× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বেড মিলছে না সিলেটে

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৪ জুলাই ২০২১, শনিবার
ফাইল ছবি

সিলেটের হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না করোনা আক্রান্ত রোগীদের। ওসমানীতেও ফ্লোরিং করা হচ্ছে। শামসুদ্দিনে সকাল হলেই অপেক্ষায় থাকেন রোগীরা। বেড খালি হলেই পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে হাসপাতাল। বেসরকারি হাসপাতালেও জায়গা মিলছে না। আইসিইউ তো দূরের কথা, অক্সিজেন সম্বলিত বেড পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় সিলেটে করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে দৌড়ঝাঁপ বাড়ছে স্বজনদের। হাসপাতালে-হাসপাতালে এম্বুলেন্সযোগে রোগীদের নিয়ে দিতে হচ্ছে ধরনা।
ওসমানী, শামসুদ্দিন, সিলেটের ৫টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পর এবার ক্লিনিকগুলোতেও করোনা ওয়ার্ড খুলে চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এতেও মিলছে না স্বস্তি। রোগী বেড়ে যাওয়ায় ক্রমেই সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। করোনা প্রকোপ বেড়ে যাওয়া এক মাস আগে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৩৫ বেডের তিনটি করোনা ওয়ার্ড করা হয়। শামসুদ্দিনে রোগীর জায়গা না হওয়ার কারণে ওসমানীতে চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো হয়। এর আগে অবশ্য ওসমানীতে আক্রান্ত শনাক্ত হওয়া রোগীদের হাসপাতালেই বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রেখে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হতো। কিন্তু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে বাইরের রোগীদের ভর্তি করার জন্য হাসপাতালের ২৬, ২৭ ও ৫নং ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ড করা হয়। এরমধ্যে ৫নং ওয়ার্ডে কেবল উপসর্গে ভুগতে থাকা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হতো। কিন্তু এখন তিন ওয়ার্ডে করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীদের রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এবং সিলিন্ডার দিয়ে রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে। কিন্তু ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন উপচে পড়ছেন করোনা আক্রান্ত রোগীরা। গতকাল ভোর থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ২৫-২০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তির জন্য ভিড় করেন। কিন্তু বেড খালি না থাকায় রোগীদের ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। তবে- আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা কয়েকজন রোগীকে ওসমানীর তিনটি ওয়ার্ডে ফ্লোরিং করে রাখা হয়। আর ফ্লোরে রেখেই তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হয়। দুপুরের পর পুরাতন রোগীদের ছাড়পত্র দিয়ে তাদের বেডে তোলা হয়। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কয়েকটি টিম কাজ করছে। এ ছাড়া অক্সিজেন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা হয়েছে। ফলে ওসমানীতে ভর্তি হওয়া কষ্টকর হলেও চিকিৎসা সেবায় কোনো গাফিলতি নেই বলে রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন। ওসমানীতে ৮টি বেড সম্বলিত একটি আইসিইউ ওয়ার্ড রয়েছে। এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জায়গা নেই। সবসময় ১০-১২ জন ক্রিটিক্যাল রোগী আইসিইউ’র জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। সিলেটে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য একমাত্র ডেডিকেটেড হাসপাতাল হচ্ছে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। এ হাসপাতালে গত ২০ দিন ধরে জায়গা খালি নেই। সকাল হলেই শামসুদ্দিনে রোগী ভর্তির লাইন পড়ে। কিন্তু সবাইকে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে- হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা কিছুটা সুস্থ হলেই বাড়িতে আইসোলেশনে পাঠিয়ে দিয়ে রোগী ভর্তির সুযোগ করে দেয়া হয়। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. চয়ন রায় গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- হাসপাতালে সকালে রোগী ভর্তির জায়গা ছিল না। তবে- দুপুরের পর রোগীদের ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ার পর ১৫টি সিট খালি হয়েছিলো। ভর্তি অপেক্ষায় থাকা রোগীরা এক ঘণ্টার মধ্যে ভর্তি হয়ে যান। এ ছাড়া হাসপাতালে আইসিইউতে কোনো খালি বেড নেই। ফলে আইসিইউতে নতুন করে কাউকে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। শামসুদ্দিনে ১৬টি আইসিইউ বেড রয়েছে। হাসপাতালে আইসিইউতে জায়গা পেতে ২-৩ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে রোগীদের। ফলে এখন আশঙ্কাজনক রোগীরাও শামসুদ্দিনের আইসিইউ’র বাইরে সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তির জন্য অপেক্ষায় থাকেন। কারণ- সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি হলে আইসিইউ’র জন্য সিরিয়াল পাওয়া সহজ হচ্ছে। শামসুদ্দিনে রোগী বেড়ে যাওয়ায় এখন কেবিনের দুই বেডেও দুইজন করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। গতকাল শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আইসিইউ’র জন্য এম্বুলেন্সে করে রোগী নিয়ে ১০-১২ জন যান। কিন্তু আইসিইউ বেডের সংকট থাকার কারণে তারা ভর্তি হতে পারেননি। সিলেটের সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন- সিলেট বিভাগের প্রতিটি উপজেলা, জেলার করোনা আক্রান্ত আশঙ্কাজনক রোগীর গন্তব্য হচ্ছে সিলেট। এ কারণে রোগী বেড়ে গেছে সিলেটে। আর এই রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণে সিলেটের সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীর চাপ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তিনি জানান- জেলা কিংবা উপজেলায় সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসাসেবা গড়ে তোলা হয়েছে। রোগীরা নিজ নিজ উপজেলায় ও জেলায় চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করলে এই চাপ কমে আসবে বলে জানান তিনি। সিলেটে সরকারি চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এতেও মিলছে স্বস্তি। বর্তমানে সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য শতাধিক আইসিইউ বেড রয়েছে। এসব বেডও রোগীতে পরিপূর্ণ। এ ছাড়া আরও প্রায় ৪০০ করোনা আক্রান্ত রোগীকে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে আছে উপসর্গে ভুগতে থাকা রোগীরাও। গত ৪-৫ দিন ধরে বেসরকারি হাসপাতালেও করোনা আক্রান্ত রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। ফলে সাধারণ কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি হতে হলে রোগীর স্বজনদের রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে। সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মোজয় দত্ত জানিয়েছেন- ‘সরকারি বেসরকারি সব হাসপাতালেই রোগী বেড়েছে। এ কারণে মাঝে মধ্যে সংকট দেখা দিলেও সুস্থ হওয়া রোগীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নতুন রোগী ভর্তির সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। আমাদের চেষ্টা রয়েছে; রোগীরা যাতে হাসপাতালে চিকিৎসা পায়। সেজন্য ডাক্তারসহ সংশ্লিষ্টরা চিকিৎসার পরিধি বাড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান তিনি।’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর