দক্ষ জনবলের অভাবে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে করোনায় মুমূর্ষু রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ানের অভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বার বার শূন্যপদ পূরণের দাবি করলেও কাজের কাজ হচ্ছে না। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে ১০০ বেডের সমন্বয়ে শহরের পশ্চিম খাবাসপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পরে দেশের দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের ৮ জেলার রোগীর অতিরিক্ত চাপ থাকায় ২৫০ বেড উন্নীত করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে আবারো ৫০০ বেডে উন্নীত করা হয়। এখানে ২০১৪ সালের ১৬ বেডের একটি পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ বিভাগের ব্যবস্থা করা হয়। আইসিইউ বিভাগে সেন্ট্রাল অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, হাই ফ্লো, ন্যাজাল ক্যানুলাসহ অত্যাধুনিক সব সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়।
দিনদিন হাসপাতালটির পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফরিদপুরসহ রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মাগুড়া, নড়াইল, ঝিনাইদাহ এমনকি কুষ্টিয়া থেকে মুমূর্ষু রোগীরা এখানে আসে। বৈশ্বিক করোনার ঢেউ আশার পর থেকে দেশের দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের রোগীদের চাপ বাড়তে থাকায় হাসপাতালটিকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ পর্যন্ত ৬৫০ জন রোগীকে আইসিইউ বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৭০ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৮০ জন। জায়গা সংকুলন না হওয়ায় অন্যত্র রেফার্ড করা হয় ৪৮ জনকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, আইসিইউ বিভাগের জন্য একজন সহকারী অধ্যাপক, ২ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, ২ জন রেজিস্টার, ২ জন মেডিকেল অফিসারসহ ১৪ জন নার্স, প্যাথলোজি ও রেডিওলোজি টেকনিশিয়ান, আয়া, সুইপারের পদ শূন্য হয়।
শুরু থেকে শূন্যপদগুলো পূরণ না হলেও এ অঞ্চলের মুমূর্ষু রোগীদেরকে নানা প্রতিকুলতার মধ্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে দক্ষতার সঙ্গে। দেশের এই ক্রান্তিকালে আইসিইউ বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশের এই করোনাকালে হাসপাতালের আইসিউ বিভাগের শূন্যপদগুলো পূরণ হলে এখান থেকে আরও উন্নত সেবা দেয়া সম্ভব হতো। তাতে করে আর কাউকে অন্যত্র পাঠাতে হতো না। সেইসঙ্গে উপকৃত হতো এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। আইসিইউ বিভাগের চিকিৎসক ডা. অনন্ত বিশ্বাস বলেন, আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। দিনরাত পরিশ্রম করছি। তবে আইসিইউ বিভাগের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চিকিৎসককে এখানে নিয়োগ দেয়া হলে আরও ভালো সেবা দেয়া সম্ভব হতো। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডা, সাইফুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আইসিইউ বিভাগের পদগুলো শূন্য থাকায় আমাদের চিকিৎসা দেয়া কষ্ট হচ্ছে। শূন্যপদগুলো পূরণ হলে এখান থেকে উন্নত মানের চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হতো। তিনি দ্রুত শূন্যপদগুলো পূরণের দাবি করেন।