× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

টিকা নিয়েও রক্ষা পেলেন না আনোয়ারা, গর্ভেই সন্তান মারা গেছে সানজিদার

প্রথম পাতা

রুদ্র মিজান
২৬ জুলাই ২০২১, সোমবার

করোনার টিকা নিয়েছিলেন ষাট বছর বয়সী আনোয়ারা বেগম। তারপরও করোনা থেকে রক্ষা পেলেন না। শেষ পর্যন্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হয়েছে তাকে। পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক পাঁচ সদস্যের মধ্যে আনোয়ারা সহ চার জনই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পুত্রবধূ সানজিদা সুলতানা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ধানমণ্ডির পপুলার মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গর্ভেই মারা গেছে তার সন্তান। সন্তান মৃত্যুর তিনদিন পর গত শনিবার রাতে মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি। করোনায় আক্রান্ত সানজিদার শরীর সার্জারির উপযোগী না হওয়ায় মেডিসিন ও ইনজেকশনের ওপর জোর দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
একইভাবে করোনায় আক্রান্ত এই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম যুবক সানজিদার স্বামী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম বাবু। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন গ্রামের বাড়ি থেকে বেড়াতে আসা আমিনুল ইসলাম বাবুর বড় ভাইয়ের স্ত্রী। ওই পরিবারের করোনামুক্ত একমাত্র ব্যক্তি মৃত আনোয়ারার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আব্দুল মান্নান শিকদার।

শনিবার আফতাব নগরের ওই পরিবারের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে হৃদয়বিদারক এক দৃশ্যের। বিছানায় মায়ের লাশ। পাশে করোনা আক্রান্ত ছেলে আমিনুল ইসলাম বাবু ও তার বাবা মান্নান শিকদার। চিৎকার করে কাঁদছেন তারা। স্বজনরা দূরে দাঁড়িয়ে দেখছেন সেই করুণ দৃশ্য। হাসপাতাল থেকে কল এসেছে, ব্যথায় কাতরাচ্ছেন সানজিদা। তার গর্ভের সন্তান তিনদিন আগে মারা গেলেও তা বের করা হয়নি তখনও। ঝুঁকিতে রয়েছেন তিনি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় প্লাজমা দেয়া হয়েছে সানজিদাকে। তবু করোনামুক্ত হতে পারেননি। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমেছে। সব মিলিয়ে জটিল অবস্থা। চিকিৎসকরা সময় নিচ্ছেন। অন্তত সানজিদাকে যেন সুস্থ রাখা যায়, প্রচেষ্টা তাদের। শেষ পর্যন্ত শনিবার রাতে মৃত সন্তান প্রসব করেন সানজিদা।

গতকাল কথা হয় আব্দুল মান্নান শিকদারের সঙ্গে। তিনি জানান, টিকা দিয়ে রক্ষা করা গেল না আনোয়ারাকে। গত রমজান মাসে মহাখালী সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে করোনার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছিলেন তিনি। একই সময়ে টিকা নিয়েছেন আব্দুল মান্নান শিকদারও। করোনা আক্রান্ত স্ত্রী আনোয়ারার সেবাযত্ন করলেও মান্নান শিকদার করোনায় আক্রান্ত হননি। টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন তাদের সন্তান আমিনুল ইসলাম বাবু। তিনিও আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত মায়ের লাশ দাফন করা হয়েছে সন্ধ্যায়। রাতে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে সন্তানের লাশ। সব মিলিয়ে পুরো পৃথিবী অসহ্য লাগছে আমিনুল ইসলাম বাবুর কাছে। স্বজনদের অনেকেই ফোনে খোঁজ নিচ্ছেন। করোনা আতঙ্কে বাসামুখো হচ্ছেন না তারা।

শনিবার মায়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনে ছুটে যান তাদের মেয়ে এডভোকেট স্বপ্না। তিনি জানান, আনোয়ারা দীর্ঘদিন থেকে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। একপর্যায়ে দুটি কিডনিই বিকল হয়ে যায় তার। তিনি নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিতেন শান্তিনগরের একটি প্রতিষ্ঠানে। এরমধ্যেই গত ১৯শে জুলাই করোনায় আক্রান্ত হন আনোয়ারা। মগবাজারের রাশমনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। একপর্যায়ে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিলো আনোয়ারাকে। এরমধ্যেই শনিবার ভোরে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় তার। একপর্যায়ে বাসাতেই মারা যান তিনি।

মৃত আনোয়ারা দীর্ঘদিন শান্তিনগর এলাকার ফরিদা ক্লিনিকে নার্স হিসেবে সেবা দিয়েছেন। চার বছর আগে অবসরে যান তিনি। আনোয়ারার লাশ গতকালই ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে তার পৈতৃক বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়েছে। পরিবারের কর্তা আব্দুল মান্নান শিকদার জানান, তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসেদপুরের বড়বন গ্রামে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর