× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘মেসেজ’ না পেলেও টিকা নিতে কেন্দ্রে ভিড়

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৩০ জুলাই ২০২১, শুক্রবার

মহামারি করোনায় সিলেটে জীবন-মৃত্যুর মধ্যখানে চলছে প্রাণান্তকর লড়াই। স্বস্তি নেই কোথাও। উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে মানুষ। এই অবস্থায় সিলেটে টিকা নিতে ভিড় বাড়ছে। শুধু শহর নয়, গ্রাম এলাকার মানুষও টিকায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এ কারণে মেসেজ পেতে দেরি হওয়ায় শত শত মানুষ ভিড় করছেন টিকা সেন্টারগুলোতে। নিতে চাচ্ছেন টিকা। আর এ বিষয়টিকে পজিটিভ হিসেবে দেখছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
তারা জানিয়েছেন- সিলেটে করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ ঘটেছে। প্রতি আড়াইজনে একজন করোনা আক্রান্ত। এ কারণে এখন গণহারে টিকা দেয়ার বিকল্প নেই। করোনাকে নিয়ন্ত্রিত করতে হলে টিকা কার্যক্রম সফল করতেই হবে বলে জানান তারা। প্রথম দফা সিলেটে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রদানের সময় অনেক জায়গায় আগ্রহ দেখাননি মানুষ। অনেক উপজেলা থেকে টিকা ফেরত এসেছে। কিন্তু এ দফা করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় টিকা গ্রহণে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। এবং দিন দিন আগ্রহ আরও বাড়ছেই। চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে সিলেটে নতুন করে টিকা কার্যক্রম শুরু করা হয়। এর মধ্যে সিলেট নগরের মানুষকে দেয়া হচ্ছে মডার্নার টিকা। আর উপজেলাগুলোতে দেয়া হচ্ছে সিনোফার্মার টিকা। এখন পর্যন্ত সিলেটে টিকার কোনো সংকট হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা চাহিদামতোই টিকা পাচ্ছেন। সিভিল সার্জনের তথ্যমতে- সিলেটে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৬৪ হাজার মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সিলেট সিটি ও জেলার প্রায় ১৪টি সেন্টারে টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টিকা সেন্টার রয়েছে। সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মোজয় দত্ত জানিয়েছেন- ‘১৩টি উপজেলার ১২টি সেন্টারে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯৩ হাজার টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয় দফা টিকা প্রদান শুরু করা হলে গ্রামের মানুষের মধ্যে আগ্রহ দেখা দেয়ায় ভিড় বাড়ছে।’ তিনি জানান- ‘এটি আমাদের জন্য পজেটিভ দিক। করোনা ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে টিকা গ্রহণ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এ কারণে আমরাও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি টিকার উপর।’ সিলেট নগরে টিকাদান সেন্টার হচ্ছে দু’টি। একটি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অপরটি বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল। এর মধ্যে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড় হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বিপুলসংখ্যক লোক মেসেজ না পেয়েও টিকা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন। এ কারণে ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন- দ্বিতীয় দফা টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০ দিন আগে। এই সময়ের মধ্যে তারা প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে টিকা দিতে  পেরেছেন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮টি বুথে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টিকা দেয়া হয়। জানিয়ে দেয়া হয়েছে- যারা মেসেজ পাবেন কেবল তারাই টিকা দিতে পারবেন। কিন্তু মেসেজ পাননি এ রকম শত শত মানুষও টিকা নিতে ভিড় জমান। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুর রহমান জানিয়েছেন- ‘টিকা নিতে মানুষ যতই আগ্রহী হচ্ছে ততই আমরা খুশি হচ্ছি। বর্তমানে ওসমানীতে ৮টি বুথে ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টিকা দেয়া যায়। এর বেশি দিলে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে না। এরপরও সিটি করপোরেশনে ৩৭ হাজারের মতো নিবন্ধন ঝুলে আছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে সিটি করপোরেশন এলাকায় আরও ৯টি টিকা সেন্টার চালুর দাবি জানিয়েছি। এগুলো অনুমোদিত হয়ে এলে গোটা নগরেই টিকা কার্যক্রম বাড়ানো সম্ভব হবে।’ তিনি বলেন- ‘সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় দুই দফা মিলিয়ে প্রায় লাখো মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে- ভিড় বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে; গ্রামে বসবাসকারী অনেক মানুষ মডার্নার টিকা নিতে শহরের ঠিকানা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এ কারণে টিকা নিতে আসা মানুষের চাপ বেড়েছে।’ এদিকে- সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায়  নগর ভবন, মাতৃমঙ্গল হাসপাতাল,  ধোপাদিঘীর উত্তর পাড় বিনোদিনী নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাগবাড়ী নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আখালিয়া বীরেশ চন্দ্র নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কাজীটুলা সূর্যের হাসি ক্লিনিক, টিলাগড় সূর্যের হাসি ক্লিনিক, শাহ্‌জালাল উপ-শহর স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কদমতলী নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা সেন্টার করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সিলেটে টিকা প্রদানের জন্য গুরুত্ব সহকারে একটি পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। নগর এলাকায় ১০টি টিকা কেন্দ্র নয় ২৭টি ওয়ার্ডে এক বা একাধিক টিকাদান কেন্দ্র চালু করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এর বাইরে সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে টিকা কার্যক্রম শুরু করা হবে। আগামী ৭ই আগস্ট থেকে এক সপ্তাহের জন্য টিকা ক্যাম্পেইন চালানো হবে। আর এসব টিকা কেন্দ্রে আগ্রহীরা আইডি কার্ড নিয়ে এলে টিকা দিতে পারবে। এসব কেন্দ্রে ১৮ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী সবাইকে টিকা দেয়া হবে। এই বিশেষ ক্যাম্পেইনে শহরে মডার্না এবং গ্রামে সিনো ফার্মার টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘বর্তমানে সিলেটে কোনো টিকার সংকট নেই। পর্যাপ্ত টিকা হাতে রয়েছে। কিন্তু গণটিকার কার্যক্রম শুরু করার আগে আমরা টিকা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা চাই। ইতিমধ্যে এ নিয়ে বৈঠকে চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে।’ তিনি বলেন- ‘সিলেটে টিকা প্রদানে আমরা আমাদের নিজস্ব পরিকল্পনা সাজাবো। আমাদের কর্মীর অভাব নেই। ফলে টিকা দিতে আমাদের সমস্যা হবে না। টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরিকল্পনা অনুযায়ী টিকা দিতে পারলে সিলেটের মানুষকে খুব দ্রুত সুরক্ষা করা যাবে বলে জানান তিনি।’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর