করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) অধিকতর বিপজ্জনক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে ফাইজার ও বায়োএনটেকের টিকার তৃতীয় ডোজ। বুধবার প্রকাশিত ফাইজারের নতুন উপাত্তে এমন ইঙ্গিত মিলেছে। উপাত্ত থেকে ফাইজার অনুসিদ্ধান্তে এসেছে যে, তাদের টিকার প্রথম দুই ডোজ থেকে পাওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা তৃতীয় ডোজে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে। এ খবর দিয়েছে সিএনএন। খবরে বলা হয়, বুধবার অনলাইনে টিকার তৃতীয় ডোজের কার্যকারিতা নিয়ে নতুন উপাত্ত প্রকাশ করেছে ফাইজার।
নতুন উপাত্ত অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা ফাইজারের টিকার তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন, তাদের দেহে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা দুই ডোজ গ্রহণকারীদের চেয়ে পাঁচ গুণেরও বেশি দেখা গেছে।
অন্যদিকে, ৬৫ থেকে ৮৫ বছর বয়সীদের মধ্যে তৃতীয় ডোজ গ্রহণকারীদের দেহে অ্যান্টিবডির পরিমাণ দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণকারীদের তুলনায় ১১ গুণেরও বেশি পাওয়া গেছে।
ফাইজারের গবেষকরা বলেছেন, তৃতীয় ডোজ গ্রহণ করেননি এমন ব্যক্তিদের তুলনায়, গ্রহণকারীদের দেহে ডেল্টা ভাইরাসকে পরাস্ত করার সক্ষমতা ১০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফাইজারের উপাত্তগুলো এখনো বিশেষজ্ঞরা পর্যালোচনা করেননি বা কোন সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়নি।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি ফাইজারের টিকার তৃতীয় ডোজ করোনা ভাইরাসের প্রথম ভ্যারিয়েন্ট ও বেটা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি।
তবে ফাইজার এমনটি বললেও মার্কিন সরকার এখনই জনগণকে তৃতীয় ডোজ দিতে রাজি নয়। দেশটির প্রধান দুই স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এই মুহূর্তে আমেরিকানদের তৃতীয় ডোজ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
পাশাপাশি, তারা এ-ও বলেছে যে, মানুষের কয়টি ডোজ লাগবে, তা ওষুধ কোম্পানি একা ঠিক করে না।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সার্জন জেনারেল ডা. বিবেক মুর্তি বুধবার একই বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি সিএনএন-কে বলেছেন যে, ‘এখনই ঘর থেকে বের হয়ে বুস্টার শট নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’
ফাইজার বৈশ্বিক গবেষণা বিভাগের প্রধান ডা. মাইকেল ডোলস্টেন অবশ্য বলেছেন তারা তাদের গবেষণার ফলাফল ও উপাত্ত শিগগিরই দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএ-এর কাছে হস্তান্তর করবেন। তিনি বলেছেন, আগামী মাসে তারা এফডিএ-এ উপাত্তসমূহ দেবেন। দেশের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সিডিসি এ সংক্রান্ত অন্যান্য আরও গবেষণার দিকে নজর রাখছে। সেসবের উপর ভিত্তি করেই শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বুস্টার হিসেবে পরিচিত তৃতীয় ডোজের প্রয়োজন হবে কিনা।
তবে শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত নেবেন এফডিএ ও সিডিসি। ডা. বিবেক মুর্তি বলেন, আমরা এসব গবেষণা নিয়ে ফাইজারের সাথে কথা বলে যাচ্ছি। তবে আমি খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, কারও এখন তৃতীয় ডোজ নেওয়ার দরকার নেই।
তিনি আরও বলেন, সারাবিশ্বে যেখানে টিকার ব্যাপক স্বল্পতা রয়েছে, সেখানে আমাদের তৃতীয় ডোজ দেওয়ার সুপারিশ করা হলে, তা কতটা নৈতিক হবে, তা-ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তিনি বলেন, সারাবিশ্ব যেন টিকা পায়, তা আমাদের স্বার্থের পক্ষে। সারা দুনিয়ায় ন্যুনতম টিকা সরবরাহ করা ও আমাদের দেশে তৃতীয় ডোজের টিকা নেওয়া—আমাদেরকে যেন এই দুইয়ের মধ্যে একটি যেন বেছে না নিতে হয়।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করছে যে অন্যান্য দেশে টিকা উৎপাদনের সক্ষমতাও যেন বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি মডার্না ও ফাইজারের মতো প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্তরাষ্ট্র আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে যেন বাকি বিশ্বের জন্যও আরও টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি, উদ্বৃত্ত টিকা বিশ্বের অন্যান্য দেশকে দান করে দেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।