শেষ বয়সে মৃত্যুর আগে বসবাসের জন্য একটি ঘরের আক্ষেপ ষাটোর্ধ্ব সহায়-সম্বলহীন মোসা. বেগমের। বসবাসের ঘর না থাকায় তিনি দিনের বেলায় থাকেন পরিত্যক্ত একটি ছোট্ট ঢোপ ঘরে। আর রাতে ঘুমান অন্যের ঘরে। বেগমের বাবার ও স্বামীরও ছিলনা কোনো বাড়িঘর। নিজেরও কোনো বাড়িঘর নেই। বৃদ্ধ বয়সে বসবাসের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘরের জন্য আকূল আবেদন করেছেন।
বেগমের স্বামী মোজাহার ছিলেন সিরাজগঞ্জের চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশের নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মারা গেছেন অনেক বছর আগেই।
স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে বেগম নওগাঁ হাট এলাকার এ বাড়ি সে বাড়িতে দিনাতিপাত করছেন।
বেগম আক্ষেপ করে দৈনিক মানবজমিনকে জানান, তার সারাটা জীবন অন্য মানুষের বাড়িতে কেটে গেল। যার সঙ্গে বিয়ে হয়, সেও ছিল হতদরিদ্র ভূমিহীন। তার স্বামী বছর মেয়াদে যেসব গেরস্তের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করতেন, সেই বাড়িতে তিনিও কাজের ঝি হিসেবে থাকতেন। এভাবে কেটে গেছে তার জীবনের সিংহভাগ সময়। বেগম আরো বলেন, দু’বছর ধরে তিনি ঢোপ ঘরে থাকছেন। এখানে ঝড় বৃষ্টিতে ভীষণ কষ্ট হয়। বৃষ্টি হলে ঢোপ ঘরের চারপাশে পানি জমে জলাবদ্ধ হয়ে থাকে। আর ঝড়ের সময় মনে হয়, ঢোপ ঘরের সঙ্গে যেন তাকেও উড়িয়ে নিয়ে যাবে। ঢোপ ঘরটি একেবারে উন্মুক্ত স্থানে বসানো রয়েছে। ফলে শীতের তীব্রতাও তাকে সইতে হয়।
ওই এলাকার শনেকা খাতুন নামে এক গৃহবধূ জানিয়েছেন, বেগম রাতে তার বাড়িতেই থাকেন। বেগমের খোঁজ বা কোনো খবর নেয়ার মতো দুনিয়াতে কেউ নেই। তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার এমন অসহায়ত্ব আর কষ্টের অবসান চান এলাকাবাসী।
সম্প্রতি সরজমিন দেখা গেছে, নওগাঁ শাহ শরীফ জিন্দানী (রহ.) মাজার মাঠের এক কোণায় বেগমের ঢোপ ঘর। সেখানে চারপাশে বৃষ্টির পানি জমে আছে। অসহায় হয়ে ঢোপ ঘরের মধ্যে বসে আছেন বেগম। ঢোপ ঘরে পাতা তার একার সংসারে একটি পরনের কাপর, পুঁতি বাতি ও ভাতের একটি প্লেট তার সম্পদ।
জানা গেছে, স্থানীয় রেজাউল করিম নামে এক যুবকের পরিত্যক্ত ঢোপ ঘরটি ফেলে রেখেছেন। তখন সেখানে আশ্রয় খুঁজে নেয় বৃদ্ধা বেগম। ঐ যুবক মানবিক কারণে বেগমকে ঢোপ ঘর থেকে বের করেননি। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম বেগমকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।