আকাশে মেঘ আর নদীতে ঢেউ দেখলেই আঁতকে ওঠেন উপকূলের মানুষ। কপোতাক্ষ, কয়রা ও শাকবেড়িয়া নদীবেষ্টিত ও সুন্দরবনের কোল ঘেষে ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত খুলনার কয়রা উপজেলা। প্রতিনিয়ত ঝড় বন্যা জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় তাদের। তবে ঝড় নয়, দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে থাকে উপকূলবাসী।
ষাটের দশকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে বছরের পর বছর বাপ-দাদার ভিটে বিলীন হচ্ছে নদীতে। রাতে জলোচ্ছ্বাসের বিকট শব্দ আর দিনে মানুষের আহাজারি। ঘরবাড়ি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে উদ্বাস্তু হয়ে উপকূল ছেড়ে অজানায় ছুটছে তারা।
কয়রা উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে কয়রা উপজেলায় জনসংখ্যা ছিল এক লাখ ৯৩ হাজার ৬৫৬ জন। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৪৭%। সে অনুসারে কয়রা উপজেলায় ২০০৯ হতে ২০২১ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছানোর কথা প্রায় ২ লাখ ২৮ হাজারে।
কিন্তু বর্তমানে উপজেলায় জনসংখ্যা এক লাখ ৯৫ হাজার ২৯২ জন। সে হিসেবে ৩০ হাজারের বেশি লোক এই উপজেলা থেকে অন্যত্র চলে গেছে।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবি নূর ইসলাম বলেন, প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত ও নদী ভাঙনের কারণে শুধু দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন থেকে প্রায় ৩ হাজার মানুষ অন্য জায়গায় চলে গেছে। উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মনোজ মণ্ডল বলেন, প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রায় ৩ হাজারের বেশি মানুষ উপকূল ছেড়ে চলে যায়। আর একশ’ মানুষ উপকূলে কর্মের খোঁজে আসেন। কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানায় জীবন মান উন্নয়নের জন্য অনেকেই পার্শবর্তী জেলাসহ শহরে চলে গেছেন।
এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকেই স্থানান্তরিত হচ্ছেন। তবে স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।