× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কোরবানির গোশত পেলেও খাওয়ার ভাগ্য হয়না গরিবের

অনলাইন

রাশিম মোল্লা
(২ বছর আগে) জুলাই ২২, ২০২১, বৃহস্পতিবার, ২:১৫ অপরাহ্ন

প্রতিবছরই মুসমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি দেন। কেউ উট, কেউ গরু, আবার কেউ খাসি কোরবানি দেন। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী এই গোশত তিন ভাগ করা হয়। এর মধ্যে এক ভাগ গরিব, অসহায়, দুস্থদের জন্য বরাদ্ধ থাকে। ঈদের দিন সকালে যখন অন্যরা সেমাই আর নতুন পোশাক পড়তে ব্যস্ত। ছোট্ট শিশু পিতার সঙ্গে নামাজ পড়তে প্রস্তুত। বাসায় এসে ভাল মন্দ খেতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। ঠিক এমন সময় গরিব অসহায় মানুষগুলো গোশত সংগ্রহে বের হন।
ঈদের দিন বয়স্ক পুরুষ-মহিলা, এমনকি ছোট্ট শিশুদেরকেও গোশত টুকাতে দেখা গেছে। এসব গরিব মানুষ নতুন পোশাক না পড়ে খুঁজে বেড়িয়েছেন  কোরবানি দাতার বাসা বাড়ি। যে বাসাতেই কেরবানি হয়েছে, সে বাসাতেই তারা ভিড় করেছে একটু গোশতের জন্য। কোনো বাসা থেকে এক টুকরা গোশত পেয়েছেন। আবার কোনো বাসা থেকে পাননি। এমনও ঘটনা ঘটেছে গোশত না পেয়ে কটু কথা শুনতে হয়েছে তাদেরকে। দিন শেষে কেউ তিন কেজি, কেউ পাঁচ-ছয় কেজি গোশত হয়। কারো আরো বেশি আবার কারো আরো কমও হয়। যেটুকুই হয় এদের অনেকে ঈদের দিনই বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু এত কষ্ট করে পাওয়া গোশত মুখে জুটে না তাদের। কিছু অর্থের জন্য বিক্রি করে দিতে হয়। কথা হয় রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে কোরবানির গোশত বিক্রি করতে আসা হত দারিদ্র এসব গরিব মানুষের সঙ্গে। কি নির্মম! যে গোশত ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে খাওয়ার কথা। সে গোশত টাকার জন্য বিক্রি করে দিতে হয়। এমন প্রতিবেদন প্রতিবছরই প্রকাশিত হয়।

ঈদের দিন ঢাকার নবাবগঞ্জের গোশত সংগ্রহে ছোট্র নাতিকে নিয়ে বের হন কাজলীর মা নামে এক বিধবা মহিলা। বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাংস সংগ্রহ করেন। কারো কারো বাসায় গিয়ে গোশতের একটু পরিমান একটু বাড়িয়ে দেয়ার আকুতি জানান। এজন্য তাকে অনেক বাসায় গালমন্দ শুনতে হয়েছে। তিনি বলেন, একটু গোশতের জন্য নাতিকে নিয়ে সকালে বের হয়েছি। কেউ দেয় আবার কেউ শেষ বলে চলে যেতে বলে। অনেকে আবার  এক টুকরা হাড্ডি আর তেল দিয়েই বিদায় দেন। আসলে আমাদের গরিবের জন্য বরাদ্দ শুধু হাড্ডি আর তেল।

