‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা’ ধ্বনিতে পালিত হলো পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। গতকাল ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়ে হজযাত্রীরা একই সুরে উচ্চারণ করলেন- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নিয়ামাতা, লাকা ওয়াল মুল্?ক, লা শারিকা লাকা।’ অর্থাৎ- হাজির হে আল্লাহ হাজির, আপনার মহান দরবারে হাজির। আপনার কোনো শরিক নেই। সব প্রশংসা, নিয়ামত এবং সব রাজত্ব আপনারই। কাল ছিল আরাফাত দিবস। এদিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এই আরাফাতের ময়দানে তার ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে গতকাল ফজরের নামাজের পর থেকেই মিনা থেকে হজযাত্রীরা দলে দলে সমবেত হতে থাকেন আরাফাতের ময়দানে। সারাক্ষণ তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে লাব্বাইক ধ্বনি।
আরাফাত দিবসকে মুসলিমরা মূল হজ বলে মনে করেন। গতকাল সোমবার হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়ে সারাদিন আল্লাহকে খুশি করাতে, নিজের গুনাহ মাফ করাতে এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তির জন্য ইবাদত বন্দেগিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এদিন তারা একত্রে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন। মসজিদে নামিরা থেকে খুৎবা দেন ড. বন্দর বিন আবদুল আজিজ বলিলা। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার ১০ বছর পরে এখানে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। গত বছর হজের খুৎবায় সামাজিক সংহতি, স্বাস্থ্য বিষয়ক সতর্কতা প্রাধান্য পেয়েছিল। এবারও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, করোনা থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করা হয়। সোমবার সূর্যাস্তের পর হজযাত্রীরা রাত অতিবাহিত করেন মুজদালিফায়। সেখানে পৌঁছে তারা মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। এরপর সংক্ষিপ্ত আকারে এশার নামাজ আদায় করেন। মুজদালিফায় রাত যাপন করে আজ মঙ্গলবার সকালে আবার মিনার তাঁবুতে ফিরবেন। সেখান থেকে গিয়েই জামারাহ’তে শয়তানের প্রতি প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করবেন। পশু কোরবানি করবেন এবং তাওয়াফে জিয়ারাহ, সাফা মারওয়া সাঈ করে আবার মিনার তাঁবুতে ফিরে আসবেন। পরের দুইদিনও একইভাবে মিনার তাঁবু থেকে গিয়ে জামারায় পাথর নিক্ষেপ করবেন। ১২ অথবা ১৩ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ শেষ করে হাজীরা মিনার তাঁবু ত্যাগ করে হজের কর্তব্যের সমাপ্তি ঘটাবেন। এরপর মক্কা ত্যাগ করার আগে বিদায়ী তওয়াফ করে যে যার অবস্থানে চলে যাবেন।
গত বছরের মতো এবারও সীমিত পরিসরে পালিত হচ্ছে হজ। এবার শুধু সৌদি আরবের নাগরিক এবং সেখানে বসবাস করেন এমন মুসলিমদের হজ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাও তাদের সংখ্যা ৬০ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। যেসব মুসলিম পবিত্র মক্কা নগরীতে পৌঁছার আগে করোনাভাইরাসের ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না অথবা জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নিয়েছেন- শুধু তাদেরকেই হজ করতে দেয়া হচ্ছে। ফলে এবারও সৌদি আরবের বাইরের কোনো দেশের হজযাত্রীকে হজ করার অনুমতি দেয়া হয়নি। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করে গত বছর যেমন সৌদি আরব হজ পালন করতে সক্ষম হয়েছে, এবারও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাইছে। এরই মধ্যে হজযাত্রীদের দেয়া হয়েছে স্মার্টকার্ড। তাদের সেবায় নেয়া হয়েছে সব ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।