় সেই কবে উপাসনালয়ে পরিণত হতো। আপনি আমার ক্ষুধার্ত উপলব্ধিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছেন এবং তৃষ্ণার্ত অনুভূতিকে শ্বাসরোধ করেছেন।
কহলীল জিবরান-এর ভাষায় আপনাকে বলতে ইচ্ছা করছে, ‘কী বিস্ময়কর তোমার কথাবার্তা! তুমি হলে ভাগ্যবান যদিও তুমি তোমার ভাগ্য উপলব্ধি করতে পারো না। প্রকৃতি তোমাকে দান করেছে সুগন্ধ ও সৌন্দর্য, যা সে অন্য কারও জন্য অনুমোদন করেনি। তুমি কি সেই হৃদয় গ্রহণ করবে যে ভালোবাসে কিন্তু কখনো বশ্যতা স্বীকার করে না এবং পুড়ে যায় কিন্তু কখনো গলে না?’’
হঠাৎ একদিন শেষ চিঠি পেলাম কয়েক মাস পর। আমার চিঠি না পেয়ে মনে করেছেন আপনি অবজ্ঞার শিকার। অবজ্ঞার ভয়ার্ত এবং যন্ত্রণাদীর্ণ মর্মবেদনায় আপনি কতোটুকু আহত হয়েছেন তা আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি। এখানেই শুরু বিচ্ছিন্নতার। এটাই যেন নির্মম বিধিলিপি।
বিশ্বাস করুন আপনার চিঠিগুলো ছিল আমার হৃদয়ের বিশ্রাম স্থল, দু’কুল প্লাবিত করা শ্রাবণের উচ্ছ্বাস এবং গৌরবের স্মারক। আপনার জীবন বোধের দর্শনে আমি বিমোহিত ও নিমগ্ন।
আপনার চিঠি পড়ে আমার আত্মার ভিতর ভালোবাসার প্রতিফলন দেখেছি। আপনার চিঠিতে যাপিত যাতনার চিহ্ন অপসারিত করতে পারতাম, আনন্দকে অভ্যর্থনা দিতে পারতাম, জীবনের অনেক স্বপ্ন- আকাঙ্ক্ষাকে আহ্বান করতে পারতাম এবং জাগতিক সকল প্রলোভনকে অতিক্রম করতে পারতাম।
আপনার প্রতিটি পত্র আমার কাছে উজ্জ্বলতার রত্ন ভাণ্ডার, পত্রের প্রতিটি শব্দ ছিল আপনার নিজস্ব আলোয় উদ্ভাসিত এক একটা হীরকখণ্ড। আপনার মনস্তত্ত্ব, আপনার শিল্পবোধ, আপনার প্রখর প্রতিভা এবং লিখনীর যে উচ্চক্ষমতা তা উপলব্ধি করা আমার নাগালের বাইরে। এই পার্থিব জীবনে আপনার লিপিগুলো আমার কাছে মহার্ঘ, ঐশ্বর্যের অদৃশ্য চাবি। আমার পুঁথিপড়া বিদ্যা দিয়ে আপনার চিঠির যথার্থ উত্তর দেয়া ছিল অসম্ভব। আপনার লেখনীতে কী এক অপ্রতিরোধ্য শক্তির আকর্ষণ লুকিয়ে আছে যা আমার ভিতরের ন্যায্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আপনার গভীর এবং অকপট ভালোবাসা, সম্মান এবং শ্রদ্ধাকে আমি যথার্থ স্বীকৃতি, প্রশংসা বা প্রতিদান দিতে পারিনি। মানুষ ভালোবাসা সম্মান শ্রদ্ধার জন্য অলৌকিক শক্তির আশ্চর্য ক্ষমতায় অগ্নিপরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়, অলক্ষ্যে থেকে ভালোবাসার মানুষকে সর্বক্ষণ পথ দেখায়, চিরকালের বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়ায়। প্রকৃত অর্থে এই ধরনের প্রজ্বলিত মানুষ আমি নই। ভালোবাসা নিয়ে গভীরভাবে মগ্ন থাকার মতো হৃদয়ও আমার নেই। আমি অনবরত বিচ্ছেদের মাঝে জীবনের আনন্দ খুঁজে ফিরেছি।
আমার ভিতরে এমন কোনো অগ্নি নেই যা দিয়ে আপনি ভালোবাসার বেদিতে মশাল জ্বালাতে পারবেন। আপনি আমার সীমাবদ্ধতার পরিমাণ এবং ত্রুটির পরিমাপ না করেই আমাকে ভালোবাসার অর্ঘ্য দান করেছিলেন। অপাত্রে অমৃত ঢেলেছিলেন।
