বাংলারজমিন

এবার কেঁদে ফিরলেন তারা

বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি

২০২১-০৭-২৩

পাবনার বেড়া উপজেলার গরু ব্যবসায়ী ও খামারিরা ভালো লাভের আশায় গরু নিয়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পশুর হাটে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের বেশির ভাগই সেখানে লাভ তো দূরের কথা ব্যাপক লোকসানে গরু বিক্রি করেছেন। অনেকেই গরু বিক্রি করতে না পেরে বাড়িতে অবিক্রিত গরু ফিরিয়ে এনেছেন। গরু ব্যবসায়ী ও খামারিদের হিসাব অনুযায়ী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পশুর হাট থেকে বেড়া উপজেলার অর্ধেকের বেশি গরুই ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এসব অবিক্রিত গরু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। অনেকে পাওনাদারের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে ফিরছেন।
 বেড়া উপজেলা দেশের অন্যতম গরু পালনকারী এলাকা বলে পরিচিত। খামারি ও গরু ব্যবসায়ীদের হিসাব অনুযায়ী এবার কোরবানির হাটকে সামনে রেখে উপজেলায় অন্তত ১৫ হাজার গরু লালন-পালন করা হয়েছিল। স্থানীয় ও বাইরের গরু ব্যবসায়ীরা ঈদুল আঁহার মাসখানেক আগে থেকেই গরু কেনা শুরু করেন। তাঁদের অনেকেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী গোয়াল তৈরি করে সেখানে গরুগুলো রেখেছিলেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পশুর হাটে নিয়ে গরুগুলো বিক্রি করা।
গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলায় এবার শতাধিক ব্যক্তি গরু ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের অনেকেই চড়া সুদে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে গরুর ব্যবসায় নেমেছিলেন। কোনো কোনো ব্যবসায়ী গরু পালনকারীদের কাছ থেকে বাকিতেও গরু কিনেছিলেন। কিন্তু ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের গরুর হাটে গিয়ে তাঁরা কেনা দামেও গরু বিক্রি করতে পারেননি। কেউ কেউ লোকসানে কিছু গরু বিক্রি করে বাকিগুলো ফিরিয়ে এনেছেন। এ অবস্থায় পাওনাদাররা গরু ব্যবসায়ীদের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এতে অনেক গরু ব্যবসায়ীই পাওনাদারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে রয়েছেন।
 গরু ব্যবসায়ীরা জানান, এমনিতেই পরিবহন ব্যয়, গোখাদ্যের ব্যয় ও আনুষঙ্গিক ব্যয় মিলিয়ে মোটা অংকের লোকসানে রয়েছেন তাঁরা। এর ওপর ফিরিয়ে আনা গুরুগুলো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। একদিকে সেগুলোর চিকিৎসার খরচ, অন্যদিকে সেগুলোকে খাওয়ানোর খরচ বহন করতে হচ্ছে তাঁদেরকে। এই মুহূর্তে স্থানীয় হাটে গরুগুলো বিক্রি করলে কেনা দামের অর্ধেক পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ব্যবসায়ীদের।
 বেড়া পৌর এলাকার শম্ভুপুর মহল্লার গরু ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘৪৯টি গরু নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পশুর হাটে নিয়্যা গেছিল্যাম। লোকসানে ৩০টি গরু কোনোরকমে বেচছি। বাকি ১৯টা গরুই ফিরায়া আনছি। সব মিলয়া আমার ১৫ লাখ টাকা লোকসান হইছে।’
 বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লার মোমিনুল ইসলাম একাধারে খামারি ও গরু ব্যবসায়ী। তিনি এবার তাঁর খামারের ও কেনা গরু মিলিয়ে মোট ৭৭টি গরু ঢাকার তিনটি পশুর হাটে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, ক্রেতার অভাবে গরুর দাম একেবারে পড়ে যায়। অনেকেই ভেবেছিলেন শেষের তিনদিন ভালো দাম হবে। কিন্তু হয়েছে উল্টো। শেষের তিনদিনেই অনেকে লোকসান দিয়েও গরু বিক্রি করতে পারেননি। মোমিনুল জানান, তিনি লোকসান ২৮টি বিক্রি করে বাকি ৪৯টি গরু ফিরিয়ে এনেছেন। এতে তাঁর ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা লোকসান যাবে বলে তিনি জানান।
 বৃশালিখা নৌঘাটে গিয়ে কথা হয় আরও এক গরুব্যবসায়ীর সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গরুব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার গরুর ব্যবসায় যায়া আমি এক্কেরে শেষ। ঢাকায় ১৪টা গরু নিছিল্যাম। এর ১০টাই ফেরত আনছি। এখন পাওনাদারের ভয়ে বাড়ি ছাইড়্যা পলায়া রইছি।’
 এদিকে যেসব খামারি বেশি লাভের আশায় ঢাকার হাটে গরু নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরাও অবিক্রিত গরু নিয়ে কেঁদে বাড়ি ফিরেছেন। কেউ কেউ গরু বিক্রি করতে পারলেও তা করেছেন ব্যাপক লোকসান দিয়ে।
 চাকলা গ্রামের খামারি আব্দুর রশিদ জানান, বাড়িতে গরুর বেপারি এসে তাঁর দুটি ষাঁড়ের দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা বলেছিল। কিন্তু আরও বেশি দামের আশায় এলাকার পাঁচজন খামারির সঙ্গে ট্রাক ভাড়া করে গরু নিয়ে ঢাকায় পশুর হাটে তিনি যান। সেখানে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকায় নেওয়ার মতোও কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই গরু দুটি ফিরিয়ে এনেছেন।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status