× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জাতীয় পতাকা বুকে নিয়ে মরতে চাই’

বাংলারজমিন

মতিউল আলম, ময়মনসিংহ থেকে
২৫ জুলাই ২০২১, রবিবার

‘আমি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর কিছুই চাই না। শুধু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি চাই। লাল-সবুজের  জাতীয় পতাকা বুকে জড়িয়ে মরতে চাই। এটাই আমার জীবনের শেষ আবেদন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। একটি সনদপত্রও পেয়েছিলাম। বৃষ্টির পানিতে ভিজে সনদপত্রটি নষ্ট হয়ে যায়। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হই।
এক সময় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারের কাগজে নাম তোলার বিষয়টি তেমন একটা গুরুত্বও দেয়া হয়নি। আজ মনে হচ্ছে অনেক ভুল করে ফেলেছি। এলাকার পাড়া প্রতিবেশী সবাই জানে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছি। রেল ব্রিজ ও সড়ক সেতু উড়িয়ে দিয়েছি। দিনের বেলায় মাছ ধরার জেলে সেজে ও কামলা দিয়ে রাতের বেলায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে অপারেশন চালিয়েছি। যুদ্ধ শেষে অস্ত্র জমা দিয়েছি।’ আবেগতাড়িত কথাগুলো বলছিলেন জেলার নান্দাইল উপজেলার কাশিনগর গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব আবুল হোসেন। তিনি বলেন, স্মরণ শক্তি কমে গেছে। অনেক কিছু ভুলে গেছি। ১৯৬৬ সালে আমি নান্দাইল থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলাম। জননেতা রফিক উদ্দিন ভুঁইয়ার নেতৃত্বে পাকিস্তানবিরোধী ৬ দফা আন্দোলন করেছি। বয়সে তরুণ ৭০-এর নির্বাচনে রফিক উদ্দিন ভুঁইয়ার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা সভায় বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কালীগঞ্জ বাজারে এসেছিলেন। সেই বাজার থেকে আমি ও ১০/১২ জন উনার সঙ্গে পায়ে হেঁটে নরসুন্দা নদী পার হয়ে নির্বাচনী জনসভায় যোগদান করি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ’৭০ সালের নভেম্বর মাসে মুসুল্লি মাঠে বিকাল ৪টায় জনসভায় আসার কথা ছিল, তিনি আসেন রাত ৮টার দিকে। সেই সভায় বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলাম ‘স্যার আমরা জয়বাংলা বলতে পারি না’। তিনি বলেছিলেন- তাহলে কি ‘আমরা ক্ষয় বাংলা বলবো। জয় বাংলা বলতে হবে।’ তখন আমি চুপ হয়ে যাই। ’৭০-এর ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ঢাকায় জনসভার ডাক দিলেন। সেই জনসভায় সকাল ৮টায় যোগদান করি। সেইদিন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। পরদিন ৮ই মার্চ নান্দাইল ফিরে এসে কালীগঞ্জ বাজারে কাচারি থেকে সন্ধ্যার পর ৫০ রাউন্ড গুলিসহ অস্ত্র ছিনিয়ে  নেই। যার অস্ত্র নং ১৭৮৭২। তারপর প্রাক্তন সৈনিক শামসুদ্দিন খানের কাছে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। পরে বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর হায়দার সাহেবের নেতৃত্বে আমরা ১০/১২ জন পাক বাহিনীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে প্রথমে নরসুন্দা নদীর রেল ব্রিজ ও পরে তারঘাট বাজারের ব্রিজ উড়িয়ে দেই। পরবর্তীতে হবিগঞ্জ মাধবপুর তেলিয়াপাড়া চা বাগানে ১৯৭১ সালের ৪ঠা এপ্রিল শপথ অনুষ্ঠানে শপথ গ্রহণ করি। মেজর আবু তাহের ছিল আমার সেক্টর কমান্ডার। সেখানে শপথবাক্য পাঠ করান মেজর জেনারেল আতাউল গণী ওসমানী। কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর আমার গ্রুপ কমান্ডার হেলাল উদ্দিন বিএসসি’র সঙ্গে যোগদান করি। বিজয় হওয়ার আগ পর্যন্ত ওনার সঙ্গেই কাজ করি। ১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৮ই ডিসেম্বর গ্রুপ কমান্ডার হেলাল উদ্দিনের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে বাড়ি ফিরি। সে সময় মেজর জেনারেল আতাউল গণী ওসমানী স্বাক্ষরিত একটি সনদপত্র আমাকে প্রদান করেন। ’৮০ সালে বৃষ্টির পানিতে ভিজে সনদপত্রটি নষ্ট হয়ে যায়। পরে সনদপত্রটি সংগ্রহে কিছু চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। সহপাঠী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কেউ কেউ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন ও স্বাধীনতার পর সহযোদ্ধা মোতাহার ও খলিলুর রহমানসহ অনেকেই মারা গেছেন। আমার কোনো ছেলে সন্তান নেই। স্ত্রী ও ৪ মেয়ে সন্তান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। মৃত্যুর আগে যেন শুধু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাই। এ ব্যাপারে স্থানীয় কাশিনগর গ্রামের বিমল চন্দ্র পাল (৬১) বলেন, ১১ বছর বয়স থেকে জানি আবুল ভাই মুক্তিযোদ্ধা। একই গ্রামের শ্রী সুরেন্দ্র চন্দ্র বিশেষ শর্মা (৬৫), আবুল মুমিন (৭৭), আঃ খালেক ভুয়া সুরুজ (৫৯), ইউপি সদস্য আবদুল কাইয়ুম (৬২), আবুল আমিন (৬৭) ও আঃ হাকিম (৬৫) সবাই বলেছেন, আবুল হোসেন একজন অস্ত্রধারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তবে  আবুল হোসেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ৫০ বছরেও স্বীকৃতি না পাওয়ায় তারা দুঃখ প্রকাশ করেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর