ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে সংস্কৃতি অঙ্গনে। শোকে স্তব্ধ তার সহকর্মীরাও। সেই সহকর্মীদের কয়েকজন স্মৃতিচারণ করেছেন ফকির আলমগীরকে নিয়ে। তাই তুলে ধরা হলো-
তিমির নন্দীস্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে কলকাতার নারিকেল ডাঙায় শরণার্থী শিল্পী গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলাম আমরা। সেখানে ফকির আলমগীরের সহশিল্পী ছিলাম আমি, নাট্যকার-অভিনেতা মামুনুর রশীদসহ অনেকে। ফকির আলমগীর ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো বাঁশি বাজাতো। আমাদের অনুষ্ঠানেও সে বাঁশিই বাজাতো তখন। গীতিনাট্যের চিত্রনাট্য লিখতেন অভিনেতা, নাট্যকার মামুনুর রশীদ, বিপ্লব দাস।
সুরারোপ করতেন অনুপ ভট্টাচার্য। সেই সমস্ত গীতিনাট্য নিয়ে আমরা কলকাতা ও কলকাতার আশপাশে সীমান্তে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করেছি। অনুষ্ঠান করে যে পারিশ্রমিক পেতাম সেটা মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ তহবিলে দান করেছি। কলকাতার বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠানে যেতাম, ফকিরের সঙ্গেই থাকতাম। সেই সময় এ শিল্পীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা গাঢ় হয়েছে। আমার সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিল।
ফেরদৌস ওয়াহিদসবার সঙ্গে ফকির আলমগীরের বন্ধুসুলভ ভাব ছিল। প্রাণবন্ত একজন মানুষ। ও আমার বন্ধু ছিল। আর বাংলাদেশের এমন একজন গায়ক যাকে আমি বাংলার সংগীতের বাঘ বলি। ফকিরের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা গাঢ় হয় ওর বিয়ের সময়। মজার বিষয় হচ্ছে, ওর মাথায় বিয়ের পাগড়িটা আমিই পরিয়েছিলাম। এমন হাজারো গল্প রয়েছে আমাদের। গণসংগীত বলতে যেটা বোঝায়, সে জায়গায় তেমন কেউ কাজ করেনি। কিন্তু ও করেছে। জায়গাটা কেউ ধরে রাখতে পারেনি, আবার চেষ্টাও করেনি। ও একাই চালিয়ে নিয়ে গেছে। সে গণসংগীতটাকে ধরে রেখেছিল আমৃত্যু। আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে রাখলাম, আজ থেকে বাংলাদেশ গণসংগীতহীন হয়ে গেল। সংগীতের এই অসাধারণ ধারাটিতে শূন্যতা তৈরি হলো।
হানিফ সংকেতমানবিক গুণাবলীতে মহান ফকির আলমগীরের অকস্মাৎ মৃত্যু সংবাদে স্বজন হারানোর কষ্ট অনুভব করছি। সম্প্রতি তার অসুস্থতার খবরে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। নিয়মিত খোঁজখবরও রাখছিলাম। ভাবীর সঙ্গে কথা হয়েছিল। বলেছিলেন-এখন কিছুটা স্ট্যাবল, দোয়া করেন। কিছুটা আশার আলো দেখেছিলাম। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনার কাছে পরাজিত হয়ে চিরবিদায় নিলেন স্বাধীন বাংলা বেতারের এই শব্দসৈনিক-বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ফকির আলমগীর। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে পাশে থেকে তিনি যেমন মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন, তেমনি শিল্পীদের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সবার সুখে-দুঃখে তিনি পাশে থেকেছেন। তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমার অনেক আড্ডার ও গল্পের স্মৃতি। মনে পড়ে আমার অনেক অনুষ্ঠানে উপস্থিতির স্মৃতিময় সময়গুলোর কথা। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
কনকচাঁপাএত টগবগে যুবকের প্রাণশক্তিওয়ালা মানুষটা করোনার ভয়াল থাবায় পর্যুদস্ত হলেন! আমি শোকে নিমজ্জিত! এই দুঃখ প্রকাশের ভাষা আমার নেই। সারাজীবন গণসংগীত নিয়ে এক রকম যুদ্ধ করে গেছেন। যুদ্ধ করতে করতে নিজের একটা অটল পাহাড় সমান দুর্গম দুর্গ তৈরি করেছিলেন, করতে পেরেছিলেন। তিনি হয়ে উঠেছিলেন গণমানুষের মুখপাত্র। তিনি ছিলেন আমাদের গণসংগীতের প্রাণপুরুষ। আমি ওনার শোক সন্তপ্ত পরিবারের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করছি, তারা যেন এই ভয়াবহ শোক সইবার শক্তি অর্জন করেন।