ছোট্ট মনি রহমান (ছদ্দ নাম)। বাবা আব্দুল্লাহ। মালয়েশিয়া প্রবাসী। গত বছর ঈদের দিন দুপুরে পরিবারের খোঁজ নিতে বাড়িতে বাবার ফোন । কথা হয় প্রিয় সন্তানের সঙ্গে। ফোন করেই ছেলের কাছে জানতে চান কেমন আছো বাবা। ভালো আছো? হ্যাঁ বাবা ভালো আছি। তুমি ভালো আছো? হ্যাঁ ভালো আছি।
কি খেয়েছ ? জবাবে ছেলে বাবাকে বলে, সকালে সেমাই খেয়েছি। দুপুরে ডিম দিয়ে ভাত খেয়েছি। কেন, তোমার মা গোশত রান্না করেনি? ছেলে বলে, না বাবা। গোশত পাব কোথায়? কেউতো আমাদেরকে গোশত দেয়নি বাবা। আমাগো কোরবানী দাও না কেন? দিলে আম্মু আমাকে রান্না করে দিত। ছেলের এই কথা শুনে প্রবাসী পিতার দুই চোখ ভরে জল আসতে থাকে। যত কষ্টই হোক আগামীবার কুরবানী দেব বাবা। পরে কথা বলব-এই বলে ফোন রেখে দেন।
প্রতি বছর এমন অনেক ঘটনাই ঘটে। শহরেতো অহরহই ঘটে। গ্রামে কম বেশি সবাই একটু আদটু গোশত পান। কিন্তু শহরে কেউ কারো খবর রাখে না। এজন্য শহরের অনেকে যাদের সামর্থ আছে আগের দিন গোশত কিনে রাখেন। যাদের সামর্থ নেই তাদের ভাগ্যে ঈদের দিন গোশত জুটে না। কেরবানীর গোশতর মজাই অন্যরকম। যে মজা কেনা গোশতের মধ্যে থাকে না।
গ্রামে সবার মধ্যে কোরবানীর গোশত বণ্টনের চমৎকার রীতি প্রচলিত। একেক গ্রাম একেক ভাবে বণ্টন করা হয় থাকে। ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার খানেপুর শৈল্যা গ্রামে গোশত বণ্টনের রীতি খুবই চমৎকার। এই গ্রামবাসীদের মধ্যে যারা কুরবানী দেন, তারা সবাই একভাগ গোশত সমাজের সবার মধ্যে বণ্টনের মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে আসেন। গোশত বণ্টনের জন্য আগে থেকেই কয়েকজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সমাজের সব পরিবারের একটি তালিকা করা হয়। সবার গোশত আসতে আসতে প্রায় দুপুর হয়ে যায়। সমানভাবে গোশতের ভাগা দেয়া হয়। বিকালে সমাজের সব পরিবারের পক্ষ থেকে একজন করে প্রতিনিধি জমায়েত হন। এরপর এক এক করে নাম ডেকে তাদের মধ্যে গোশত বণ্টন করা হয়। সমাজের একটি পরিবারও বাদ থাকে না। সবাই কমপক্ষে একবেলা মন ভড়ে গোশত খেতে পারেন।