কয়েক বছরের টানা বিপর্যয়ের পর এবার চামড়ার দাম কিছুটা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছিল। পশু কোরবানি দেয়ার পর থেকেই রূপগঞ্জের মৌসুমি ব্যবসায়ী আর ফড়িয়ারা কাঁচা চামড়া সংগ্রহ শুরু করেছিলেন। ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা গতবারের চেয়ে একটু বেশি দামে চামড়া কিনবেন বলে প্রত্যাশা ছিল তাদের। দামও বাড়ানো হয়েছিল গত বছরের তুলনায়। কিন্তু গতবারের চেয়ে এ বছর বড় লোকসান গুনতে হয়েছে রূপগঞ্জের অন্তত ৫ শতাধিক মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার ২২২টি গ্রামে এ বছর অন্তত ২০ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। প্রতিটি গ্রামে ২/৩ জন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী সেগুলো ক্রয় করেছেন। আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে গতবারের চেয়ে একটু দাম বাড়িয়ে কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল এ বছর।
লবণজাত প্রতি বর্গফুট গরু ও মহিষের চামড়ার দাম ঢাকায় ৪০-৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাহিরে ৩৩-৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ঢাকার উপকণ্ঠে হওয়ার কারণে রূপগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ঢাকার দামেই পশুভেদে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত চামড়া কিনেছিলেন। কিন্তু বাজার অস্থিরতায় সেগুলো বিক্রি করেছেন অর্ধেক দামে। আবার অনেক এলাকার ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে রেখে দিয়েছেন। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রূপগঞ্জের চামড়া আড়ত ট্যানারিতে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে নামে মাত্র দামে। গত বছরগুলোর তুলনায়ও এবার চামড়া বিক্রি করা হয়েছে চারভাগের এক ভাগ দামে। চামড়ার অন্যতম বড় বাজার উপজেলার গোলাকান্দাইল সাওঘাট এলাকার ব্যবসায়ী রাধা চন্দ্র দাস জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও তিনি চামড়ার ব্যবসা করেন। সরকার নির্ধারিত মূল্য না পেয়ে আড়াই লাখ টাকা তিনি লোকসানে পড়েছেন। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট তৈরি করে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে তাদের বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ করেন রাধা চন্দ্র দাস। এ ধরনের অভিযোগ সাওঘাট এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী বিধূ ভুষণ চন্দ্র দাস, চন্দন চন্দ্র দাস, দিন চন্দ্র দাস, জগদিস চন্দ্র দাস ও নিতীন্দ্র চন্দ্র দাসসহ আরও অনেকের। সে এলাকার ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে সাড়ে ৪ হাজার চামড়া লবণজাত করে রেখে দিয়েছেন। উপজেলার তারাবো পৌরসভার রূপসী গ্রামের মৌসুমি ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া জানান, আগে এলাকার চামড়া কিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে জমা করলেই ট্যানারি থেকে লোক এসে নিয়ে যেতো। ঈদের এই মৌসুমে ভালো একটা উপার্জন হতো। কিন্ত গত ২/৩ বছর চামড়া কেনার পর ক্রেতা না পেয়ে ঢাকায় নিয়ে যান তিনি। কেনা দামের অর্ধেকের কম মূল্যে সেগুলো বিক্রি করে লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়েছিলেন। এ বছর সরকার পূর্ব থেকে মূল্য নির্ধারণ করায় ভেবেছিলেন কিছুটা লাভ হতে পারে। কিন্তু এবার গত বছরের তুলনায় আরও বেশি লোকসান গুনতে হয়েছে তাকে। আরও এক মৌসুমি ব্যবসায়ী আনোয়ার আলী জানান, উপজেলার সব গ্রামেই ২/৩ জন করে মৌসুমি ব্যবসায়ী আছে। তার ধারণা সবাই এবার চামড়া কিনে অন্তত অর্ধকোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ চামড়ায় কোনো সিন্ডিকেট নেই দাবি করে মানবজমিনকে বলেন, ব্যবসায়ীদের আগেই বলা হয়েছিল সতর্ক হয়ে চামড়া কেনার জন্য এবং ঈদের দিন রাত ১১টার মধ্যে আড়তে অথবা ট্যানারিতে চামড়া পৌঁছে দেয়ার জন্য। এ ছাড়া মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যেন সরকারের বেধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া না কেনেন সে ব্যাপারে বারবার সতর্ক করা হচ্ছিল। প্রতিটি আড়তে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ চাহিদা থাকে। সে চাহিদা পুরনের পর তারা কমদামে কিনতে শুরু করেন। তাছাড়া সময়মতো লবণ না দেয়া, বৃষ্টি ও গরমের কারণেও অনেক সময় চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়। এ প্রসঙ্গে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ নূসরাত জাহান বলেন, রূপগঞ্জে কোনো চামড়া ব্যবসায়ীর কোনো সিন্ডিকেট আছে বলে আমার জানা নেই। নানা প্রতিকুলতায় চামড়ার ন্যায্য দাম পায়নি বিক্রেতারা।