রাজধানীর বনশ্রীর একটি বাসার নিচে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ৭ বছর বয়সী পুতুল। দেখতেও পুতুলের মতো। এক হাতে পলিথিনের ছোট্ট একটা পোটলা। সাদা পলিথিনের ভেতর থেকে স্পষ্ট দেখা যায়, কয়েক টুকরো মাংস আছে তাতে। পুতুল দাঁড়িয়ে আছে কিছুটা জড়োসড়ো হয়ে। বোঝাই যাচ্ছে, কোরবানির মাংস সংগ্রহে এটাই তার প্রথম বের হওয়া। গেট বন্ধ। মাঝে মাঝে গেটের ফাঁক দিয়ে এক চোখে দেখার চেষ্টা, কী হচ্ছে ভেতরে? কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, তার ওই পলিথিনে যোগ হবে আরও কয়েক টুকরো মাংস। পুতুলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, অন্যান্য পড়শীর সঙ্গে সেও মাংস সংগ্রহে বের হয়েছে। তার বাসায় আছে ছোট্ট একটা ভাই আর মা-বাবা। তার মাও মাংস সংগ্রহে বের হয়েছেন। এই মাংস সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে রান্না করা হবে। এরপর পেট পুরে খাবেন তারা।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বসে নি¤œ আয়ের মানুষের সংগ্রহ করা  কোরবানীর মাংসের হাট। বিকেল বেলা বিভিন্ন বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা কোরবানির মাংস নিয়ে জরো জরো হয়েছিলেন এই হাটে। এসব মাংসের ক্রেতাও অবশ্য কিছুটা স্বল্প আয়ের মানুষ। যারা কোরবানি দিতে পারেননি কিংবা কারো বাসায় গিয়ে মাংস সংগ্রহ করতে পারেননি তারাই মূলত এর ক্রেতা ছিল। পরিবারের সদস্যদের একটি দিন মাংস খাওয়ানোর জন্য তারা অল্প দামে কেনেন এসব মাংস। তবে এসব মাংসের দাম তুলনামূলক বকেটু কম। বাজারে কিংবা কসাইয়ের দোকানে না গিয়ে এখান থেকেই মাংস কেনেন তারা। বুধবার ফাঁকা ঢাকার বিভিন্ন বড় রাস্তার মোড়ে, বাজারের সামনে ছিল ছোট জটলা। প্রতিবছরই এই দিনে চোখে পড়ে এমন জটলা। বিভিন্ন স্থানে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারা এখানে মাংস বিক্রি করছেন তাদের বেশিরভাগই বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করেছেন। এর বাইরে মৌসুমি কসাইয়ের কাজ যারা করেছেন তারাও এসব জায়গায় মাংস বিক্রি করেছেন। কথা হয় মাংস বিক্রেতা জিয়াসমিনের সঙ্গে। তিনি জানান, ঈদের দিন বিভিন্ন বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কেজি গোশত পেয়েছি। অল্প একটু গোশত ছেলে মেয়েকে রান্না করে দিয়েছি। বাকিটুকু বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি। সামনে লকডাউন। কাজ কাম থাকবে না। চাল ডাল কিনে রাখতে হবে। শুধু গোশত খেলেইতো হবে না। আগে ভাত লাগবে। আসলে গোশত পেলেও আমাদের মুখে জুটে না।

মৌসুমি কসাই রবিন বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গরু কেটেছি। সেখান থেকে ভাগে প্রায় ১০ কেজির মতো মাংস পেয়েছি। বাড়ির জন্য কিছুটা রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। জাহেদা বেগম নামে এক নারী বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করে পাওয়া মাংস নিয়ে বাজারে এসেছি। কিছুটা বাড়ির জন্য রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। শরিফ নামে এক ক্রেতা বলেন, আমি রিকশা চালাই। লকডাউনে তেমন আয় না থাকায় অল্প দামে মাংস কিনতে  এসেছি। ঢাকার বাইরেও বসে কুরবানীর গোশত বিক্রির হাট। বুধবার ইদের দিন বিকালে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডে বসেছিল কোরবানির মাংসের ক্ষণস্থায়ী হাট। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডাক-চিৎকার দিয়েই সেখানে মাংস বিক্রি করতে দেখা যায়। এই হাটে দুই শ্রেণীর মানুষ গোশত বিক্রি করে। এক. সকাল থেকে বিভিন্ন বাসায় বাসায় গিয়ে মাংস সংগ্রহ করা গরিব মানুষ। দুই. গরিব মানুষের কাছ থেকে ক্রয় করে মৌসুমী মাংস বিক্রেতা। এমনই একজন  সবুজ। তিনি জানান, পেশায় মাছ ব্যবসায়ী হলেও আজ ‘গরিব লোকের’ কাছ থেকে মাংস কিনে পসরা সাজিয়ে বসেছেন। তিনি বলেন, গরিব লোকজন সারাদিন নগরীর বিভন্ন এলাকা থেকে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করে একেক জনে ৩ থেকে ৪ কেজি জমা করতে পারেন। সেই মাংস পোর্ট রোডের কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে তারা ৩শ থেকে ৪শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে যান। আমরা সেই মাংস বিভিন্ন দামে বিক্রি করি। আরেক দোকানি আব্দুস সালাম বলেন, সন্ধ্যা থেকে ২০ কেজি মাংস আমি কিনে রেখেছি। তার মধ্যে ১৬/১৭ কেজি বিক্রি হয়ে গেছে। তিন আরো বলেন, আমরা কিনে রাখার পড়ে সেগুলো দুইভাগে ভাগ করি। খালি মাংস এবং হাড়সহ মাংস। এরপর যে যেমন চায় আমরা সেভাবেই দেই।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর