দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ মারাত্মক হারে বেড়ে যাওয়ায় পাল্লা দিয়ে রূপগঞ্জেও বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। উপসর্গ নিয়ে নমুনা দিতে মানুষজন ভিড় করছেন রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত গুরুতর রোগীরা চিকিৎসাও করাচ্ছেন এই হাসপাতালে। হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন হাজারও মানুষ চিকিৎসা নিতে আসছেন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে। করোনা আক্রান্ত রোগী, সাধারণ রোগী, চিকিৎসক, হাসপাতালের কর্মচারী, পরিবহন চালক আর ওষুধ কোম্পানির লোকজনের অবাধ যাতায়াত ৫০ শয্যাবিশিষ্ট রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্ত হাসপাতালে প্রবেশে নেই কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা! তাই হাসপাতালে চিকিৎসক নার্স কর্মচারীসহ চারপাশের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন নিয়মিত। চারপাশের গ্রামগুলোর ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে উপসর্গ। ইতিমধ্যে মারা গেছেন দুজন।
দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্তের পর সরকারিভাবে সব সরকারি ভবনের প্রবেশমুখে সুরক্ষা টানেল, হাত ধোয়ার জন্য বেসিন, হ্যান্ডওয়াশ, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এসব দপ্তর থেকে উধাও হয়ে গেছে এসব সরঞ্জামাদি। উপজেলার প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিসে প্রবেশের নিয়ম থাকলেও এ উপজেলায় এর কোনো বালাই নেই। এখানে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রূপগগঞ্জ থানার গেটের সামনে বসানো বেসিন ও সুরক্ষা টানেল সরিয়ে নেয়া হয়েছে। উপজেলা কমপ্লেক্সের টানেলটি থাকলেও সেটা অনেকদিন অকেজো। এসিল্যান্ড অফিসেও নেই সুরক্ষা সরঞ্জামাদি। এমনকি খোদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই নেই জীবাণুমুক্ত হওয়ার সুরক্ষা সামগ্রী। এছাড়া বিভিন্ন তহশিল অফিস। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা ভবন, পুলিশ ফাঁড়ি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস অফিস, ব্যাংক-বীমা, কমিউনিটি ক্লিনিক, বেসরকারি হাসপাতালের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি এসব সুরক্ষা সরঞ্জাম। তাই এসব জায়গায় সেবা নিতে এসে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। হাসপাতালের পাশে বসবাস করা দুজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। আইসিইউতে রয়েছেন ৫ জন। আক্রান্ত আছেন আরও অন্তত শতাধিক। ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে উপসর্গ। এদের মধ্যে রয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আল ইমরান, হামিদ মোল্লা, নার্স আলেয়া, শাহিদা, খাইরুন, কোয়ার্টারে বসবাস করা নার্স আনোয়ারা তার স্বামী ট্রাফিক পুলিশ আবুল হাসেম, তাদের ছেলে, পাশের নবগ্রামের আক্তারের স্ত্রী, জিন্নার স্ত্রী, মারা গেছেন তেলিপাড়ার আব্দুল বাতেন ও ফজুর বাড়ির আবুল হাসেম। আইসিইউতে আছেন তাদের উভয়ের স্ত্রীরা। এছাড়া মুসুরীর সফিকুল ভেণ্ডার তার ছেলে শ্যামল, শ্যামলের স্ত্রী, নাজিম ও তার স্ত্রী, আমিনের স্ত্রী, ইলিয়াছসহ হাসপাতালে যাতায়াতকারী আরও অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। এ কারণে হাসপাতালে দ্রুত সুরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের দাবি তুলেছেন তারা। এ প্রসঙ্গে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরজাহান আরা বলেন, সুরক্ষা টানেলের জীবাণুনাশক স্প্রে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বিধায় সেটা সরকারিভাবে তুলে দেয়া হয়েছে। আর হাসপাতালে লোকবলের অভাবে মানুষকে জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা কিছুদিন ধরে বন্ধ ছিল। তবে আমরা অচিরেই আবার সেগুলো চালু করার ব্যবস্থা করবো।