প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। তাও নিজেদের মাটিতে। এবারের অজি দলে নেই তারকা ক্রিকেটার ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, প্যাট কামিন্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, কেইন রিচার্ডসন, ড্যানিয়েল স্যামস ও ঝাই রিচার্ডসনের মতো পরিচিত মুখগুলো। শেষ মুহূর্তে ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে গেছেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চও। এতেই বাংলাদেশের জন্য দারুণ সুযোগ দেখছেন এদেশের ক্রিকেটভক্তরা। কিন্তু বিপদ তো টাইগারদেরও কম নয়। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল খেলতে পারছেন না। ব্যাটিং ভরসা মুশফিকুর রহীম আছেন দলের বাইরে।
তরুণ প্রতিভা লিটন দাস ও দলের সেরা পেসার মোস্তাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েজনের ইনজুরি নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে! এক কথায় একেবারে তরুণ একট দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মোকাবিলা করতে হবে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। এমন কঠিন বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠছে পারবে তো বাংলাদেশ! এ নিয়ে দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে নিজের মতামত ও বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন কোচ, বিসিবি’র সাবেক গেম ডেভালপমেন্ট ও হাই পারফরম্যান্স ম্যানেজার নাজমুল আবেদিন ফাহিম। বর্তমান তিনি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপির) ক্রিকেট উপদেষ্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। তার কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই বাস্তবতায় টাইগারদের সুযোগ কতটা দেখছেন?
ফাহিম: অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন মূল খেলোয়াড় হয়তো আসবে না কিন্তু যারা আসবে তারাও টি-টোয়েন্টি খেলতে অভ্যস্ত। যেহেতু অস্ট্রেলিয়া আমি ধরে নিতে পারি ভালো মানের একটা দলই আসছে। এমনিতে আমাদের অতীত টি-টোয়েন্টি রেকর্ড ভালো না। পাশাপাশি আমাদেরও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন প্লেয়ার থাকছে না এবং যারা আছে তাদেরও কেউ কেউ ফর্মে নেই, ফর্ম ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে। তো আমাদের দলের কথা যদি বলি, খুব একটা ভালো অবস্থায় যে আছে তা না। সবকিছুতেই একটা সুযোগ তো থাকে। এখানে সুযোগ হলো গুরুত্বপূর্ণ যারা খেলবে না তাদের জায়গা যারা নেবে তাদের যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আমার মনে হয় খুব চাপ না নিয়ে খেলাটাই ভালো হবে। আমরা যেন ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলি।
প্রশ্ন: বোলিং ও ব্যাটিং বিভাগের ওপর কতটা ভরসা রাখা যেতে পারে?
ফাহিম: সাকিব ও মেহেদী আমাদের বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দেয়। পাশাপাশি রিয়াদও টি-টোয়েন্টি খুবই কার্যকর। মোস্তাফিজ সুস্থ কিনা সেটা আমি নিশ্চিত নই। সাকিবের কথা যদি বলেন সে কিন্তু ব্যাট হাতে পুরোদমে ছন্দে ফেরেনি। সবকিছু মিলিয়ে আমরা কিন্তু একটা ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমরা আমাদের সেরা দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলতে পারছি না। পেস বোলিং তো আমাদের সামপ্রতিক সময়ে কিছুটা ভালো করেছে। মোস্তাফিজ না খেলতে পারলেও শরিফুল তার জায়গায় মোটামুটি ভালো করেছে। তাসকিন ভালো বল করেছে, টি-টোয়েন্টিতে সাইফুদ্দিন ভালো। বোলিং আমাদের খারাপ হবে না। কিন্তু ব্যাটিং কেমন করতে পারবো সে ব্যাপারে দ্বিধা আছে। টি-টোয়েন্টিতে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করাটা এত সহজ নয়। যেহেতু খুব চাপের মধ্যে খেলা হয়। তবে যেটা দরকার টপ অর্ডারে পার্টনারশিপ। জিম্বাবুয়েতে প্রথম ম্যাচে দুই ওপেনার ভালো করলো, পরের ম্যাচে এরা দুজনই আবার খারাপ করলো।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের রণ কৌশল কেমন হওয়া উচিত?
ফাহিম: টি-টোয়েন্টিতে খেলাটা অন্যরকম। আমি যদি বলি অস্ট্রেলিয়াকে টেস্ট হারানো কঠিন, ওয়ানডে হারানো কিছুটা সহজ, আর টি-টোয়েন্টিতে আরও সহজ। এই ফরম্যাটে একজন ভালো খেলে ফেললে কাজটা সহজ হয়ে যায়। আমাদের সেভাবে ইতিবাচক মানসিকতার হতে হবে। তুলনামূলকভাবে অস্ট্রেলিয়া শক্তিশালী দল। আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে সুযোগের, যখনই সুযোগটা পাবো কাজে লাগাতে হবে। একটা ভালো পার্টনারশিপ হলে তাদেরকেই রান করতে হবে, বল হাতে সেদিন অন্য কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হল ফিল্ডিং যেন আমাদের স্ট্যান্ডার্ড মানের নিচে না যায় কোনোভাবে। এই ছোট ব্যাপারই পরে বড় পার্থক্য হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। একটা পজেটিভ মাইন্ড নিয়ে থাকতে হবে। আমরা হারলেও যেন সেরা খেলাটা খেলতে পারি।
প্রশ্ন: সাকিব-রিয়াদের বাড়তি দায়িত্ব কতটা?
ফাহিম: ব্যাপারটা কিন্তু এমন না যে সিনিয়র বলেই তাদেরকে বেশি দায়িত্ব নিতে হবে, অন্যদের চেয়ে বেশি চার, ছয় মারতে হবে। প্রতেকের খেলার একটা ধরন আছে, প্রত্যেকের খেলার একটা ক্যাপাসিটি আছে। সে সক্ষমতার বাইরে গিয়ে যদি কিছু করতে চায় তাহলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। সুতরাং যার যে সামর্থ্য আছে সে অনুযায়ী তাকে খেলতে হবে, অবদান রাখতে হবে। দল হিসেবে খেলতে হবে। আমার ধারণা জুনিয়র অনেকেই আছে যারা সিনিয়রদের চেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটে খেলতে পারবে। তবে এটা সত্যি যে কোনো বিপদ, বিপর্যয় এলে সিনিয়ররাই বেশি রেসপন্স করবে। সবমিলিয়েই একটা দল, যে যতটুকু পারে অবদান রাখবে, নিজের জায়গা থেকে।