× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পেগাসাস নিয়ে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা দাবি

শেষের পাতা

কাজী সোহাগ
২৬ জুলাই ২০২১, সোমবার

তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দানব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে পেগাসাস স্পেসওয়্যার। ইসরাইলের এনএসও গ্রুপের তৈরি ফোনে আড়ি পাতা বিষয়ক প্রযুক্তি পেগাসাস। বিশ্বে ভয়াবহ রকম মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে এমন সব দেশ বা সেখানে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিভাগগুলো ব্যবহার করছে এই প্রযুক্তি। বেশকিছু দেশে তা ব্যবহার করা হচ্ছে বা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এমন ইঙ্গিতও মিলেছে। ফলে অপরাধ তদন্তের বৈধ একটি হাতিয়ার এই প্রযুক্তি, এমন দাবি করলেও এর ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। এতে আছে বাংলাদেশের নাম। যদিও ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিষয়টি নাকচ করেছেন। তিনি বলেন, যারা এ তালিকা প্রকাশ করেছে, তারা কি যাচাই-বাছাই করেছে? তারা কি বলতে পারবে, বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান কিনেছে?’ তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান এমন কিছু কেনেনি।
তবে বেসরকারি খাতের বিষয়টি তার জানা নেই। তবে মন্ত্রীর এ বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয় বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। তারা পেগাসাস নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে বিষয়টি সম্পর্কে সরকারের পরিষ্কার ব্যাখ্যা চায় এসোসিয়েশন। আজ অথবা আগামীকালের মধ্যে স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। মানবজমিনকে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেগাসাস নিয়ে যা হচ্ছে তাতে আমরা উদ্বেগের মধ্যে আছি। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন যেহেতু গ্রাহকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে তাই এই বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এই পেগাসাস স্পেসিফায়ার প্রযুক্তি এর গ্রাহক কেবল সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণ ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে এই প্রযুক্তি বিক্রয়ের নিয়ম নেই। তিনি বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিশ্বের প্রথম ১৭টি প্রথম সারির গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দেখা যায় বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, অধিকারকর্মী ছাড়াও সরকারি বেসরকারি ঊর্ধ্বতন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ওপর নজরদারি করছে পেগাসাস স্পেস। যদিও প্রথম তথ্যের মধ্যে ১০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নেই। তবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের নাম রয়েছে। মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট যারা এই অনুসন্ধানের পার্টনার তারা বলছে, বাংলাদেশেও রয়েছে। আমরা জানি ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এমনকি বছরের শুরুর দিকে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে ইসরাইল থেকে ইমচি ক্যাচার কিনেছে বাংলাদেশ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ করেছিল বাংলাদেশ সরকার। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই এমনটি প্রচারণা চালানো হয়। তবে পেগাসাস স্পেসওয়ারের সংবাদ হালকাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, এতে দেশের নিরাপত্তা, ভাবমূর্তি এবং সংবিধান অক্ষুণ্ন রাখার চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কারণ সংবিধানের ৪৩(খ) ধারায় প্রত্যেক নাগরিকের তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চয়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্য দেশ থেকে আমাদের দেশের সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী বা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে কিনা তা সরকারকে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাই। এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবেই পরিষ্কার করতে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধ করছি। প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা জানান, এটি সাধারণ ‘স্পাইওয়্যার’ নয়। কানাডার সিটিজেন ল্যাব জানাচ্ছে, পেগাসাস আসলে ভার্চ্যুয়াল জগতে সম্পূর্ণ একটি স্পাইং সিস্টেম, যেটি নিজস্ব অপারেটর, নেটওয়ার্ক এবং ক্লাউড সিস্টেমের মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এটা এতটাই ব্যয়বহুল এবং সংবেদনশীল যে, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার বাইরে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এটির ব্যবহার সম্ভব নয়। ১৬টি সংবাদমাধ্যমের গবেষণা অনুসন্ধান থেকে বের হয়ে এসেছে, পেগাসাস প্রকৃতপক্ষে ব্যবহৃত হচ্ছে ৪৫টি রাষ্ট্রে, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাতেই। তবে যেসব দেশে পেগাসাস ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো সর্বক্ষেত্রে সেই দেশই যে করছে তা নয়, অন্য দেশ থেকেও আর এক দেশের ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ওপর নজর রাখা হচ্ছে পেগাসাসের মাধ্যমে। বিশ্বের ১৪টি দেশের রাষ্ট্র কিংবা সরকার প্রধানও পেগাসাসের মায়াজালের ভেতরে আছেন, সেটিও উঠে এসেছে পেগাসাস গবেষণায়। প্রযুক্তিবিদরা জানান, পেগাসাস মূলত ব্যক্তির স্মার্টফোন দখল করে নেয়। সাধারণভাবে যেসব হ্যাকিং টুলস আছে, সেগুলো সাধারণত গ্যালারি, মেসেজ অ্যাপ, কল কনট্যাক্টস রেকর্ডস চুরি করে। মেসেঞ্জার থেকে অন্যদের অযাচিত মেসেজ পাঠিয়ে বিপদে ফেলে। কিন্তু পেগাসাসের চরিত্র ভিন্ন। অন্যান্য হ্যাকিং টুল একটি ফিশিং লিঙ্ক বা প্যাসেট ফাইলের মাধ্যমে ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু পেগাসাসের নিজস্ব নেটওয়ার্কের কারণে ‘ওটিএ’ কিংবা অন দ্য এয়ার প্রযুক্তির মাধ্যমে ফ্ল্যাশ মেসেজ হিসেবেও প্রবেশের ক্ষমতা রাখে। কারও স্মার্টফোনে কোনো ফ্ল্যাশ মেসেজ এলে সেটি ওকে না করা পর্যন্ত স্ক্রিনে আর কোনো কাজ করা যায় না। এ কারণে অন্যান্য হ্যাকিং টুলের মতো পেগাসাসকে উপেক্ষা করা যেকোনো স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর পক্ষে সহজ নয়। এটি একটি স্মার্টফোনে প্রবেশের পর তার মাইক্রোফোন, স্পিকার, ক্যামেরার দখল নিয়ে নেয়। পাশাপাশি গ্যালারি, কনট্যাক্টস, মেসেজের দখল তো নেয়ই ক্যামেরা, স্পিকার এবং মাইক্রোফোনের দখল নেয়ার কারণে পেগাসাস দখল করা স্মার্টফোনের যেকোনো ধরনের কথোপকথন রেকর্ড করতে পারে। ক্যামেরা ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তের ভিডিওচিত্র ধারণ করতে পারে। পাশাপাশি অপারেটিং সিস্টেম দখলে থাকার কারণে স্ক্রিনশটও নিতে পারে। কেউ যদি হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জারের মতো অ্যান্ড টু অ্যান্ড এনক্রিপটেড অ্যাপও ব্যবহার করেন, সেই এনক্রিপশন না ভেঙেও পেগাসাস মাইক্রোফোন ও স্পিকার ব্যবহার করে কথোপকথন রেকর্ড করতে পারে, স্ক্রিনশট নিয়ে মেসেজের সবকিছু দেখে ফেলতে পারে। যেহেতু পেগাসাস একটি স্বতন্ত্র নেটওয়ার্ক, অপারেটিং সিস্টেম এবং ক্লাউড সার্ভিসের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, সে কারণে দখল করা স্মার্টফোনের কল রেকর্ড, ভিডিওসহ সব তথ্য সেই অপারেটরের নেটওয়ার্ক দিয়ে সোজা নিজস্ব ক্লাউড সার্ভারে জমা হচ্ছে। পেগাসাস পরিচালনায় থাকা একাধিক অপারেটর নিজেদের মধ্যে সেই ক্লাউড সার্ভার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভাগাভাগি করছে। ফলে যেকোনো মুহূর্তেই দখল করা স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য দুনিয়ার সামনে প্রকাশ হয়ে পড়ারও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। কোনো কোনো দেশে এই নজরদারি করা হয়েছে তা পরিষ্কার জানা না গেলেও সবচেয়ে বেশি ফোনকলে আড়ি পাতা হয়েছে ১০টি দেশে। এসব দেশ হলো আজারবাইজান, বাহরাইন, হাঙ্গেরি, ভারত, কাজাখস্তান, মেক্সিকো, মরক্কো, রুয়ান্ডা, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। কী পরিমাণ মানুষ এর শিকারে পরিণত হয়েছেন, তার প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কেউ কেউ বলছেন, এ সংখ্যা অনেক বেশি। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো তুলকালাম কাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। কোথায় কোনো রাজনীতিক ফেঁসে যাচ্ছেন, কোনো প্রধানমন্ত্রীর গোপন কথোপকথন এর মধ্য দিয়ে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে শিরদাঁড়া বেয়ে নামছে হিম আতঙ্ক।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর