দাবি না মানায় মালয়েশিয়ায় ধর্মঘটে যাচ্ছেন কয়েক হাজার জুনিয়র ডাক্তার। তারা চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন করোনা মহামারিতে। কয়েক মাস ধরে চলছে এই অবস্থা। এরই মধ্যে তারা বেতন এবং তাদেরকে নিয়োগে নতুন করে শর্ত দিয়েছেন। তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক দেন দরবার করেও তার কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এ জন্য তারা কাজ বন্ধ করে ধর্মঘটে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। অন্যদিকে সেখানে করোনা সংক্রমণ বাড়ছেই।
বাড়ছে মৃত্যু। এর ফলে অতিরিক্ত চাপ নিয়ে কাজ করে স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন ধর্মঘটের পথে যাচ্ছেন। কয়েক মাসের ব্যবধানে এবং লকডাউনের পরে আজ সোমবার সেখানে পার্লামেন্ট আহ্বান করেছেন প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
রোববার মালয়েশিয়ায় করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৪৫ জন। মারা গেছেন ৯২ জন। ফলে প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিনের সরকারের ওপর ক্রমশ চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি দেশকে ‘ব্রেকিং পয়েন্টে’ নিয়ে গেছে- এ কথা বলে জানুয়ারিতে জরুরি অবস্থা জারি করে তার সরকার। রোববার যেসব মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তার মধ্যে শতকরা ৬২ ভাগই ক্লাং ভ্যালির। এর মধ্যে রয়েছে রাজধানী কুয়ালালামপুর এবং তাকে ঘিরে রাখা সেলাঙ্গর রাজ্য। সেলাঙ্গর হলো মালয়েশিয়ান শিল্পের পাওয়ার হাউজ এবং সরকারি হাসপাতালের জন্য পরিচিত। সেখানে এখন শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ভয়াবহ ছবি ও ভিডিওতে সয়লাব। তাতে দেখা যাচ্ছে কি ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে মালয়েশিয়ার হাসপাতালগুলোতে। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে মৃতদেহ রাখা হয়েছে যেখানে, তা একটি হাসপাতালের স্টোররুম বলে মনে হয়। পাশেই রোগীতে ভর্তি একটি ওয়ার্ড। সেখানে রোগীরা হুইলচেয়ারে বসে আছেন অথবা বাইরে থেকে বেঞ্চ টেনে এনে তার ওপর শুইয়ে রাখা হয়েছে রোগী। অন্যগুলোতে দেখা যাচ্ছে, করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ ধরা পড়ার পর চিকিৎসা কেন্দ্রে রোগীদের লম্বা লাইন। সরকার পরিচালিত কোয়ারেন্টিন সেন্টারগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। করোনায় যাদের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে তাদেরকে এখানে রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিন যে জরুরি অবস্থা দিয়েছিলেন, তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১লা আগস্ট। তার সরকারের মেয়াদ প্রায় দেড় বছর। ক্ষমতায় আসার মুহূর্ত থেকেই প্রচ- রাজনৈতিক চাপের মুখে আছেন তিনি। উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে তিনি সোমবার পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেছেন। এই অধিবেশনে তিনি করোনা মহামারিতে গৃহীত পদক্ষেপ এবং চার দফার জাতীয় পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বর্ণনা করবেন। চার দফা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় জুনে। অর্থনীতি, টিকা এবং অন্যান্য দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীরা এ অধিবেশনে তার পথ অনুসরণ করবেন। মন্ত্রীদের প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন এমপিরা। জরুরি অবস্থা সেখানে শুধু পার্লামেন্টের কর্মকা-কেই স্থগিত করেছে এমন নয়। একই সঙ্গে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী কর্মকা- পরিচালনাও স্থগিত করেছে।
ঠিক এই মুহূর্তে হাজার হাজার জুনিয়র ডাক্তার ধর্মঘটে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। করোনা মহামারি শেষে তাদের ক্যারিয়ারে বিশেষ কোন সুযোগ নেই। কারণ, তারা নিয়োগপ্রাপ্ত স্টাফ নন। তাই বেতন ও তাদের অবস্থা পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনে নামছেন। সংগঠিত হয়েছেন। ধর্মঘটের একজন মুখপাত্র ডা. মুস্তাফা কামাল আজিজ বলেছেন, মহামারি দেখিয়ে দিয়েছে যে, মালয়েশিয়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক নেই। আমরা চুক্তিতে কাজ করলেও কাজ করতে করতে নিঃশেষ হয়ে গেছি। ২০১৬ সালে আগের সরকার চুক্তিতে কাজ করানোর পদ্ধতি প্রচলন করে।