ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১০টা। একদল নারী পুরুষের জটলা। দেখে মনে হবে তারা কারও জন্য অপেক্ষা করছে। গেট দিয়ে কোনো রোগী যেতে দেখলে পিছু নেয় তারা। সংঘবদ্ধ অন্তত ২৫ দালাল সক্রিয় রোগী ভাগাতে। তাদের কাছে হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষও অসহায় দর্শকের মতো। রোগী নিয়ে টানাটানির ঘটনাও ঘটছে অহরহ। রোগীর ভর্তি থেকে শুরু করে ওষুধ কিনতে এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে প্রতিদিন দালালের ফাঁদে পড়ছেন অন্তত দেড় শতাধিক রোগী ও তাদের স্বজন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ তার চারপাশে এসব দালালদের ঘুরঘুর করতে দেখা যায় ২৪ ঘণ্টাই। ন্যায্যমূল্যে ওষুধ কিনে দেয়ার কথা বলে রোগীর স্বজনদের হয়রানির অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী নারী পুরুষ। দালাল ছাড়াও হাসপাতালের বহি:বিভাগের চিকিৎসকদের চেম্বারে থাকেন অন্তত অর্ধশত কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ। যারা নিজেদের কোম্পানির ওষুধ লিখতে চিকিৎসকে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ হলো দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান অবস্থা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মচারী জানান, হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে কম করে হলেও ২০/২৫ জন দালাল সক্রিয় কাজ করছেন। তাদের প্রধান কাজই হলো রোগী আসলে তাদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বাইরের প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া।
গত মঙ্গলবার সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বড় বোনকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছেন এক নারী। সিএনজি থেকে নামার পর এক দালাল তার কাছে গিয়ে কি যেন বলাবলি করছেন। পরে এ প্রতিবেদক ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন তার নাম রহিমা বেগম। তিনি মুরাদনগর উপজেলার গুঞ্জুর গ্রামের বাসিন্দা। বড় বোনকে নিয়ে এসেছেন চিকিৎসকের কাছে। তার কাছে ছুটে আসা দালাল কি বলেছেন জানতে চাইলে রহিমা বেগম জানান, ‘তিনি এসে জিজ্ঞাসা করেছেন কোন ডাক্তার দেখাবেন’? কী সমস্যা? তার কাছে ভালো ডাক্তার আছে এসব আর কী। ফতেহাবাদ ইউপির চাঁনপুর গ্রামের মো. নাজমুল হাসান নামে এ ভুক্তভোগী বলেন, কোম্পানির লোকেরা চিকিৎসকে জোর করে তাদের কোম্পানির ওষুধ লেখাচ্ছেন। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পুরো দৃশ্য দেখেছি। চিকিৎসক কোন কোম্পানির ওষুধ লেখবেন তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান। এ ব্যাপারে দেবিদ্বার সদরের প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ময়নাল হোসেন ভিপি বলেন, দালালরা কোনো হাসপাতালের বেতনভুক্ত কর্মচারী নন। তারা রোগীদের আত্মীয়স্বজন সেজে রোগী নিয়ে আসেন। তবে এ কাজগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আহমেদ কবীর বলেন, আমাদের স্টাফ যারা রয়েছেন তারা অনেকটাই দালালদের কাছে দুর্বল। দালালরা রাজনৈতিক পরিচয়ে উৎপাত করছে বেশি। ইতিমধ্যে ৮ জন পোশাকধারী আনসার নিয়োগের চাহিদা দেয়া হয়েছে। হাসপাতালে দালাল ও ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেভিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে ২০/২৫ জন দালাল সক্রিয়। তাদের জেল-জরিমানা করেও থামানো যাচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাকিব হাসান বলেন, কয়েক দফায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দালাল ধরে জেল দিয়েছি। কোনো ভুক্তভোগীর অভিযোগ পেলে আবার অভিযান চালানো হবে।