মোবাইল নম্বর বিড়ম্বনায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা পেতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রাজশাহীর চারঘাটের ভাতাভোগীরা। অনেকে সঠিক নম্বর দিলেও আসেনি ভাতার টাকা। আবার অনেকে দালালের খপ্পরে পড়ে হারিয়েছেন টাকা। বয়স্ক ও নিরক্ষর ব্যক্তিরা না বুঝে নিজের কার্ড তুলে দিয়েছেন অন্যের হাতে। পরে মোবাইল নম্বর বদলে দিয়ে টাকা চলে যাচ্ছে অন্যের নম্বরে। সঠিক নম্বর থাকলেও টাকা আসেনি অনেকের। এমন নানা ধরনের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। ভাতা প্রাপ্তদের দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে শুরু হয়েছে ভাতাভোগীদের জন্য ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস)।
এর মাধ্যমে সহজেই ঘরে বসে ভাতার টাকা উত্তোলন করা যাবে। কিন্তু চারঘাটে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, রাজশাহীর চারঘাটে সরকারি ভাতাভোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৭৪৮ জন। তার মধ্যে বিধবা ২ হাজার ৯৮৬ জন, প্রতিবন্ধী ৩ হাজার ৭৩ জন ও বয়স্ক ভাতাভোগী ৬ হাজার ৬৮৯ জন। তাদের প্রত্যেককে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নিজের দেয়া নম্বরে টাকা আসলেও পিন নম্বরের কারণে উত্তোলন করা যাচ্ছে না। কেউ কেউ একই নম্বর থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারলেও, যার নম্বর তিনি তুলতে পারছেন না। অথচ একইসঙ্গে একই নিয়মে এমআইএস করেছেন তারা। আবার অনেকে বলছেন, অজ্ঞাত নম্বরে টাকা চলে গেছে। পরে ওই নম্বরে কল করলে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। উপজেলার পরানপুর গ্রামের গৌরবজান বেগম বলেন, আমার বয়স্ক ভাতার ৩ হাজার টাকা অন্য নম্বরে চলে গেছে। ফোন করলে বলছে সে রংপুর আছে। টাকা ফেরত পাইনি। সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
মিয়াপুর গ্রামের বেগম খাতুন (৬৫) স্বামী মৃত মুনসুর মোল্লা বলেন, বিধবা ভাতার টাকা পেতে তার মোবাইল নম্বরে হিসাব খোলা হলেও ভাতার কোনো হদিস নেই। ভাতা না পাওয়ায় তিনি ৬ দিন উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে ধরণা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। অনেকের অভিযোগ, তাদের মোবাইল নম্বরের অ্যাকাউন্টে টাকা আসেনি। নানান সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন শত শত উপকারভোগী চারঘাট উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ভিড় জমাচ্ছেন। কেউ ঘুরছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা সদস্যদের দ্বারে দ্বারে। কিন্তু তাতেও সমাধান মিলছে না। উপজেলার বিভিন্ন বাজারের একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং চারঘাট সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, ভাতা না পাওয়ায় প্রতিনিয়ত লোকজন পরিষদে ভিড় করছে। আমার কাছে প্রায় ৫০ জন মানুষ অভিযোগ নিয়ে এসেছিল। যাদের কারও মোবাইল নাম্বার ভুল ছিল, আবার নাম্বার ঠিক থাকার পরেও অনেকে টাকা পায়নি। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধান করতে। এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, সমস্যাটি সারা দেশের সমাজসেবা কার্যালয়ের। আমাদের কাছে প্রায় ২২০ জন মানুষ তাদের সমস্যা নিয়ে এসেছিল। আমরা তাদের তথ্য সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি সমাধান হয়ে যাবে।