× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চট্টগ্রামে আইসিইউ’র জন্য হাহাকার

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
২৮ জুলাই ২০২১, বুধবার

করোনা আক্রান্ত হয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঈদের পরের দিন বৃদ্ধা মা আয়েশা খাতুনকে নিয়ে হাটহাজারীর সরকারহাট থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসেন মোহাম্মদ শাহজাহান। ডাক্তার জানান, তার মাকে আইসিইউতে রাখতে হবে। কিন্তু শহরের কোনো হাসপাতালেই আইসিইউ বেড খালি নেই। শেষ পর্যন্ত বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতালে হাই ফ্লো ক্যানুলা দিয়ে ভর্তি করানো হয় তাকে। সেখানে একদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান ৮০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা। করোনায় আক্রান্তদের অক্সিজেন লেভেল দ্রুত নেমে গেলে ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে আইসিইউ’র প্রয়োজন হচ্ছে। তবে ঈদের ছুটিতে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামে মুমূর্ষু কোভিড রোগীদের শেষ ভরসা আইসিইউ শয্যারও সংকট দেখা দিয়েছে। আইসিইউ খালি হলেই নিজের রোগীকে ভর্তি করাতে চলছে প্রতিযোগিতা।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের মোট ১৫৭টি আইসিইউ বেড আছে। এরমধ্যেই সরকারি হাসপাতালে আছে ৪৩টি, বাকি ১১৪টি আছে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। তবে গতকাল সকালে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বেসরকারি হাসপাতালে মাত্র ৩টি আইসিইউ বেড খালি থাকলেও সরকারি হাসপাতালে কোনো সিট খালি নেই। গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে থাকা ৭টি আইসিইউ সবগুলো পূর্ণ। একটি সিটের জন্য বিভিন্ন জন এসে ধরনা দিচ্ছেন সরকারি এই হাসপাতালে। কর্তৃপক্ষের কাছে প্রভাবশালীদের দিয়ে একটি সিটের জন্য সুপারিশ করছেন তারা। সিটের ব্যবস্থা করতে না পারলেও চিকিৎসকরা মুমূর্ষু কিছু রোগীকে এইচডিইউ’র আর হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের প্রধান ডাক্তার রাজদ্বীপ বিশ্বাস বলেন, ‘এই ঈদের পরের দিন থেকে এখানে করোনা রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। এই আক্রান্তদের অধিকাংশের অক্সিজেন লাগছে। অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউ’র প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু শয্যা না থাকায় দিতে পারছি না। একটি সিটের বিপরীতে ১০-১২ জন অপেক্ষমাণ তালিকায় আছে।’
বেসরকারি ডেল্টা হাসপাতালের গণসংযোগ কর্মকর্তা অহিদুল আলম বলেন, ‘এখানে মোট ৫টি আইসিইউ বেড আছে। সবগুলোই এখন পূর্ণ। একটি সিটের জন্য কয়েকজন অপেক্ষমাণ রোগী আছেন। কিন্তু শয্যা খালি না থাকায় তাদের সাপোর্ট দেয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কেবিনে রেখে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। অন্য হাসপাতালগুলোতেও একই পরিস্থিতি। সবগুলোতেই রোগীর ফ্লো অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে গেল কিছুদিন ধরে এমন নাজুক অবস্থা। একটি সিটের জন্য বিভিন্ন জন থেকে ফোন আসে।
এদিকে চট্টগ্রামে আইসিইউ পরিচালনার জন্য ক্রিটিক্যাল মেডিসিন বিষয়ে ডিগ্রিধারী চিকিৎসকেরও সংকট রয়েছে। যে কারণে চলমান সংকটকালীন সময়ে বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউ বেড বাড়াতে চাইলেও প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের অভাবে সেভাবে সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি এই বিষয়ে ডিগ্রিধারী প্রশিক্ষিত নার্সেরও প্রয়োজন। কিন্তু এখানে সেটিরও ঘাটতি আছে। আবার অনেক বেসরকারি হাসপাতাল আইসিইউ চালু করলেও তাদের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক নেই। অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরাই এইসব আইসিইইউ পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট চিকিৎসকরাই বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন।
আইসিইউ সংকট নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী মানবজমিনকে বলেন, চট্টগ্রামে যে হারে করোনা রোগী বাড়ছে সেভাবে তো চাইলেও আইসিইউ বেড বাড়ানো যাচ্ছে না। এখানে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। করোনাকালীন সময়ের আগে এখানে সরকারি- বেসরকারি মিলিয়ে ৫০টির বেশি আইসিইউ ছিল না। যদিও এখন সেটি বেড়ে ১৫৭টি হয়েছে। আমরা আরও আইসিইউ সিট পর্যায়ক্রমে বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আর সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য আইসিইউ সিটের ব্যবস্থা করতে না পারলেও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আর সেন্ট্রাল অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর