× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

১০ দিনের অন্তর্ধান এবং বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্য!

মত-মতান্তর

যুক্তরাজ্য থেকে ডা: আলী জাহান
১৭ জুলাই ২০২১, শনিবার

১. নিখোঁজ হয়ে যাবার ১০ দিন পরে মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবীকে র‍্যাব শুক্রবার ১৬ জুলাই রাজধানীর শাহ আলী থানা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। এমনটাই মিডিয়াকে বলা হয়েছে। এবং মিডিয়াতে সে খবর প্রচারিত হয়েছে। ইসলামী বক্তা আবু আদনানকে তাঁর সঙ্গীসহ 'উদ্ধারের' পর আমরা যে নাটকীয় বক্তব্য পেয়েছিলাম ( ড্রাইভার এবং সফরসঙ্গী সহ বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন), সেরকম কোনো ক্লাইম্যাক্স বক্তব্য মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে গ্রেপ্তারের পর আমরা দেখিনি।

২. অবশ্য ক্লাইম্যাক্সটা অন্য জায়গায় আছে। মাওলানা মাহমুদুল হাসানের হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কে ৬ জুলাই থেকে তাঁর স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবরা যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সাথে শুক্রবার মাওলানা মাহমুদুল হাসানের গ্রেপ্তারের কোনো মিল নেই। বলা হচ্ছে, নোয়াখালী জেলার মাইজদী সদরের পশ্চিম শালুকিয়া গ্রাম থেকে ৬ জুলাই সকাল ৭ টায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাহলে গত ১০ দিন মাওলানা মাহমুদুল হাসান কোথায় ছিলেন?

৩. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য অনুসারে মাওলানা মাহমুদুল হাসানের কিছু বক্তব্য এবং কার্যক্রম রাষ্ট্রের নিরাপত্তার রেড লাইন অতিক্রম করেছে।
সেজন্য তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।মাওলানা মাহমুদুল হাসানের বক্তব্য এবং কার্যক্রম আইন-পরিপন্থী হলে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তারের অধিকার এবং ক্ষমতা আছে। তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করার নিয়ম আছে। যে কারণ দেখিয়ে তাকে শুক্রবার গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, সেই একই কারণ দেখিয়ে ০৬ জুলাই গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি কেন? আইনশৃংখলা বাহিনী এখন পর্যন্ত স্বীকার করেনি যে, তাকে ৬ জুলাইয়ে নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাহলে এই দশ দিন তিনি কোথায় ছিলেন?

৪. ১০ দিন আগে কারা মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসলো? কেন ধরে নিয়ে আসলো? রহস্যময় ১০ দিন তিনি কোথায় ব্যয় করেছেন? তিনিও কি পারিবারিক সমস্যায় ভুগছিলেন? একাধিক বিয়ের কোনো কাহিনী আছে? বন্ধুবান্ধবের বাসায় গিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এবাদত বন্দেগিতে বেহুঁশ ছিলেন? এই রহস্যের উদ্ঘাটন হওয়া দরকার।

৫. মাওলানা মাহমুদুল হাসানের বক্তব্য বা কার্যকলাপ সম্পর্কে আমার কোনো সম্যক ধারণা নেই। মানুষ হিসেবে উনি ভুল করতেই পারেন। উনার কথাবার্তা বা কার্যক্রম রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সেজন্যই তিনি যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতেই পারেন। আদালত তাকে শাস্তি দিতে পারেন। এটাই হচ্ছে সভ্য সমাজের নিয়ম নীতি।

৬. তবে ১০ দিন ধরে একজন জলজ্যান্ত মানুষ কেন এবং কীভাবে উধাও হয়ে গেলেন, তা জানার অধিকার নিশ্চয়ই আছে। বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাবার পর স্থানীয় পুলিশ স্টেশন তাকে উদ্ধার করার জন্য কী কী করেছে তা জানার অধিকার নিশ্চয়ই আছে। পুলিশের 'বিশেষ টেকনোলজি' দিয়ে বের করা যায় না যে আসলেই ওখানে কারা গিয়েছিল?

৭. সরকারকে বিব্রত করার জন্য উনি যদি আত্মগোপনে গিয়ে থাকেন সেজন্য তাঁর বিচার হওয়া উচিত। একই সাথে যদি তিনি আত্মগোপনে না গিয়ে থাকেন এবং তাকে অপহরণ করা হয়, ১০ দিন ধরে কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়, তাহলে তার বিচার কি চাওয়া যাবে না?

৮. ইসলামী বক্তা আবু আদনানকে যখন গ্রেপ্তার দেখানো হয়, তখন তিনি বলেছিলেন তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাই কারো সাথে কথা বলতে পারবেন না।সুস্থ হয়ে গেলে তিনি মিডিয়ার সাথে কথা বলবেন এবং সব খুলে বলবেন। উনার সুস্থতার খবর কেউ জানেন?

৯. আমার কেন জানি মনে হচ্ছে মাওলানা মাহমুদুল হাসানও মুক্তি পাবার পর (যদি পান) আর কথা বলবেন না। উনার রহস্যময় ১০ দিনের রহস্য উদ্ঘাটিত হবে না। বাংলাদেশে প্রতিবছর এরকম শত শত রহস্যের জন্ম হচ্ছে। হয়তো তাঁর কাহিনীও সেরকম একটি অসমাপ্ত গল্প হয়ে থাকবে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মতো উনার কাহিনীও রহস্য হয়ে থাকবে।

----
ডা: আলী জাহান
কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট এবং সাবেক পুলিশ সার্জন, যুক্তরাজ্য পুলিশ।
[email protected]
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর