× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আফগানিস্তান: যুক্তরাষ্ট্রের ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের 'পরিত্যক্ত যুদ্ধ'!( পর্ব-১)

অনলাইন

 আমীর খসরু
(২ বছর আগে) জুলাই ২৪, ২০২১, শনিবার, ৪:৫৫ অপরাহ্ন

[সাংবাদিক গবেষক আমীর খসরু ১৯৮৭ সালে সরেজমিন আফগানিস্তান যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করেন]

এক.

আফগানিস্তানে ২০ বছরের যুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ওই যুদ্ধ পরিত্যক্ত ঘোষণা, চলমান ও অতীতের যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনার জন্য যুদ্ধের তাত্ত্বিক ও বাস্তব সম্মত কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে এ সম্পর্কে বুঝতে সুবিধা হবে।

যুদ্ধ হচ্ছে রাজনীতির সশস্ত্র রূপ। মাও সেতুং-এর সেই বিখ্যাত উক্তি ‘রাজনীতি হচ্ছে রক্তপাতবিহীন যুদ্ধ, যেখানে যুদ্ধ হচ্ছে রক্তপাতের রাজনীতি’। এক্ষেত্রে ১৮৩২ সালে তৎকালীন প্রুশিয়ান সমর বিশেষজ্ঞ কার্ল ভ্যঁ ক্লজভিজ তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘অন ওয়ার’-এ যুদ্ধ সম্পর্কে বলেছেন, ’সবকিছুই খুব সহজ, তবে অতি-সহজতর বিষয়গুলো খুবই জটিল । ক্লজভিজ নিজের ইচ্ছা পূরণে প্রতিপক্ষকে বাধ্য করার জন্য সহিংসতাকেই যুদ্ধ বলে মনে করতেন।

খৃষ্টপূর্ব প্রায় ৫শ বছর আগে চীনের সমর বিষয়ক পন্ডিত ও দার্শনিক সান ঝু আর্ট অব ওয়ার গ্রন্থে বলেছেন, যুদ্ধে জাতির ঐক্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর যুদ্ধে বিজয়ী হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে-(১) যুদ্ধের সময়কাল হতে হবে খুবই সংক্ষিপ্ত; (২) খুবই কম ব্যয়ে, কম জনবলে, কম পরিশ্রমে ও (৩) স্বল্পসংখ্যক আহত-নিহতের মধ্য দিয়ে শত্রুকে বেশি মাত্রায় ক্ষতির মুখে ফেলে কষ্ট প্রদান

আফগান যুদ্ধসহ অন্যান্য যুদ্ধগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সাথে এসব ঐতিহাসিক বক্তব্যগুলো কতোটা মেলে একবার ভেবে দেখুন। তাদের যুদ্ধের রাজনীতি, নিজেদের ইচ্ছা পূরণের মাত্রা কতটুকু, জাতীয় ঐক্য এবং অন্যান্য বিষয়গুলো  বিশ্লেষণেই বোঝা যাবে কেন এই পরাজয়! এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটো বাহিনীর যুদ্ধ ছিল পেশাদার সেনাবাহিনীর যুদ্ধ, অন্যদিকে হিংস্র আফগান তালেবানদের যুদ্ধ ছিল তথাকথিত একটি আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য। এই আদর্শ অন্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও তালেবানদের কাছে এই আদর্শ হচ্ছে পরিপূর্ণ বিশ্বাস এবং আন্তরিকতার ও যে কোন মূল্যে বাস্তবায়নের জন্য।

এক্ষেত্রে যুদ্ধকে তেল সম্পদ লুণ্ঠনসহ অর্থনৈতিক লাভালাভের দৃষ্টিভঙ্গিতেও দেখা যেতে পারে। ভেবে দেখতে হবে- যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধটি কী ছিল অর্থনৈতিক না রাজনৈতিক? এ বিষয়টিও ভেবে দেখতে হবে, যুদ্ধ যে কারণেই হোক- বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সুশাসনের কথা প্রচারের সাথে যুদ্ধের আসল ফারাকটা কোথায়।

 

দুই.

আফগানিস্তান এমনই এক ভূখন্ড, যেখানে বিদেশি আগ্রাসন কিংবা যুদ্ধবাজরা কখনোই জয়ী হতে পারেনি, সব সময়ই পরাজিত হয়েছে।

হাজার হাজার বছরের ইতিহাস এমন সাক্ষ্যই দিচ্ছে। যতোদূর জানা যায়, ৩৩০ খৃষ্ট পূর্বাব্দে মহামতি আলেকজান্ডারও এই ভূখন্ডে খন্ড খন্ড তীব্র লড়াইয়ের মুখে পড়েছিলেন। তিনি এই ভূখন্ডে বেশি সময় থাকেননি। তিনি পারস্য সাম্রাজের দিকে চলে যান। ১৮শ শতকের প্রথমার্ধে ব্রিটিশ, ১৯৯০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে আছে আফগানিস্তান। বলা হয়ে থাকে, এই দেশটিতে সবাই পরাজিত হয়, কেউই জেতে না। যুক্তরাষ্ট্র আবারও তা প্রমাণ করেছে।

 

তিন.

আফগানিস্তানে ২০ বছরের যুদ্ধ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র তার সেনাদের মধ্য সেপ্টেম্বরে ওই দেশটি প্রত্যাহার করার যে পাকাপাকি ঘোষণা দিয়েছে তাতে নানা সমীকরণের জন্ম হয়েছে। সেনা প্রত্যাহারের কারণে  যে সব সমীকরণ দেখা দিয়েছে, তাহলো -

১. জেনেশুনে দুর্বল একটি সরকারের হাতে ক্ষমতা রেখে যাওয়া কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তালেবানদের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করা।

২. এর ফলে ভিয়েতনাম যুদ্ধে চরম ধাক্কা খাওয়ার পরেও আফগানিস্তান থেকেও আবার বড় ধাক্কাটি খেল যুক্তরাষ্ট্র। এতে পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এতদিনের যে দাবি এবং কর্মকান্ড তাতে আবারো ’’কালো দাগ’লেগেছে।

৩. যুক্তরাষ্ট্রের আফগান যুদ্ধ পরিত্যক্ত ঘোষণার মধ্য দিয়ে মধ্য এশিয়ার রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

৪. এতে পাকিস্তান, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।

৫. অনেকে বলে থাকেন, চীন আফগানিস্তানে খনিজ সম্পদ আহরণসহ অন্যান্য মাধ্যমে ব্যাপকভাবে লাভবান হবে। কিন্তু চীনের বড় উদ্বেগ আফগানিস্তানে লাগোয়া তাদের জিনজিয়ান প্রদেশে বসবাসকারী উইঘুর মুসলমান বিদ্রোহীদের নিয়ে। চীনের বড় চিন্তা আফগান সীমান্তে ওয়াখান করিডোর দিয়ে তালেবানদের আনাগোনা বেড়ে যেতে পারে। তবে তালেবান মুখপাত্র এমন ভাষায় আশ্বাস দিয়েছেন যে, তারা উইঘুর মুসলমানদের সাহায্য সহযোগিতা করবে না। কিন্তু তাদের এই আশ্বাস বাস্তবে কতটা বিশ্বাসযোগ্য? এছাড়া মধ্য এশিয়ার তুর্কিমিনিস্তান, কাজাকিস্তান এবং উজেবিকিনিস্তানের ওপরে তালেবান প্রভাব বিস্তার নিয়েও চীন যেমন চিন্তিত, রাশিয়াও চিন্তিত রয়েছে। বড় ধরনের উদ্বেগেও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরে আফগানিস্তান যুদ্ধকে পরিত্যক্ত ঘোষণা এবং সাথে সাথে পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপোড়েন ওয়াশিংটনকে মধ্য এশিয়ায় তাদের প্রভাব কমতে থাকার বিষয়ে ভাবিয়ে তুলেছে। গত ৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণে উজবেকিস্তান ও তাজাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ওয়াশিংটন সফরে আমন্ত্রণ জানানো এবং ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কাজাকিস্তান নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন।

(আমীর খসরু, প্রধান নির্বাহী, স্টাডি গ্রুপ অন রিজিওনাল এ্যফেয়ার্স, ঢাকা)

অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর