সংক্রমণ ঠেকানো ছাড়া সিলেটের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট’র নতুন পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। বলেছেন, ‘সিলেটের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ মানুষকে গণটিকার আওতায় না আনা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নতুবা ঈদের পর পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।’ গত ১৯ দিন ধরে সিলেটের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। সেইসঙ্গে মৃত্যুর মিছিলও চলছে। এ নিয়ে শঙ্কিত সবাই। খোদ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা এ নিয়ে চিন্তিত। এই অবস্থায় সিলেটের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে বদলি করা হয়েছে।
আগের কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়ার স্থলে নতুন করে পদায়ন করা হয়েছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়কে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে স্বাস্থ্যখাতে দায়িত্ব পালন করছেন। করোনার আগে সিলেটের সিভিল সার্জনের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে এবার করোনাকালীন এই মহামারিতে সিলেটের স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজানোর দায়িত্ব এখন হিমাংশু লাল রায়ের কাঁধে। মানবজমিনের সঙ্গে গতকাল তিনি এ নিয়ে কথা বলেছেন। নতুন পরিচালক হিমাংশু লাল জানিয়েছেন, ‘সরকার থেকে দুই সপ্তাহের লকডাউন দেয়া হয়েছিল সেটির সুফল পাওয়ার কথা নয়। কারণ, লকডাউনের আগে সিলেটে করোনার যে গণ ট্রান্সমিশন হয়েছিল সেটি নিয়ন্ত্রণের জন্য দুই সপ্তাহের লকডাউন যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন ছিল লকডাউনকে কন্টিনিউ করা। কিন্তু ঈদের কারণে আমরা সেটি করতে পারিনি। এখন আবার সবকিছু স্বাভাবিক। পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি ছাড়াই মানুষ যাতায়াত করছে। এটি একটি চিন্তার বিষয়। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ঈদের পর সিলেটের পরিস্থিতি আরো কঠিন হতে পারে।’ তিনি জানান, ‘উত্তরাঞ্চলে যখন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঢুকে পড়েছিল তখনই সিলেটে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বনের দরকার ছিল। কিন্তু সেই সতর্কতার অভাব ছিল। এছাড়া, শহরাঞ্চলে যখন করোনা বিস্তৃতি ঘটেছিল তখনই গ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়োজন ছিল। সেটি না করার কারণে শহর থেকেই গ্রামে করোনার ট্রান্সমিশন হয়েছে। লকডাউন ঘোষণার পরপরই মানুষ দলবেঁধে বাড়িঘরে গেছে। তাদের দ্বারাই গ্রামে করোনার সংক্রমণ ঘটেছে।’ করোনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে সিলেটের জন্য কী করণীয় প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের এই নতুন পরিচালক বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে হতে সিলেটের ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ মানুষকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। শহর এবং গ্রামে সমানভাবে টিকার গুরুত্ব দিতে হবে। এবং সেটি দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তরফ থেকে গণটিকা কার্যক্রমকে আরো বিস্তৃত করা হচ্ছে। একেবারে তৃণমূলে যাতে টিকার পরিধি বাড়ানো যায় সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। তবে, টিকার কার্যক্রম চলার সময়ই সংক্রমণ রোধ করতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষায় সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে মন্তব্য করেন তিনি।’ সিলেটে এই মুহূর্তে করোনা রোগী ভর্তি, আইসিইউ সংকট; ভবিষ্যতে রোগী বাড়লে করণীয় কী? এমন প্রশ্নের জবাবে হিমাংশু লাল জানিয়েছেন, ‘এখন যেহেতু গ্রামে গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে করোনা; সে কারণে গ্রাম পর্যন্ত করোনা চিকিৎসার পরিধি বাড়াতে হবে। প্রতিটি উপজেলা ও জেলা শহরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু করোনা আক্রান্ত মানুষের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা শহরের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আগ্রহ নেই। আর এই আগ্রহ না থাকার কারণে তারা সবাই হেডকোয়ার্টারমুখী (সিলেট) হচ্ছেন। এ কারণে সিলেট শহরকেন্দ্রিক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভিড় করেন। এজন্য সিলেটের সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোও রোগীতে ভর্তি।’ তিনি পরামর্শ দেন, ‘সিলেট ছাড়া অপর ৩ জেলার আক্রান্ত রোগীরা যেনো জেলার সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেন। স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে এখন সবখানেই মনিটরিং করা হচ্ছে। সেবা পাওয়ার জন্য পরিধি বাড়ানো হয়েছে। উপজেলা হাসপাতালগুলোতেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন।’ সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর চাপ দিন দিন বাড়ছে জানিয়ে হিমাংশু লাল রায় জানান, তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন সময় ওসমানীতে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য মোট ২৩৫টি বেড বর্ধিত করে এসেছেন। নতুন করে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সম্বলিত ৪শ’ বেডের করোনা ওয়ার্ড প্রস্তুত হওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।’