ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগির পরিবারের বিরুদ্ধে ইসরাইলে তৈরি এনএসও গ্রুপের পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহারের নেপথ্যে সৌদি আরব। পেগাসাস প্রজেক্টে ফাঁস হওয়া তথ্যে এমনটাই বলা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, খাসোগিকে হত্যার পর তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন এমন অন্যদের ফোনেও আড়ি পাতা হয়েছিল। কিন্তু খাসোগিকে হত্যার পর এই প্রযুক্তি ব্যবহারের অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছিল এনএসও গ্রুপ। তারা পরিষ্কার করে বলেছিল যে, তাদের সরকারি ক্লায়েন্টরা ওই সাংবাদিক ও তার পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করতে এই মেলওয়্যার ব্যবহার করেনি। জামাল খাসোগি হত্যার বিষয়ে ২০১৯ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন প্রোগ্রাম ৬০ মিনিটে এনএসওর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শালেভ হুলিও বলেছিলেন, আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে পারি যে, ভয়াবহ এই হত্যাকা-ে আমাদের কোনো কিছুই করার নেই। সৌদি আরবের পাঠানো ঘাতকের মিশন তুরস্কে হত্যা করে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক খাসোগিকে। এর ৬ মাস পরে শালেভ হুলিও ওই মন্তব্য করেন।
কিন্তু এখন বৃটেনের অনলাইন গার্ডিয়ান ও অন্যান্য মিডিয়ার যৌথ তদন্তে যেসব তথ্য বেরিয়ে আসছে, ফোনের ফরেনসিক বিশ্লেষণে যেসব তথ্য বেরিয়ে আসছে, তাতে অকাট্য নতুন প্রমাণ বেরিয়ে এসেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার আগে এবং পরে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আড়ি পাততে ব্যবহার করা হয়েছিল পেগাসাস। এমনকি খাসোগিকে হত্যার চারদিন পর তার ঘনিষ্ঠ চক্রের একজনের ফোন হ্যাক করা হয়েছিল। নতুন এই তদন্তে বলা হয়েছে, খাসোগিকে হত্যার পর তার ঘনিষ্ঠজনদের বিষয়ে আড়ি পাততে সৌদি আরব ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সুবিধা দিয়েছিল এনএসওর প্রযুক্তি। এমনকি তারা ইস্তাম্বুলে প্রধান প্রসিকিউটরের ফোনও নির্বাচন করে নজরদারির জন্য। প্রমাণ মিলেছে যে, এনএসও প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাসোগিকে হত্যার কয়েক মাস আগে তার স্ত্রী হানান ইলাত্র’র ফোন টার্গেট করা হয়েছিল। এ ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে। এক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট ব্যবহার করেছে এনএসওর স্পাইওয়্যার পেগাসাস। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি ফোনকে নজরদারি ডিভাইসে পরিণত করে, যাতে থাকে মাইক্রোফোন এবং সক্রিয় ক্যামেরা। কিন্তু ফোনের ব্যবহারকারী এ বিষয়টি বুঝতে পারেন না। ইলাত্র’র অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, তিনি চারটি ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন, যার সঙ্গে পেগাসাসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী ম্যালিসিয়াস লিঙ্ক আছে। বিশ্লেষণে ইঙ্গিত মিলেছে যে, তাকে টার্গেট করা হয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। তবে পরীক্ষায় এটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়নি যে, ইলাত্র’র ফোন পুরোপুরিভাবে সংক্রমিত করা হয়েছিল কিনা। ইলাত্র বলেছেন, জামাল আমাকে আগেই সতর্ক করেছিল যে, এমনটা ঘটতে পারে। ফলে অনুসারী ভিন্ন মতাবলম্বী অন্যদের সঙ্গে জামাল খাসোগি কি কথা বলছেন, তা নিয়ে আমার মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল।