× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঢাকায় নেমেই ভোগান্তি

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২৪ জুলাই ২০২১, শনিবার

গতকাল ভোর থেকে শুরু হয়েছে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। বন্ধ গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানবাহন। আগের লকডাউনে কলকারখানা চালু থাকলেও এবার পোশাক শিল্পসহ সব ধরনের কলকারখানা বন্ধ। ঈদের একদিন পরই এই লকডাউন কার্যকর হওয়ায় ঢাকাফেরত মানুষের নানা দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। ভোরে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা যাত্রীরা ঢাকা প্রবেশ করেই হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান। নতুন ধাপের লকডাউনের প্রথমদিন রাজধানীতে যানবাহনের সংখ্যা ছিল অনেক কম। এ ছাড়া দোকানপাটও ছিল বন্ধ। সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি দেখা গেছে।

বিধিনিষেধ অমান্য করে সড়কে বের হওয়ায় রাজধানীতে ৪০৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ২০৩ জনের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ৪৪১টি যানবাহনকে মোট ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১৪ই জুলাই রাত থেকে ঈদ যাত্রার সুযোগ মিললেও ফেরার সুযোগ ছিল মাত্র একদিনের। ঈদ যাত্রায় উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের ছিল অসহনীয় যানজট। রংপুর যেতে সময় লেগেছে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা। কিন্তু ফিরতি পথে যানজটের ভোগান্তি অনেকটাই কম ছিল। কিন্তু রাত থেকেই ভীতি ছিল যাত্রীদের সঠিক সময়ে রাজধানীতে পা রাখতে পারবেন কিনা।
বাস থেকে নেমেই শুরু হয় ভোগান্তি। ভোর ৬টায় শুরু হয়ে যায় লকডাউন। গাবতলীতে পুলিশের তল্লাশি এড়াতে কিছু বাস আশুলিয়া দিয়ে ঘুরে যাত্রী নামিয়ে দেয় মাজার রোডে। কিন্তু বাস থেকে নামার পর বাড়ি ফেরার যানবাহন সংকটে ভোগেন তারা। ভারী ব্যাগ নিয়ে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই সুযোগে রিকশা ভাড়া নেয়া হয় কয়েকগুণ বেশি। মাজার রোড থেকে আদাবরের ১০ নম্বরের ভাড়া সাধারণ সময়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা রাখা হলেও ভোর বেলা ১০০ টাকার কমে আসতে রাজি হয়নি কোনো রিকশা। রংপুর থেকে আসা যাত্রী সাদাত রহমান ফার্মগেটে আসেন ২২০ টাকা রিকশা ভাড়ায়।
মাজার রোড থেকে গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায় শ’ শ’ যাত্রী রিকশার অপেক্ষায়। তখন সময় সাড়ে ৭টা। দুই সন্তান, স্ত্রী, দুই বস্তা ও ব্যাগসহ হাঁটা ধরেছেন মানিক মিয়া। তিনি বগুড়া থেকে এসেছেন। যাবেন চকবাজার। তার প্রয়োজন দুই রিকশা। একেক রিকশা ভাড়া চায় ৪০০ টাকা করে। বাধ্য হয়ে ৩৫০ টাকায় এক রিকশায় স্ত্রী, দুই সন্তান ও একটি বস্তা উঠিয়ে দেন। বাকি বস্তা মাথায় নিয়ে চকবাজারের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করেন তিনি।
দূরপাল্লার বাসগুলো আমিনবাজারে যাত্রী নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে স্রোতের মতো মানুষ আসতে থাকেন গাবতলীর দিকে। পরিবার নিয়ে তাদের বিপত্তির শেষ নেই। চেকপোস্টে যাত্রী বোঝাই বাস পার হতে দেয়া না হলেও খালি বাস পার করছিলেন পুলিশ সদস্যরা। তবে ব্যক্তিগত গাড়িতে যারা বৃহস্পতিবার রাতে রওয়ানা দিয়েছেন সেতুর টোল বক্সের টোকেন দেখে তাদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। বাসের যাত্রীরা আমিনবাজার থেকে পায়ে হেঁটে আসতে থাকেন। সারারাতের ক্লান্তিতে যেন খেই হারিয়ে ফেলছেন সবাই। পা যেন চলছেই না।
দিনাজপুর থেকে আসা হানিফ পরিবহনের যাত্রী সাব্বির আহমেদের দুই হাতে দুই ব্যাগ। তার স্ত্রীর কোলে ছোট্ট বাচ্চা। সাব্বির বলেন, রাত ৯টায় দিনাজপুরে বাসে উঠেছি। ১২ ঘণ্টা পর সকাল ৯টায় নামিয়ে দিয়েছে আমিনবাজারে, যাবো মিরপুর ১। আমিনবাজার থেকে রিকশা ভাড়া চায় ২৫০ টাকা। আর গাবতলী থেকে ২০০ টাকা। ২০০ টাকায় এক রিকশাকে না করলাম। পরে আর সেই ভাড়াতেও যেতে পারছি না। রিকশা সব দূরের যাত্রী খুঁজছে। এখন রিকশা ভাড়া চায় ৩০০ টাকা। তাই বাধ্য হয়ে হেঁটে রওনা দিয়েছি।
টেকনিক্যাল মোড়ে দেখা মেলে মালামাল টানার ভ্যান যাত্রী পরিবহন করছে। টেকনিক্যাল থেকে ছয়জন করে যাত্রী নেয়া হয়। ফার্মগেটের কথা বলতেই মুহূর্তে ভরে যায় ভ্যান। ভাড়া রাখা হয় ১৫০ টাকা করে। কল্যাণপুরের এই ভ্যান আটকায় পুলিশ। বাসের টিকিট দেখতে চান সবার। এক যাত্রী টিকিট দেখাতে না পারলেও ছেড়ে দেয়া হয় তাকে। আর যাদের মাস্ক ছিল না তাদের মাস্ক পরতে বাধ্য করেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার আট লাখ ২০ হাজার মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করেছেন। আর ১৫ থেকে ২২শে জুলাই পর্যন্ত এক কোটি চার লাখ ৯৪ হাজার মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। ঢাকায় প্রবেশ করা এবং ঢাকা থেকে বের হওয়া মোবাইল ফোনের সিমের হিসাব দিয়ে গতকাল বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমনটি জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
এদিকে সকাল থেকে একে একে সদরঘাটে ভিড়তে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলের  লঞ্চগুলো। প্রতিটি লঞ্চ যাত্রীতে কানায় কানায় পূর্ণ। এক একটা লঞ্চ ঘাটে ভিড়তেই জনসমুদ্রে রূপ নেয় পুরো সদরঘাট এলাকা। মানুষের এই ভিড় দেখে বোঝা যাচ্ছে কর্মজীবীরা ফিরছেন রাজধানীর উদ্দেশ্যে। যদিও কঠোর লকডাউনের কারণে সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ। তবে এ সকল মানুষ বলছেন তাদের কর্মস্থলে ফিরতে হবে। কেউ কেউ বলছেন আরও ৪-৫ দিনের ছুটি ছিল কিন্তু আজ থেকে সকল গণপরিবহন বন্ধ তাই বৃহস্পতিবার রওনা দিয়ে গতকাল সকালে ঢাকায় পৌঁছেছি।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থেকে লঞ্চযোগে ঢাকায় এসেছেন কিরণ মাহমুদ। তিনি বলেন, সকাল ৬টায় ঘাটে আসছি। সঙ্গে স্ত্রী আর চার বছর বয়সী মেয়ে। যেতে হবে রায়েরবাগ। দুই ঘণ্টায়ও কোনো যানবাহনের ব্যবস্থা করতে পারিনি। দুই-একটা রিকশা পাওয়া যায়, তাও ২শ’ টাকার ভাড়া ৫শ’ টাকা চাচ্ছে। অতঃপর ভেঙে ভেঙে দুই রিকশায় যাচ্ছি।
রাজধানীর শংকর ইবনেসিনা হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স কলি আক্তার জানান, ঈদের ছুটি আরও দুইদিন বাকি থাকলেও গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ভেবে আগেই চলে আসছি। আমি একা মানুষ সদরঘাট থেকে শংকর যেতে হবে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কোনো গাড়ি পাইনি। অতঃপর একটি মোটরসাইকেলে ৬শ’ টাকায় বাসায় আসছি। তিনি আরও বলেন, এরকম ভোগান্তিতে পড়তে হবে আগে জানলে বাড়ি যেতাম না। পটুয়াখালী থেকে আগত বনি আমিন বলেন, আমি ময়মনসিংহ যাবো। কিন্তু লঞ্চ থেকে সদরঘাট নামার পর কোনো গণপরিবহন পাচ্ছি না।
সরজমিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা যায়, শুধু রিকশা ও দুই একটি ভ্যান ছাড়া কোনো গণপরিবহন নেই। দাঁড়িয়ে আছেন হাজার হাজার মানুষ। দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা এ সকল যাত্রীর ভোগান্তির যেন শেষ নেই। অনেকে ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে হেঁটে রওনা দেন গন্তব্যে।
ফাঁকা সড়কে চেকপোস্টে শিথিলতা: কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে রয়েছে পুলিশ, র?্যাব ও সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা। রয়েছে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালত ঢাকার বিভিন্ন সড়কে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। এ ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়কে ব্যারিকেড বসিয়ে গাড়ি তল্লাশি করছে পুলিশ। বিনা কারণে যারাই ঘর থেকে বের হচ্ছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে গতকালের লকডাউনের প্রথমদিনে চেকপোস্টগুলোতে পুলিশকে খুব কড়াকড়ি করতে দেখা যায়নি। এ ছাড়াও গতকাল ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট ছিলও কম। অনেক স্থানে পুলিশের সদস্যরা বসে ছিলেন। গোটা ঢাকা শহরে ছুটির আমেজ বিরাজ করছিল। প্রধান সড়কের দোকান বন্ধ ছিল। ঈদের পর হওয়ায় বেশির ভাগ খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান, পাড়া-মহল্লার দোকানও বন্ধ আছে।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিধিনিষেধ অমান্য করে বাইরে আসার কারণে ৪০৩ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালত ২০৩ জনকে ১ লাখ ২৭ হাজার ২৭০ টাকা জরিমানা করেছে। আর বিনা কারণে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ায় ৪৪১টি গাড়িকে ১০ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের এডিসি (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মো. ইফতেখায়রুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সরকারের লকডাউনের ক্ষেত্রে যে নির্দেশনা দিয়েছে তা পুলিশ শতভাগ লকডাউন কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছে। লকডাউন কার্যকর করার ক্ষেত্রে পুলিশ বদ্ধপরিকর।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর