× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অলিম্পিকে ড. ইউনূসের পাওয়া লরেলটির জন্ম ইতিহাস

অনলাইন

অনলাইন ডেস্ক
(২ বছর আগে) জুলাই ২৯, ২০২১, বৃহস্পতিবার, ২:৪৭ অপরাহ্ন

২০২০ টোকিও অলিম্পিকে অলিম্পিক লরেল সম্মাননা দেয়া হয়েছে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসকে , উন্নয়নের জন্য স্পোর্টসে তাঁর ব্যাপক কাজের জন্য। এটি গত ২৩শে জুলাই ২০২১ তারিখে টোকিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁকে প্রদান করা হয়। এই সম্মাননার যে লরেল ট্রফিটি দেয়া হয়েছে তার মধ্যেই রয়ে গেছে অলিম্পিকের হাজার বছরের ইতিহাসের অমূল্য কিছু নিদর্শন।
ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বের দিক থেকে লরেল ট্রফিটির সব চেয়ে মূল্যবান অংশটি হচ্ছে এর পাথরের তৈরি ভিত্তিটি। এটি আসলে গ্রীসের প্রাচীন অলিম্পিয়া নামক জায়গায় ১৮৭৮ ও ১৮৮০ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আবিষ্কৃত দুটি ছাই -নীল রঙের মার্বেল পাথরের নিদর্শনের রেপ্লিকা। এটি কেন মূল্যবান তা বুঝতে হলে আমাদেরকে অনেক প্রাচীন কালে চলে যেতে হবে। স্মরণ করতে হবে যে এই প্রাচীন অলিম্পিয়ার প্যানহেলেনিক ধর্মীয়ও মন্দিরকে ঘিরেই খৃষ্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দী থেকে চতুর্থ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত প্রতি চার বছর পর পর গ্রীক অলিম্পিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। পরে ১৮৯৪ সাল থেকে বিশ্ব অলিম্পিক হিসেবে এটি আবার চালু হয়েছে। লরেলের ভিত্তির ওই পাথরের গায়ে প্রাচীন গ্রীক লিপিতে কিছু কথা লেখা আছে।
সেখান থেকে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে পাথরটি আগে একটি ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যের ভিত্তি প্রস্তরের অংশ ছিল, যা গ্রীক দেবতা জিউসের মন্দিরে উৎসর্গিত ছিল।লিপিটি তখনকার কিছু গায়ক ও অভিনেতার কথা উল্লেখ করছে যারা মেসিনা নামক জায়গার এক বড় মানুষের আনুকূল্য পেয়েছে। লিপিটি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এটি খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে উৎকীর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ আজকের লরেলের ভিত্তির এই পাথরটি প্রাচীন অলিম্পিয়ায় ২২০০ বছর আগের অলিম্পিক প্রতিযোগিতার স্মৃতি সরাসরি বহন করে এনেছে। গ্রীসের প্রেসিডেন্ট ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের সদয় অনুমতিতেই সেদেশের এমন মূল্যবান প্রত্ন সম্পদের রেপ্লিকা আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি লরেলের জন্য ব্যবহার করতে পেরেছে। এভাবে এই লরেল সম্মাননাকে প্রাচীন অলিম্পিকের আদর্শের সঙ্গে সম্পর্কিত করা গেছে।

লরেল ট্রফির ওপরের অংশে আছে লরেল পাতার মুকুট এবং অলিম্পিকের প্রতীক রিংসমূহ - উভয়েই সোনায় তৈরী। এই লরেল পাতার মুকুটের সঙ্গে জড়িত হয়ে আছে প্রাচীন গ্রীক ও রোমানদের আরো ইতিহাস। আসলে এই মুকুটের সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীক উপকথা থেকে। লরেল উদ্ভিদটির গ্রীক নাম ড্যাফনে , যিনি একজন গ্রীক দেবীও বটেন। গ্রীসের সব চেয়ে পবিত্র স্থান মাউন্ট অলিম্পাস পর্বতে ছিল গ্রীকদের সেরা ১২ জন দেবদেবীর অধিষ্ঠান। সেখানকার মুখ্য একজন দেবতা অতি সুপুরুষ অ্যাপোলোকে একদিন বিমর্ষ দেখে দেবী ড্যাফনে তাঁকে নিজের পাতা দিয়ে , অর্থাৎ লরেল পাতা দিয়ে , মুকুট গড়ে মাথায় পরিয়ে দিলেন, একট খুশি করার চেষ্টায়। তারই স্মরণে পরবর্তীতে গ্রীসে নানা প্রতিযোগিতায়, যেমন কবিতা বা জ্ঞানের প্রতিযোগিতায় , বিজয়ীকে লরেল পাতার মুকুট পরিয়ে দেয়া হতো; অলিম্পিকেও। রোমান আমলে জুলিয়াস সীজার প্রমুখ যুদ্ধ বিজয়ী বীরদেরকে লরেল পাতার মুকুট দিয়ে বরণ করা হতো। সেই ঐতিহ্যে আজও লরেল পাতার ( বন্য জলপাই পাতার ) মুকুট দিয়ে সাফল্যের স্বীকৃতি জানানো হয়।

অলিম্পিক লরেল ট্রফিটির অত্যন্ত সুন্দর সৌকর্যময় ডিজাইনটি করেছেন সুইজারল্যান্ডের বিশ্ববিখ্যাত স্বর্ণালংকার ডিজাইনার সোপার্ড। এর লরেল মুকুট এবং অলিম্পিক প্রতীক রিংগুলোর জন্য যে সোনা ব্যবহার করা হয়েছে তারও একটি বৈশিষ্ট আছে। দায়িত্বশীল খনিকর্মের ঐক্যজোট নামের একটি সংগঠন কলম্বিয়া এবং পেরুতে ছোট আকারের এমন সোনার খনির আয়োজন করেছে যা শুধু শৈল্পিক কাজে সোনা উৎপাদন করে, এবং একে এর শ্রমিক ও স্থানীয় মানুষের সামাজিক কল্যাণের দিক থেকে টেকসই করতে সফল হয়েছে। লরেল ট্রফিতে এই সোনার ব্যবহার এই মানবিক খনি- নীতির জয়জয়কারও বটে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর