তিস্তা,ব্রহ্মপুত্র নদীর চকচকে বালুর বুকের বাসিন্দারা ভালো নেই। করোনাকালীন ও লকডাউনে গাইবান্ধার চরবাসীদের আর্থিক দৈন্যতার মধ্যে কর্মহীন দিনযাপন করতে হচ্ছে। করোনাকালীন দুই ঈদ থেকে এ কোরবানির ঈদেও তাদের মনে কোনো আনন্দ নেই। গাইবান্ধা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার পূর্বদিকে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদী। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পোড়ার চর ও উজান বোচাগাড়ীর চর। তিস্তার মাঝ বরাবর জেগে ওঠা এই দুই চরে ৫ শতাধিক পরিবার বাস করে। এদের মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যাই বেশি। দিনমজুর পরিবারের লোকজন বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মজুরের কাজ করে বছরের খাবার যোগায়।
কিন্তু করোনার শুরু থেকে এখানকার দরিদ্র মজুররা কোথাও কাজে যেতে পারেনি। ফলে কেউ গবাদিপশু বিক্রি করে সংসার চালিয়েছে। অথবা কেউ দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা নিয়ে খাবার যোগার করেছে। অধিকাংশ পরিবারে এবারও কোনো ঈদের আনন্দ নেই। কোরবানি ঈদের প্রভাব পড়েনি তাদের মধ্যে। নতুন কাপড় তো দূরের কথা ঈদে ভালোমন্দ খাবেন এ অবস্থা তাদের নেই। ত্রাণ সাহায্য জোটেনি অধিকাংশ দরিদ্র পরিবারে। পোড়ার চরের প্রবীণ বাসিন্দা গেনলা শেখ জানান, হামার আবার কিসের ঈদ বাহে? ৩টা সন্তান ও বউ আলেকজান বিবি আছে ঘরে। আগে সিলেটে গিয়ে দিনমজুরের কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠাতাম। কিন্তু লকডাউনের কারণে দেড় বছর থাকি ঘরত বসনা। কাজ কাম নাই খাবারও নাই। যেদিন কাজ করতে পারে এখানে সেখানে সেদিন ভাত জোটে। সে কারণে হামার ঈদের দিনের কথা মনেই নাই।
৭০ বছর বয়সের আনোয়ার হোসেন। গায়ে গতরে কমতি নেই। জমাজমি বলতে পোড়ার চরে ৪ বিঘা বালু মাটি। বালু মাটি আর পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে ৫ সন্তানের পিতা হয়েছেন। ২ পুত্র বাবু আর লাল মিয়া ঢাকার পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। আর ৩ মেয়ে ঘরে আছে বিয়ের উপযুক্ত। ২ ছেলে ঢাকায় কাজ করে যা রোজগার করেন আর তিনি নিজে হাত নেড়ে যা রোজগার করেন তাতে ৬ জনের পরিবার সুখেই চলছিল। কিন্তু গেলো বছরের করোনায় বাড়ি এসে যানবাহন না থাকায় দেরি করে পৌঁছেন কারখানায়। কিন্তু ততক্ষণে তাদের চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয়। খালি হাতে ফেরে বাড়িতে। লকডাউনে কোনো কাজকর্ম করতে পারেনি। তাই পিতা আনোয়ার হোসেনের কৃষি মজুরের কাজ করে যা জোটে তাতে একবেলা খাবার জোটে। আনোয়ার হোসেন জানান, ঈদের খবর আমরা জানি না। আয় রোজগার নাই তাই কোরবানিতো দূরের কথা ঈদের দিন নিজের ঘরের মুরগি জবাই দেয়া লাগবে।
পোড়ার চরের ইউপি মেম্বার রেজাউল করিম জানান, এবার কোরবানি নেই ঈদে। প্রতি বছর এই চরের ৪/৫টা পরিবার কোরবানি দিতো কিন্তু এবার তারাও কোরবানি দিতে পারবে না। সরকারি সাহায্য আসে খুব কম। তাতে চরের কারো চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়।
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মতিন জানান, কোনো মানুষ না খেয়ে থাকবে না। আমরা প্রচুর রিলিফ দিচ্ছি। এবার ঈদের আগেই ১ লাখ ৬৫ হাজার মানুষের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে।