ফেনীর সোনাগাজীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। পরপর দু’দিন পলেস্তেরা খসে পড়ায় আতঙ্কে রয়েছে হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক-কর্মচারী ও সেবা নিতে আসা রোগীরা। গত শনিবার ও রোববার সকালে হাসপাতালের পুরাতন ভবনের নিচ তলায় জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) কক্ষের দরজার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালের কর্মচারী ও জরুরি বিভাগের সামনে রোগীরা দ্রুত অন্যত্র সরে যান।
হাসপাতালের ইপিআই টেকনোলজিস্ট জামশেদ আলম বলেন, সকালে অফিসে এসে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় তার পেছনে হঠাৎ করে বড় একটি ছাদের পলেস্তেরা খসে পড়ে। অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এরপর জরুরি বিভাগ ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষের সামনেও একইভাবে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। এর আগের দিনও জরুরি বিভাগের সামনে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছিল।
যেভাবে তাদের অফিসের সামনে পলেস্তেরা খসে পড়েছে, তাতে তিনিসহ সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাদেকুল করির বলেন, হাসপাতালের বারান্দায় ও বিভিন্ন কক্ষে ছাদের পলেস্তারা প্রায়ই খসে পড়ছে। তারা ঝুঁকি নিয়ে ভবনটিতে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। দ্রুত সংস্কার না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৬৫ সালে সোনাগাজী পৌর শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় একটি পল্লী চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। এরপর ১৯৭৭ সালে পল্লী চিকিৎসা কেন্দ্রটিকে ৩১ শয্যায় উন্নীত করে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রূপান্তর করা হয়। ওই বছরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের হাসপাতালটিকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ৫০ শয্যায় উন্নীত করার পর ২০০৭ সালে ৫ কোটি ৯৫ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৭ টাকা ব্যয়ে তিনতলা বিশিষ্ট একটি নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়। ২০১২ সালে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। একই বছর এপ্রিল মাসে হাসপাতালটি ৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পায়। তবে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখন পর্যন্ত ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চলছে।
নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হাসপাতালের পুরনো ভবন সংস্কার কাজের জন্য ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দের কথা শুনেছেন। কিন্তু গত ৩ বছরেও তিনি কোনো সংস্কার কাজ হতে দেখেননি। সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উৎপল দাশ বলেন, হাসপাতালে নতুন ভবন নির্মাণ হলেও কক্ষ সংকটের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো ভবনেও চিকিৎসাসেবা এবং প্রশাসনিক কাজ চালাতে হচ্ছে। পুরনো ভবনটি দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এখন ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে নিয়মিত বিরতি দিয়ে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ফলে চিকিৎসক-কর্মচারী ও রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। মাঝে মধ্যে ছোট সংস্কার করা হলেও বড় সংস্কার কাজ করে ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ দ্রুত সংস্কারের আশ্বাসও দিয়েছেন।