নূরজাহান বেগম। বয়স ৭০ এর কাছাকাছি। তার এখন স্থায়ী ঠিকানা খুলনার দিঘলিয়া ঈদগাহ সংলগ্ন ভৈরব নদীর পাড়ে ‘ভৈরব নগর’ আশ্রয়ণ প্রকল্পে। স্বামী অহেদ চৌকিদার ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী সন্তানের জন্য কিছুই রেখে যাননি। সেই থেকে শুরু তার সংগ্রামী জীবন। পরের বাড়িতে থেকে, পরের কাজ করে, খেয়ে না খেয়ে দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে কষ্টের জীবন কাটিয়েছেন। এভাবে কেটে গেছে দীর্ঘ ৫০ বছর। সর্বশেষ তিনি ভাড়া বাসায় থাকতেন উপজেলা সংলগ্ন দেয়াড়া মোল্যার মোড় এক বাড়িতে।
বুধবার ঈদের দিন বিকালে ‘ভৈরব নগর’ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ২০ নং ঘরের বারান্দায় আপন মনে মসলা বাঁটতে দেখা যায় নূরজাহান বেগমকে।
পাশে ছোট একটা পাত্রে কয়েক টুকরো গোশ্ত। কী করছেন? উত্তরে জানালেন, ‘সকালে ইউএনও সাহেব আধা কেজির মতো গোশ্ত, সেমাই, চিনি, চাল আর আলু দিয়ে গেছেন। সেগুলো এখন রান্না করবো। আরেক জায়গা থেকে পাইছি কয়েক টুকরো কোরবানির গোশ্ত। তা আরেক দিন খাবো বলে একজনের ফ্রিজে রাখিছি। এই যা ঈদের উপহার পালাম। মাঝে-মধ্যে ইউএনও সাহেব কিছু ত্রাণ দিয়ে থাকেন। শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে দিয়াড়ার আবজাল বাঁচি থাকতি একবার উপজেলায় যায়ে ১টা প্লেট আর ১টা থালা দিছিলো। বছরে ১টা কম্বল পায়। ইউএনও সাহেব কইছেন আপনাদের জন্য (শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে) বড় পুরস্কার আসতিছে। কি পুরস্কার তা জানিনে। চেয়ারম্যান, মেম্বাররা আমাদের কোনো খবর রাখে না’। নূরজাহান বেগম তার ভ্যানচালক ছেলে হাবিব এবং হাবিবের স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন এ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে।
জীবনের শেষ পর্যায় এসে বিনামূল্যে ঘর এবং জমি পেয়ে তিনি দারুণ উচ্ছ্বসিত। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেছেন।
নূরজাহান বেগমের মতো আরও ২১ টি পরিবার স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছেন ‘ভৈরব নগর’- আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ঈদের নামাজ শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুল আলম দুস্থ, গরিব ও অসহায় মানুষদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার গোশ্ত, সেমাই, চিনি, চাল আর আলুর প্যাকেট বিতরণ করেন। দিঘলিয়া উপজেলায় ১ম পর্যায়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিনামূল্য ঘর এবং জমি পাওয়া হাজীগ্রাম ‘আতাই’ এবং ‘ভৈরব নগর’ আশ্রয়ণ প্রকল্পে সুবিধাভোগী ৭০ টি পরিবারের মাঝে। প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত এসব পরিবার।