আপনার কাছে স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করছি না যে, আমি বিবেকের তাপে দগ্ধ হয়ে হীনমন্যতার পরিসমাপ্তি করে নিজেকে ভালোবাসার যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারেনি। ধ্যান ধারণায় আশা-আকাঙ্ক্ষায়, অমৃত ধারণের অসীম ক্ষমতায় নিজেকে প্রেমের উপযোগী করতে পারিনি। ফলে আমার ভিতরের বিচারালয় থেকে  নিজেকে নিজে দণ্ডিত করেছি, নিজেকে নিজের সীমাবদ্ধতার চৌহদ্দিতে আবদ্ধ করে ফেলেছি। এই অবিশ্বাস্য বেষ্টনী থেকে নিজেকে নিজে কোনোদিন উদ্ধার করতে পারিনি। কোনো বন্ধন কোনো আকর্ষণ আমার একাকী যাপিত জীবনে বিঘ্ন সৃষ্টি করেনি। আমি আমার এই জীবনকেই অভ্যর্থনা জানিয়েছি। নিঃসঙ্গতাকে ভয় করিনি নিঃসঙ্গতাকে সঙ্গী করেছি।
আমার এই সীমাবদ্ধতার জন্য আপনিও আমাকে অভিযুক্ত করে পরিত্যাগ করেছেন। ২০০৮ সালের পর থেকে আপনার চিঠি প্রত্যাশা করে আছি। কিন্তু আপনার চিঠি না পেয়ে প্রতিদিন নীচতার গভীর অভিযোগে আমি তলিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বাস করুন  আমি নিরন্তর স্বপ্ন দেখার মানুষ কিন্তু আমি স্বপ্নের কাছে মালিকানা হস্তান্তর করি না। ভালোবাসার অপরিসীম আনন্দকে আমি অজান্তেই বিপজ্জনক করে তুলি। এই খানেই আমার জীবনের ফলাফল নির্ধারিত হয়ে পড়ে। আমার চারিপাশের সুরক্ষিত দেয়াল অরক্ষিতই থেকে যায় ভাঙার জন্য কোনো চেষ্টাই করেনি।
পৃথিবীতে আমার পরিভ্রমণের সীমা শেষ হয়ে আসছে। আপনার উত্থাপিত ‘অবজ্ঞার’ অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে আমার বিদায় নেয়াটা হবে খুবই অসম্মানজনক। আপনার সঙ্গে কোনোদিন দেখা হয়নি, এমন কি কথাও হয়নি। 
বিশ্ব বিখ্যাত সাহিত্যিক টলস্টয় বলেছেন, “আমার কাছে গোটা জগৎটাই এখন দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। তার একদিকে নাতাশা, এখানে শুধুই আনন্দ, আশা ও আলো: আর অন্য ভাগে আছে সবকিছু যেখানে সে নেই, আছে শুধু দুঃখ ও অন্ধকার।”
আমিও আমার জগৎকে দ্বিখণ্ডিত করেছি। একদিকে আমার অহং সর্বস্ব একাকী জীবনের সুনির্দিষ্ট ‘জীবননীতি’ আর অন্যদিকে জগতের সবকিছু। 
আপনার প্রতি আমার অপরিসীম কৃতজ্ঞতা; আপনার মহৎ ভালোবাসার শোভাযাত্রায় আমাকে অংশগ্রহণের প্রশ্রয় দিয়েছেন কিন্তু প্ররোচিত করেননি।
 আপনি সীমাহীন কষ্টে জর্জরিত হয়েছেন, লজ্জায় অপমানে দগ্ধ হয়েছেন আমি স্বীকার করছি কিন্তু এই অপ্রয়োজনীয় ও ভয়াবহ কাণ্ড সংঘটিত করার আমার কোনো ইচ্ছেই ছিল না। এখানে আপনার আমার ভূমিকা একেবারেই গৌণ। এখানে ভাগ্যনিয়ন্তা আমাদের মাঝে দূরত্বের প্রাচীর তুলে দিয়েছেন যা অলঙ্ঘনীয়। 
আমি বিশ্বাস করি আপনি ভালোবাসার নৈতিক আগুনে পুড়ে নিজেকে ক্রমাগত পরিশুদ্ধ করে তুলেছেন। হয়তো জগতের শ্রেষ্ঠ ঐশ্বর্য আপনার জন্য সংরক্ষিত আছে। আপনি সেই পরম সত্যের সন্ধানে মগ্ন থাকুন।
আমার এই চিঠি আপনার দৃষ্টিগোচর হলে নিশ্চয়ই  অভিযোগ প্রত্যাহার করবেন। আর না হলে আমার মৃত্যুর পর সবকিছু মার্জনা করবেন। 
আমার লেখা আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে ‘বায়না’ অ্যালবামে আজমির বাবুর সুরে একটি গান ছিল-
‘ও আমার সাদা কাফনে 
দাগ লাগাইয়া দিয়ো
অন্তরে দাগ বাইরে সাদা
ভালো দেখায় না
শেষ বিদায়ে ভিতর বাহির
সমান করে দিয়ো’।
মৌনতা, আপনি আমাকে মার্জনা না করলে আমার সাদা কাফনে দাগ লেগে যাবে। এতে আপনার হৃদয়েই আবার রক্তক্ষরণ হবে, অতৃপ্ত আত্মার ক্রন্দন বাড়বে। যে সর্বনাশ সাধিত হয়ে গেছে তা সমাহিত করাই অপরিহার্য।
চিরকালের জন্য আশীর্বাদ রইলো।
আপনার উচ্চতম ভালোবাসায় নত...
ইতি-

শহীদুল্লাহ ফরায়জী
০৫.০৭.২০২১
উত্তরা ঢাকা
[email protected]
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর