× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জঙ্গলে নবজাতক প্রসব

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(২ বছর আগে) জুলাই ২২, ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৬:৫০ অপরাহ্ন

ভিন্ন মতাবলম্বী, জাতিগত বিদ্রোহীদের সঙ্গে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ তীব্র হয়ে উঠেছে। এতে প্রচণ্ড ঝুঁকিতে পড়েছেন অন্তঃসত্ত¡ারা। তাদের অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অনেকে সন্তান প্রসব করতে আশ্রয় নিয়েছেন জঙ্গলে। সেখানেই জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ এই যুদ্ধে অবতীর্ণ এসব নারী। তাদেরই একজন রোজমেরি। জুনের এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাতে রোজমেরি মিয়ানমারের মিন্দাত শহরের এক নিঃসঙ্গ গ্রামে অন্ধকারে শুয়ে ছিলেন। তার পাশে তখন ২৫ বছর বয়সী ধাত্রী মাই নাইটেঙ্গেল।
তিনি চেষ্টা করছেন ব্যথায় কুঁকড়ে যাওয়া রোজমেরির চিৎকারের শব্দকে চেপে রাখতে। মাই নাইটেঙ্গেল বলেন, পুরো গ্রামে তখন আমরা দু’জন মাত্র প্রাণি। সব দরজা, জানালা বন্ধ করে দিয়েছি। চুপচাপ বাড়ির ভিতর অবস্থান করছিলাম। রোজমেরি যখন ব্যথা অনুভব করতে লাগলেন, আমি কম্বল, কাঁথা দিয়ে তার মুখ চেপে ধরার চেষ্টা করলাম। আমাদের ভয়- তার চিৎকারের শব্দ শুনতে পাবে সেনারা। এমনি বেশ কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অনলাইন আল জাজিরা। তবে রিপোর্টে যেসব নাম ব্যবহার করা হয়েছে, তাদেরকে প্রকাশ করা হয়েছে ছদ্মনামে। এতে বলা হয়, রোজমেরির প্রসববেদনা শুরু হয় আগের রাত থেকে। সেনাবাহিনী চীন রাজ্যে রোজমেরির গ্রামের দিকে অগ্রসর হওয়া শুরু করতেই রোজমেরি ও গ্রামের অন্যরা গ্রাম ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় যথাযথ কোনো আশ্রয় সেখানে খুঁজে পাচ্ছিলেন না রোজমেরি। এ অবস্থায় রোজমেরি এবং মাই নাইটেঙ্গেল সিদ্ধান্ত নেন, প্রয়োজন হলে সেনাদের মুখোমুখি দাঁড়াবেন। পরের দিন সকালে ফিরে যাবেন গ্রামে। মাই নাইটেঙ্গেল বলেন, পরিস্থিতি একটি বাচ্চা প্রসবের অনুকূলে ছিল না। আমরা দেখতে পেলাম সেনারা গ্রামের দিকে আসছে। রোজমেরি তখন একেবারে প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। রোজমেরির স্বামী তার সঙ্গে থাকার সাহস দেখালেন না। কারণ, সেনাবাহিনী তাকে দেখলে ভাববে, তিনি স্থানীয় সশস্ত্র গ্রæপের সদস্য। ১লা ফেব্রæয়ারি সামারিক অভ্যুত্থানের পর বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী রাইফেল এবং হাতে তৈরি অস্ত্র নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছে। সারা দেশে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই লড়াই চলছে। মে মাস থেকে প্রতিরোধ আন্দোলনের এক হটস্পট হয়ে উঠেছে মিন্দাত। কৌশল হিসেবে কয়েক দশক ধরে সেনাবাহিনী এসব সশস্ত্র বিদ্রোহীদের নিবৃত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু পাশাপাশি তাতে সাধারণ মানুষকে তারা সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। সামরিক যান থেকে গুলি, রকেটচালিত গ্রেনেড, আবাসিক এলাকায় মেশিনগানের গুলি চালিয়ে বৈষম্যহীনভাবে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনার শিকার মিন্দাত শহরও। বিশেষ করে তরুণ, যুবকদের টার্গেট করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর উপস্থিতির শব্দ ফিকে হয়ে যাওয়ার পর একটি সন্তান প্রসব করলেন রোজমেরি। সন্তান ও মায়ের মধ্যে বন্ধননাড়ি একটি ব্লেড দিয়ে কর্তন করলেন মাই নাইটেঙ্গেল। মা ও তার সন্তান সুস্থ থাকলেও ক্রমবর্ধমান এক ঝুঁকিতে পড়লেন রোজমেরি। কারণ, চারদিকে মানবিক সঙ্কট।


সশস্ত্র এই যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত মায়েদের সন্তান প্রসবে সহায়তা করে আসছেন মাই নাইটেঙ্গেল এবং অন্য দু’জন নার্স। তাদের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে আল জাজিরা এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তারা বলেছেন, সন্তান প্রসবের পর তার নিরাপত্তা নিয়ে রয়েছে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা। মায়েদের শারীরিক অনিরাপত্তা বড় রকম ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। কায়া রাজ্যের লোইকাও শহরের এক নার্স। তিনি নিজেকে স্মাইল ছদ্মনামে পরিচয় দিয়েছেন। বলেছেন, অন্তঃসত্ত¡া মা ও নবজাতকদের জীবন ঝুঁকিতে। সন্তান প্রসবের সময়েই তারা মারা যেতে পারে। তারা পালিয়ে যেখানে আশ্রয় নিয়েছেন, সেখানে সেনাবাহিনী অভিযান চালালে তাতেও মারা যেতে পারেন এসব মা বা তার সন্তান। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম বা ওষুধ নেই। শিশুদের টিকা বা পর্যাপ্ত আশ্রয় দেয়া যাচ্ছে না। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ১লা ফেব্রæয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে কমপক্ষে দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সেনাবাহিনী শুধু বেসামরিক মানুষের ওপর হামলাই করছে তা নয়। একই সঙ্গে যে ক্যাম্পে বা চার্চে আশ্রয় নিয়েছেন এসব মানুষ তাদের খাদ্য ও পানির সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে। এরই মধ্যে মিয়ানমারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধসে পড়েছে। ফলে অন্তঃসত্ত¡া নারীরা ঘরে ফিরে নিরাপদে সন্তান প্রসব করার সুযোগও নেই বললেই চলে। অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশজুড়ে গণঅসহযোগ আন্দোলন চলছে। তাতে যোগ দিয়েছেন মেডিকেল কর্মীরাও। এতে দেশটিতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। কিছু স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যকর্মী, হাসপাতাল বা দখল হয়ে আছে এমন হাসপাতালে অব্যাহতভাবে হামলা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। মিয়ানমারে ইউনিসেফের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিনিধি আলেসান্দ্রা ডেনটিস। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, অন্তঃসত্ত¡া নারীরাও বাস্তুচ্যুত। তারা সন্তান প্রসবের সময় জরুরি যতœ পাচ্ছে না। অন্যদিকে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মকাÐতো পুরোপুরি থেমেই আছে। তিনি আরো বলেন, এসব বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া না হলে আমাদের হিসাবে বছরে ৬ লাখ নবজাতক অত্যাবশ্যক যতœ থেকে বঞ্চিত হবে। এতে তাদের বেঁচে থাকা এবং দীর্ঘ মেয়াদে বড় রকম ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। তিনি আরো জানা, প্রায় সাড়ে ৯ লাখ শিশু জরুরি টিকাদান কর্মসূচি থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর